• নামকরা স্কুলে মাদক কারখানা, শেষ পর্যন্ত গ্রেপ্তার স্কুলের ডিরেক্টর, বাজেয়াপ্ত লাখ টাকার সরঞ্জাম...
    আজকাল | ১৪ সেপ্টেম্বর ২০২৫
  • আজকাল ওয়েবডেস্ক: হায়দরাবাদে চাঞ্চল্যকর ঘটনা। শহরের একটি নামকরা বেসরকারি স্কুল থেকে মাদক পাচার? হ্যাঁ ঠিকই পড়ছেন। এমনই এক গোপন চক্র ফাঁস করে দিয়েছে হায়দরাবাদের স্থানীয় পুলিশ প্রশাসন। এই ঘটনায় তিনজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে, যাদের মধ্যে খোদ স্কুলের পরিচালক মালেলা জয়া প্রকাশ গৌড়ও রয়েছেন। ঘটনা ঘিরে শোরগোল এলাকায়। 

    গোপন সূত্রে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে তেলেঙ্গানা পুলিশের এলিট অ্যাকশন গ্রুপ ফর ড্রাগ ল’ এনফোর্সমেন্ট (EAGLE) একটি অভিযান চালায়। অভিযান চালিয়ে হায়দরাবাদের মেডা স্কুলের ভবনে এক অবৈধ মাদক চক্রের ইউনিটের সন্ধান পায়। খবর অনুযায়ী, ওই স্কুলের পরিচালক গৌড় দীর্ঘদিন ধরে দ্বিতীয় তলায় গোপনে একটি কেমিস্ট্রি ল্যাব চালাচ্ছিলেন। সেখানে আটটি বড় রিঅ্যাক্টর এবং ড্রায়ার বসানো ছিল। আলপ্রাজোলাম ( Alprazolam) নামক নিষিদ্ধ মাদক তৈরি করা হত সেখানে। এই ওষুধটি সাধারণত তাড়ি বা দেশি মদে মিশিয়ে বিক্রি করা হয়, যাতে এর নেশার প্রভাব বেড়ে যায়।

    সর্বভারতীয় সংবাদমাধ্যম সূত্রে জানা গিয়েছে, গৌড় তাঁর এক সহযোগী গুরুবারেড্ডির কাছ থেকে এই নিষিদ্ধ ওষুধ তৈরি করার প্রক্রিয়া শেখেন। তারপর নিজেই উৎপাদন শুরু করেন। উৎপাদিত এই মাদক মাহবুবনগরের বিভিন্ন তাড়ির ডিপোতে সরবরাহ করা হতো। পুলিশ জানিয়েছে, এই গোপন উৎপাদন ইউনিটটি প্রায় ছয় মাস ধরে চালু ছিল। সপ্তাহে ছয় দিন ইউনিটটি চালু থাকত এবং রোববার করে মাদক ডেলিভারি দেওয়া হতো।

    অভিযানে পুলিশ স্কুলের ওই গোপন ল্যাব থেকে প্রায় ৭ কেজিরও বেশি আলপ্রাজোলাম পায়৷ এছাড়াও ২১ লাখ টাকা নগদ, বিপুল পরিমাণ কাঁচামাল ও মাদক তৈরির সরঞ্জাম উদ্ধার করেছে। আশ্চর্যের বিষয় হলো, যখন দ্বিতীয় তলায় এহেন অবৈধ কার্যক্রম চলছিল, তখন ওই একই ভবনের নিচতলা ও প্রথম তলায় রোজকার মত স্কুলের ক্লাস চলছিল।

    ঘটনার জেরে পুলিশ মালেলা জয়া প্রকাশ গৌড় সহ তাঁর দুই সহযোগীকে হাতেনাতে গ্রেপ্তার করেছে। তাঁদের বিরুদ্ধে মাদক নিয়ন্ত্রণ আইনে কঠোর পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। ঘটনাটি জনমনে তীব্র চাঞ্চল্যের সৃষ্টি করেছে। বিশেষত একটি নামকরা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে এ ধরনের অবৈধ কাজ পরিচালিত হওয়ায় অভিভাবকরা আতঙ্কিত।

