• পাহাড়ি গ্রামে পুজোর ছুটি কাটিয়ে নিজেকে করে তুলুন তরতাজা, সেজে উঠেছে ঝান্ডি ও চুইখিম
    বর্তমান | ১৪ সেপ্টেম্বর ২০২৫
  • নিজস্ব প্রতিনিধি, জলপাইগুড়ি: আপনি কি এবারের পুজো কোনও অফবিট ডেস্টিনেশনে কাটাতে চাইছেন? এমন কোনও জায়গার খোঁজ করছেন যেখানে হারিয়ে যেতে পারেন প্রকৃতির মাঝে? যে গ্রামে কয়েকটা দিন কাটালে হয়ে উঠবেন একেবারে তরতাজা! তাহলে আপনার গন্তব্য হতেই পারে ঝান্ডি ও চুইখিম। কালিম্পং জেলার অন্তর্গত হলেও দু’টি জায়গাই ডুয়ার্সের একেবারে কাছে। যেখানে আপনার জন্য অপেক্ষা করছে প্রকৃতির অপার সৌন্দর্য আর কাঞ্চনজঙ্ঘার হাতছানি। চুইখিমকে বলা হয়, হিমালয়ান হিলিং ভিলেজ। ডুয়ার্সের বাগরাকোট থেকে ১৫ কিমি দূরে অনবদ্য পাহাড়ি গ্রাম এটি। লেপচা ভাষায় চুইখিম কথার অর্থ, রেস্ট ইন প্লেস। কাজের চাপে হাঁপিয়ে ওঠা জীবন থেকে কয়েকটা দিনের জন্য হলেও মুক্তি পেতে পুরনো সিল্ক রুটে চুইখিমই হয়ে উঠতে পারে আপনার পছন্দের অন্যতম ডেস্টিনেশন। নেওড়ার জঙ্গল ঘেরা এই পাহাড়ি গ্রামে আপনাকে আলিঙ্গন করবে মেঘের দল। এখান থেকে সূর্যোদয় ও সূর্যাস্ত দেখার অভিজ্ঞতা একেবারেই আলাদা। ট্রেকিং, মাউন্টেন ভিউ, হরেক পাখি, প্রজাপতি তো আছেই, আপনার শরীরে শিহরণ জাগাবে ঘন জঙ্গল, জলপ্রপাত কিংবা ভিলেজ হাইকিং। আসার পথে আপনার মন কেড়ে নেবে লিস নদীর সৌন্দর্য। চুইখিমের পথে এখন নয়া আকর্ষণ লুপব্রিজ।কাছেই ইয়েলবং ক্যানিয়ন, যার পরতে পরতে লুকনো রোমাঞ্চ। অন্যদিকে, ডুয়ার্সের একেবারে কাছে অথচ প্রায় সাড়ে ছ’হাজার ফুট উঁচুতে অবস্থিত ঝান্ডি। এখানে সারাবছর ঠান্ডা থাকে। শীতে তাপমাত্রা প্রায় শূন্যে নেমে যায়। এখান থেকে মন ভরে দেখতে পাবেন কাঞ্চনজঙ্ঘা। নীচ দিয়ে সরু সুতোর মতো হয়ে বয়ে চলা পাহাড়ি নদী ও ডুয়ার্সের জনপদ দেখতে খুবই সুন্দর লাগে। এখান থেকেই দেখা যায় নাথুলা রেঞ্জ। তবে দিনের থেকেও ঝান্ডির সৌন্দর্য রাতে বেশি। পাহাড়ের গায়ে ছোট ছোট গ্রামগুলিতে যখন আলো জ্বলে ওঠে, দেখে মনে হয় যেন দীপাবলি। যাঁরা পাখি ভালোবাসেন, ঝান্ডিতে এলে মন ভরে যাবে। প্রজাপতির মেলা বসে এখানে। মেঘলা দিনেও অপরূপ জায়গাটি। মেঘ-কুয়াশার জাল, বৃষ্টি আর গাঢ় সবুজ গাছপালা, সবমিলিয়ে আপনার মন কেড়ে নেবে