দক্ষিণেশ্বর মেট্রো স্টেশনে খুন হওয়া মনোজিৎ যাদবের সঙ্গে পুরনো কোনও শত্রুতা ছিল না অভিযুক্ত রানা সিংহের। তাকে দফায় দফায় জেরা করে এমনই জেনেছেন তদন্তকারীরা। তবে, জেরায় রানা স্বীকার করেছে যে, এক কিশোরীকে কেন্দ্র করে সহপাঠীদের সঙ্গে তার পুরনো ঝামেলা চলছিল। বিষয়টি জেনে শুক্রবার তাকে কটূক্তি ও উত্ত্যক্ত করেছিল মনোজিৎ। যার জেরে দু’জনের মধ্যে মারামারি লাগে। তখনই মনোজিৎকে ছুরি দিয়ে আঘাত করে রানা।
শনিবার রানাকে ব্যারাকপুর মহকুমা আদালতে তোলা হলে বিচারক পাঁচ দিনের পুলিশি হেফাজতের নির্দেশ দেন। শুক্রবার রাতে গ্রেফতারের পরে ধৃতের আলমবাজারের বাড়ি থেকে রক্ত মাখা ছুরি ও স্কুলব্যাগ উদ্ধার করেছে পুলিশ। বাড়ি ফিরে পুরো ঘটনাটি পরিজনদের জানায় রানা। এর পরেই মা, বাবা ও বোনকে নিয়ে বিহারের বেগুসরাইয়ে পালানোর জন্য হাওড়া স্টেশনে গিয়েছিল রানা। সেখান থেকেই তাকে গ্রেফতার করে দক্ষিণেশ্বর থানার পুলিশ।
তদন্তে পুলিশ জেনেছে, বাগবাজার উচ্চ বিদ্যালয়ের বাণিজ্য বিভাগের পড়ুয়া রানা ও তার তিন সহপাঠী বনহুগলিতে একটি কোচিং সেন্টারে পড়ত। ওই সহপাঠীদের মধ্যে বালির বাসিন্দা এক পড়ুয়ার সঙ্গে বরাহনগরের এক কিশোরীর সম্পর্ক ছিল। ওই মেয়েটিও একই কোচিং সেন্টারে পড়ত। গত ৫ সেপ্টেম্বর সকলে মিলে কোচিং সেন্টারে গিয়েছিল। সেখানে ক্লাস শেষ হলে কিশোরী বাড়ি চলে যায়। তখন রানার এক সহপাঠী তথা প্রতিবেশী কিশোর ওই ছাত্রীর সম্পর্কে বাজে কথা বলে। তাতে আপত্তি জানিয়ে চলে যায় বালির বাসিন্দা পড়ুয়া। ৭ সেপ্টেম্বর ফের রানার উপস্থিতিতেই ওই ছাত্রীকে নিয়ে আরও আলোচনা হয়।
পুলিশ জানাচ্ছে, অন্যের থেকে বিষয়টি শুনে ১০ সেপ্টেম্বর বালির বাসিন্দা ছাত্রটি রানাকে ফোন করে জানতে চায়, তার বান্ধবীকে নিয়ে কী আলোচনা হয়েছে? তার পরে রানার প্রতিবেশী তথা সহপাঠীকে ফোন করে ওই ছাত্র জানতে চায়, কেন এমন অপবাদ সে দিয়েছে? রানাই তাকে সব কিছু বলেছে বলেও জানায়। তাতে রেগে গিয়ে ওই দিন রাতেই বাড়ি থেকে ডেকে রানাকে মারধর করে তার প্রতিবেশী সহপাঠী। তবে, দুই পরিবারের মধ্যস্থতায় বিষয়টি মিটে যায়।
তদন্তে পুলিশ জেনেছে, পড়াশোনার পাশাপাশি পুজো মণ্ডপে কাজ খুঁজছিল রানা। সে জন্য শুক্রবার সকালে বাড়ি থেকে বেরিয়ে কয়েকটি জায়গায় ঘুরে স্কুলে পরীক্ষা দিতে গিয়েছিল সে। দুপুরে শ্যামবাজার স্টেশনে মেট্রোর জন্য অপেক্ষা করছিল রানা। তখন সেখানে আসে মনোজিৎ ও তার চার বন্ধু। সকলে একই স্কুলের পড়ুয়া হওয়ায় রানার সঙ্গে তার বন্ধুদের ঝামেলার কথা জেনে গিয়েছিল মনোজিৎ। জেরায় রানার দাবি, মেট্রো স্টেশনে তার উদ্দেশ্যে কটূক্তি করতে থাকে মনোজিৎ। যা নিয়ে দু’জনের বচসা বাধে। সেই সময়েই ছুরি বার করে মনোজিৎকে ভয় দেখায় রানা। তবে, ট্রেন চলে এলে রানা ও মনোজিৎ আলাদা কামরায় উঠে পড়ে।
রানার দাবি, দক্ষিণেশ্বরে নেমে স্মার্ট গেট থেকে বেরিয়ে মনোজিৎ তার পথ আটকায়। ‘এক জন মেয়ের জন্য যে মার খেয়েছে, সে আবার ভয় দেখাচ্ছে’— মনোজিৎ রানাকে এ কথা বলায় দু’জনের ধস্তাধস্তি বাধে। জেরায় রানার দাবি, ১০ তারিখ মার খাওয়ার পর থেকে ব্যাগে ছুরি রাখত সে। স্টেশনে মনোজিৎ পরিচিতদের ডেকে পাঠানোয় সে আবারও মার খাওয়ার ভয় পেয়েছিল। তখনই ছুরি দিয়ে আঘাত করে পালিয়ে যায় রানা। ব্যারাকপুর সিটি পুলিশের উপ-নগরপাল (দক্ষিণ) অনুপম সিংহ বলেন, ‘‘ছুরি মারার কথা রানা জেরায় স্বীকার করেছে। ওর বন্ধুদের জিজ্ঞাসাবাদ করে বাকি দাবির সত্যাসত্য খতিয়ে দেখা হবে।’’