    প্রসঙ্গত, দিল্লি পুলিশের অপরাধ দমন শাখা সম্প্রতি এক বড় মাদকচক্রের হদিস পায়। এ বিষয়ে শুক্রবার পুলিশের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, এই ঘটনায় এখনও পর্যন্ত তিন জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। খবর অনুযায়ী, তাদের কাছ থেকে মোট ১৯৪ গ্রাম কোকেন বাজেয়াপ্ত হয়েছে। উদ্ধার হওয়া মাদকের বাজারমূল্য প্রায় ২.২৫ কোটি টাকা বলে দাবি করেছে পুলিশ।

    সর্বভারতীয় সংবাদমাধ্যম সূত্রে খবর পাওয়া গিয়েছে, গ্রেপ্তার করা হয়েছে দিল্লির বাসিন্দা রাহুল ওয়াধওয়া (৩২), উত্তরপ্রদেশের আব্দুল কাদির (২৯) এবং নাইজেরিয়ার নাগরিক চিমেজি লাজারাস ইনডেডিঙ্গে ওরফে জুডো (৩৫)- কে। পুলিশের তথ্য অনুযায়ী, ওয়াধওয়া এবং কাদির আগে ট্যাক্সিচালক ছিল। আর জুডো ২০২৩ সালের জানুয়ারিতে চিকিৎসার জন্য ভারতে আসে, পরে আর্থিক সঙ্কটে পড়ে মাদক পাচারের ব্যবসায় জড়িয়ে পড়ে।

    পুলিশ জানিয়েছে, ৬ সেপ্টেম্বর একটি গোপন সূত্রে খবর পাওয়া যায় যে, ওয়াধওয়া এবং কাদির রোহিণীতে কোকেনের চালান পৌঁছে দিতে আসছে। এরপরই ফাঁদ পেতে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়। কাদিরের কাছ থেকে ৫৪ গ্রাম এবং ওয়াধওয়ার কাছ থেকে ৩১ গ্রাম কোকেন বাজেয়াপ্ত হয়। জেরার সময় তারা জানায়, মাদকের মূল সরবরাহকারী জুডো। সেই সূত্র ধরে ১০ সেপ্টেম্বর মেহরৌলিতে অভিযান চালিয়ে জুডোকে ধরা হয। এরপর তার কাছ থেকে প্রায় ১০৯ গ্রাম কোকেন উদ্ধার হয়।

    তদন্তকারীরা জানিয়েছেন, জুডো দিল্লি ছাড়াও গুরুগ্রাম, মিরাঠ, চণ্ডীগড় এবং হালদওয়ানিতে কোকেন সরবরাহ করত। সে কাদিরকে প্রতিটি চালানের জন্য এক হাজার টাকা করে দিত, পরে কাদিরের মাধ্যমে ওয়াধওয়া এই চক্রে যোগ দেয়। তবে তিনজনের কারও বিরুদ্ধে আগে কোনও অপরাধমূলক রেকর্ড ছিল না।

    ঘটনার জেরে অপরাধ দমন শাখার এক সিনিয়র আধিকারিক বলেন, 'এটি একটি সুসংগঠিত আন্তর্জাতিক মাদকচক্রের অংশ হতে পারে। আমরা এই নেটওয়ার্কের অর্থনৈতিক যোগসূত্র এবং বিদেশি যোগাযোগগুলি খতিয়ে দেখছি।' পুলিশের অনুমান, চক্রটির সঙ্গে আরও কয়েকজন যুক্ত থাকতে পারে।

    এই ঘটনার পর রাজধানী এবং পার্শ্ববর্তী এলাকায় মাদক পাচারের নতুন রুট ও চক্রের সক্রিয়তা নিয়ে উদ্বেগ তৈরি হয়েছে। পুলিশ জানিয়েছে, এখন তদন্ত জারি থাকবে। দ্রুত এর জেরে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে৷ 
  • Link to this news (আজকাল)