• ‘কীভাবে জলে পড়ল? কেউ কি ধাক্কা দিয়েছিল?’ যাদবপুরে ছাত্রীমৃত্যুর ঘটনায় প্রশ্ন বাবার
    প্রতিদিন | ১৪ সেপ্টেম্বর ২০২৫
  • অর্ণব দাস, বারাকপুর: কীভাবে জলে পড়ল? মেয়ে নিজে থেকে তো আর জলে ঝাঁপ দেবে না! মদ্যপানের যে কথা উঠছে, সেটা আমি কেন, মিষ্টুকে চেনে এমন কেউই একথা বিশ্বাস করবে না। তাই যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের ৪ নম্বর গেটে লাগোয়া জলাশয় থেকে অনামিকার মৃতদেহ উদ্ধারের ঘটনায় পুলিশে অভিযোগ জানাবেন বলেই ঠিক করেছেন বাবা অর্ণব মণ্ডল।

    একইসঙ্গে খ্যাতনামা যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের পর্যাপ্ত সিসি ক্যামেরা না থাকা নিয়েও ক্ষোভ উগড়ে দিয়েছেন তিনি। উত্তর দমদম পুরসভার ২৬নম্বর ওয়ার্ডের নিমতার ললিত গুপ্ত স্ট্রিট, যেখানে বড় হয়েছে অনামিকা মণ্ডল সেখানের বাসিন্দারা পাড়ার মেয়ের মৃত্যুর খবর পাওয়ার পর থেকে বলে এসেছেন, অত্যন্ত শান্ত, মেধাবী, মিশুকে স্বভাবের ছিল মিষ্টু। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে তাঁর এহেন পরিণতির পর যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের নিরাপত্তা ব্যবস্থাকে কাঠগড়ায় দাঁড় করিয়েছিলেন তারা।

    শনিবার একই কথা শোনা গেল একমাত্র সন্তান হারা বাবা অর্ণবের গলায়। তাঁর কথায়, “মেয়েকে বলেছিলাম যাদবপুর নিয়ে তো অনেক খবর কানে আসে। তাই ভর্তি হওয়ার আগে একটু ভাবিস। মেয়ে বলেছিল, সমস্যা হস্টেলে যারা থাকে তাদের হয়। আমি তো বাড়ি থেকে যাতায়াত করব। সেদিন আমার কথা শুনে ভর্তি না হত, তাহলে এদিন দেখতে হত না।” এরপরই মেয়ের মৃত্যু নিয়ে একাধিক প্রশ্ন তোলেন তিনি। বলেন, “মেয়ে নিজে তো জলে নামতে যাবে না। তাহলে মৃতদেহ জলাশয় থেকে উদ্ধার হল কি করে? কেউ কি ধাক্কা দিয়েছিল? সন্দেহ আরও বাড়ছে কারণ অকুস্থলে সিসি ক্যামেরা নেই। অপরাধীরা তো এই রকম জায়গাই খোঁজে। মেয়ের জুতো ও চশমা পাওয়া যায়নি। অথচ একজন প্রফেসর এসে আমাকে মেয়ের ব্যাগ দিয়েছিল। সেই ব্যাগে মোবাইল, হেডফোন, চুলের ক্লিপ ছিল। ওই প্রফেসরকে আমি চিনি না। তাকে জিজ্ঞাসা করেছিলাম ব্যাগ কোথায় পেলেন। বলেছিল মেয়ের এক বন্ধু দিয়েছে। সন্দেহজনক সেই বন্ধুটিকে? কিভাবে সে মেয়ের ব্যাগ পেল, এটা আমরা জানতে চাই।”

    তবে মেয়ের বিশেষ কেউ বন্ধু ছিল না, সে কলেজে রাজনীতিও করত না বলেও জানিয়েছেন তিনি। বলেছেন, মেয়েকে তার মা বারবার বলত, তুই তুই বিয়ে করলে আমাদের কে দেখবে। উত্তরে মেয়ে বলত, বিয়ে করবে না। আমাদের সঙ্গে এই বাড়িতেই থাকবে। কলেজ পলিটিক্স নিয়ে জিজ্ঞাসা করা হলে মিষ্টু বলতো, ‘কলেজের যারা বামপন্থী সংগঠন করে তাদের নীতি ভালো না। এবিভিপিও ধর্মীয় রাজনীতি করে। আমি অবশ্য কলেজে পার্টি করিনা। তবে মুখ্যমন্ত্রী এ রাজ্যে যা করেছেন তা অন্য কোন রাজ্য পড়ে দেখাতে পারেনি’।

    আপাতত ময়নাতদন্তের রিপোর্টের অপেক্ষাতেই রয়েছেন অনামিকার পরিবার। শুক্রবার তারা পুলিশকে লিখিত জানিয়েছিলেন, কারোর বিরুদ্ধে কোন অভিযোগ নেই। এ নিয়ে অর্ণব বাবু জানালেন, মেয়ের মৃত্যুর খবর শোনা ও মৃতদেহ দেখার পর থেকে শোকার্থ হৃদয়ে ভেঙে পড়ে ভাবনা চিন্তা করার ক্ষমতা ছিল না। এখন প্রশ্ন গুলি মাথায় জাগছে বলেই অভিযোগ জানাবো বলে ঠিক করেছি।
  • Link to this news (প্রতিদিন)