• স্মারক বক্তৃতা ‘আ মরি বাংলা ভাষা’
    দৈনিক স্টেটসম্যান | ১৪ সেপ্টেম্বর ২০২৫
  • অরুণাভ রাহারায়

    ভারতের বিজেপি শাসিত রাজ্যে আক্রান্ত বাংলাভাষা। প্রায়ই খবরের শিরোনামে উঠে আসছে বাঙালির মর্যাদাহানির খবর। বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এর প্রতিবাদে একাধিক পদক্ষেপ নিয়েছেন। তিনি বারংবার সারা দেশের নানা কোণায় বাঙালি হেনস্থার বিষয়টি আটকাতে চেয়েছেন। কিছুদিন আগে হয়ে যাওয়া বাদল অধিবেশনে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে সংসদের বাইরে ও ভেতরে প্রতিবাদ করেছেন তৃণমূল কংগ্রেসের সাংসদরা। বাংলার নানা জায়গায় এই নিয়ে প্রায়ই অবস্থান বিক্ষোভ হয়েছে। তবে এর পরেও ভিনরাজ্যে বাঙালি হেনস্থার বিষয়টি পুরোপুরি আটকানো যায়নি। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ভাষা আন্দোলনের সূচনা করেছেন বীরভূমের মাটিতে দাঁড়িয়ে।

    এই আবহে ‘সত্য সুন্দর স্মারক বক্তৃতা’র আয়োজন করেছিল নিখিল বঙ্গ রাজ্য সরকারি কলেজ শিক্ষক সমিতি। বক্তৃতার শিরোনাম– অতুলপ্রসাদ সেনের বিখ্যাত গানের লাইন ‘আ মরি বাংলা ভাষা’। শনিবার সল্টলেকের রবীন্দ্র ওকাকুরা ভবনে দুপুর ১২টায় সত্য সুন্দর স্মারক বক্তৃতা দেন বিশিষ্ট কবি সুবোধ সরকার। এ দিনের অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির পদ অলংকৃত করেন রাজ্যের শিক্ষামন্ত্রী তথা বিশিষ্ট নাট্য ব্যক্তিত্ব ব্রাত্য বসু। দু’জনের কথায় প্রাথমিক ভাবে উঠে আসে ভিনরাজ্যে, আরও স্পষ্ট করে ভালো, মূলত বিজেপি শাসিত রাজ্য বাংলা ও বাঙালি আক্রান্ত হওয়ার বিষয়টি।

    অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি ব্রাত্য বসু প্রারম্ভিক ভাষণে বলেন, ‘কবি সুবোধ সরকার একজন সাংস্কৃতিক প্রতিরোধের নাম। আমার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এই মুহূর্তে যে আন্দোলন করছেন, বাংলাভাষা, বাঙালির অস্তিত্ব, বাংলার সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য এসব নিয়ে সুবোধ তাঁর বক্তৃতায় বিস্তারিত বলবেন।’ সেই সঙ্গে ব্রাত্য বসু তাঁর বক্তৃতায় বিষয়টির রাজনৈতিক দৃষ্টিকোণ থেকে কয়েকটি কথা বলেন।

    এ দিনের অনুষ্ঠানের মূল বক্তা কবি সুবোধ সরকার বলেন, ‘বাংলা না থাকলে, বাঙালি না থাকলে ভারতে স্বাধীনতা আসত না। এতকিছুর পরেও একটা ছোট্ট শব্দ ‘অস্মিতা’। যার জন্য এতকিছু। এ প্রসঙ্গে তিনি মনে করিয়ে দেন বাংলাভাষার আত্মমর্যাদার জন্য একদা রাস্তায় নেমেছিলেন সাহিত্যিক সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়। সুবোধ জানান, তিনি নিজেও কম বয়সে সেই প্রতিবাদে পা মিলিয়েছিলেন।

    চিনের পিকিং বিশ্ববিদ্যালয়ে রবীন্দ্রনাথের আবক্ষ মূর্তি থেকে শুরু করে শিকাগো বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ক্লিন্টন বি সিলির জীবনানন্দ অনুবাদের প্রসঙ্গ– সুবোধের বক্তৃতায় উঠে আসে সারা বিশ্বে বাঙালির উপস্থিতির দিকটি। এর পরই কবি বলেন, ‘যাঁরা বাঙালি দেখলেই মারছে, তাঁদের তিনটি স্বপ্ন– হিন্দি, হিন্দু, হিন্দুস্তান। কিন্তু তাঁদের মধ্যে রয়েছে স্বপ্নকে ছুঁতে না-পারার হাহাকার। বাংলাভাষার ভূখণ্ডে তাঁরা বারংবার ব্যর্থ হয়েছে। তাঁদের আগ্রাসন একমাত্র যিনি ঠেকাতে পেরেছেন, তিনি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।’
  • Link to this news (দৈনিক স্টেটসম্যান)