ঝান্ডি। পাহাড়ের কোলে দু’দণ্ড নিজের মতো করে সময় কাটাতে জায়গাটির জুড়ি মেলা ভার। এই ট্রিপেই আপনি দেখে নিতে পারেন ডালিম ফোর্ট। যেখানে মিশে আছে লেপচা রাজার রক্তে রাঙানো ইতিহাস। আজও যেখানে ঘুরে বেড়ায় অতৃপ্ত আত্মা! রাজা নেই। নেই রাজ্যপাট। কিন্তু রয়ে গিয়েছে ইতিহাস। আর রহস্য-রোমাঞ্চে ঘেরা সেই ইতিহাস। রাজ-হত্যার স্মৃতি আজও বহন করে চলেছে গহীন অরণ্যে থাকা পরিত্যক্ত ভাঙা গড়। প্রকৃতির সৌন্দর্য উপভোগ করতে এসে আপনিও কান পাততে পারেন সেই গড়ের দেওয়ালে। যার ভাঙা দেওয়াল, দেওয়ালের প্রতিটি ইটের গায়ে আজও লেগে রয়েছে বিশ্বাসঘাতকতার কাহিনী! আজও সন্ধ্যার পর এখানকার বাতাস ভারী হয়ে ওঠে। গড়ের আশপাশে একা ঘোরাফেরা করলে গা ছমছম করে। টের পাওয়া যায় এক অদৃশ্য উপস্থিতি। ইতিহাস যেন কিছু বলতে চায়। অনেকে বলেন, এ হল রাজার অতৃপ্ত আত্মার হাহাকার। বেড়াতে এসে আপনি যদি রহস্য, রোমাঞ্চ আর ইতিহাসের সাক্ষী হতে চান, তাহলে অবশ্যই আপনার ডেস্টিনেশন হতে পারে ডালিম ফোর্ট। এই জায়গাটিও কালিম্পং জেলার অধীনে হলেও ডুয়ার্সের গোরুবাথান থেকে মাত্র সাত কিমি দূরে। কাছেই ডালিমখোলা গ্রাম। ওই গ্রামকে ছুঁয়ে আপন মনে বয়ে গিয়েছে ডালিম নদী। কিছুটা দূরে দেখা মিলবে চেল নদীর। পাহাড়ের মাথায় শেষ লেপচা রাজার দুর্গ। ডালিম ফোর্ট ও ধামসা ফোর্ট। যেগুলির সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে ঐতিহাসিক গল্পগাথা।ইতিহাস বলছে, লেপচা রাজার সাম্রাজ্য দখলের স্বপ্ন দেখেছিলেন ভুটানের রাজা নামগিয়েল ডুকপা। সেই স্বপ্নে বাধা হয়ে দাঁড়ান লেপচা রাজা গেবু আচিওক। বারবার আক্রমণ করেও ব্যর্থ হয়ে শান্তিচুক্তির প্রস্তাব পাঠান ভুটান রাজা। রানির পরামর্শ অগ্রাহ্য করে তাতে সাড়া দেন লেপচা রাজা। ওই চুক্তি যে তাঁকে খতম করার কৌশল, তা বুঝতে পারেননি তিনি। ফলে পরিণাম হয়েছিল মারাত্মক। শান্তিচুক্তির বৈঠকে লেপচা রাজাকে সুরা পান করিয়ে তাঁর মুণ্ডচ্ছেদ করা হয়। তারপর সেটি ভাসিয়ে দেওয়া হয় ডালিম দুর্গের পাশে চেল নদীতে। লেপচা রাজার গড়ের ধ্বংসাবশেষ এখন পর্যটনকেন্দ্র। গাড়ি এলেও দুর্গে পৌঁছতে কিছুটা পথ হাঁটতে হয়। পাহাড়ি ছোট্ট জনপদ ডালিমখোলাও দেখার মতো।
  • Link to this news (বর্তমান)