• সংসারের জ্বালা থেকে মুক্তি চেয়েছিল, দুই সন্তানকে খুন দম্পতির, স্বামীর কাণ্ডে এখন জেল হেফাজতে শুধু স্ত্রী ...
    আজকাল | ১৪ সেপ্টেম্বর ২০২৫
  • আজকাল ওয়েবডেস্ক: নিত্যদিন দাম্পত্য কলহ‌।‌ সঙ্গে আর্থিক অনটন। দুইয়ের জেরে নিজেদের শেষ করতে চেয়েছিল দম্পতি। কিন্তু সন্তানদের একা ফেলে রেখে চলে যেতে চায়নি। তাই প্রথমে দুই সন্তানকে খুন করেন। কিন্তু স্ত্রী আত্মহত্যা করার আগেই, গলায় ফাঁস লাগিয়ে আত্মঘাতী হলেন স্বামী। মর্মান্তিক এই ঘটনার পর শেষমেশ পুলিশি হেফাজতে ওই যুবতী। 

    সর্বভারতীয় সংবাদমাধ্যম সূত্রে জানা গেছে, ঘটনাটি ঘটেছে বেঙ্গালুরুতে। পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, হোস্কোতে তালুকের গোনাকানাহাল্লি গ্রামেই এই মর্মান্তিক ঘটনাটি ঘটেছে। এই গ্রামের এক বাড়ি থেকে এক যুবক, তাঁর দুই সন্তানের মৃতদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ। বর্তমানে ওই যুবকের স্ত্রী পুলিশি হেফাজতে রয়েছেন। 

    তদন্তে নেমে পুলিশ জানতে পেরেছে, ৩২ বছরের শিবু ও মঞ্জুলা নিত্যদিন অশান্তি করতেন। দাম্পত্য কলহে দুজনেই জেরবার ছিলেন। কয়েক বছর এক ভয়াবহ দুর্ঘটনার কবলে পড়েন শিবু। তখন থেকেই বেশিরভাগ সময় বাড়িতেই কাটাতেন। বাড়িতে থাকাকালীন স্ত্রীর প্রতি সন্দেহ ঘনায় তাঁর। স্ত্রীর আচরণ ঘিরে একাধিকবার সন্দেহ প্রকাশ করেছিলেন। পাশাপাশি আর্থিক অনটনেও ভুগছিলেন। 

    দম্পতি গত কয়েক মাস ধরেই আত্মহত্যার চেষ্টা করছিল। কিন্তু সন্তানদের মুখের দিকে চেয়ে চরম পদক্ষেপ করতে পারেনি। অবশেষে স্বামী- স্ত্রী পরিকল্পনা করেন, আগে দুই সন্তানকে খুন করবেন। তারপর আত্মঘাতী হবেন তাঁরা। ঘটনার দিন প্রথমে মত্ত অবস্থায় দুই সন্তানকে খুন করেন তাঁরা। ১১ বছরের মেয়ে এবং সাত বছরের ছেলের শ্বাসরোধ করে খুন করেন তাঁরা। মৃত্যু নিশ্চিত করতে দুই সন্তানের মুখ জলের মধ্যে ডুবিয়ে রেখেছিলেন। 

    এরপর মঞ্জুলা গলায় ফাঁস লাগিয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা করেছিলেন। সেই সময়ে শিবু ঘনঘন বমি করছিলেন। তিনি জানান, তাঁর শরীর খারাপ লাগছে। বাইরে থেকে কিছু খাবার কিনে আনার জন্য স্ত্রীকে অনুরোধ করেন। শিবুকে বাড়িতে রেখে মঞ্জুলা বাইরে খাবার কিনতে যান। বাড়িতে ফিরে দেখেন, শিবু গলায় ফাঁস লাগিয়ে আত্মহত্যা করেছেন। 

    নিজেকে শেষ করার আগে পরিবারের সদস্যদের গোটা ঘটনাটি জানাতে চেয়েছিলেন মঞ্জুলা। কিন্তু স্বামীর ফোনটি লক ছিল। তাই প্রতিবেশীর বাড়িতে গিয়ে পরিবারের সদস্যদের ফোন করে তিনি বিষয়টি জানান।‌ মঞ্জুলার মুখে বিবরণ শুনে আঁতকে ওঠেন প্রতিবেশীরা। তাঁরা তড়িঘড়ি করে ছুটে যান ঘটনাস্থলে। দ্রুত খবর দেওয়া হয় পুলিশে। ঘটনাস্থলে পুলিশ পৌঁছে মঞ্জুলাকে আটক করে। বর্তমানে তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। 

    প্রসঙ্গত, গত জুলাই মাসেই বন্ধ ঘর থেকে উদ্ধার হয়েছিল এক পরিবারের পাঁচ সদস্যের মৃতদেহ। এক দম্পতি ও তাদের তিন খুদে সন্তানের নিথর দেহকে কেন্দ্র করে উত্তেজনা ছড়িয়েছে এলাকায়। দিল্লির সেই বুরারিকাণ্ডের ছায়া এবার খাস নরেন্দ্র মোদির রাজ্যে। গুজরাটে এক পরিবারের পাঁচ সদস্যের রহস্যমৃত্যুকে ঘিরে শুরু হয়েছে তদন্ত। 

    সর্বভারতীয় সংবাদমাধ্যম সূত্রে জানা গেছে, ঘটনাটি ঘটেছে গুজরাটের আহমেদাবাদের বাগোদারায়। পুলিশ জানিয়েছে, মৃতেরা হলেন বিপুল ভাগেলা ও সোনাল ভাগেলা এবং তাঁদের ১১ ও পাঁচ বছরের দুই কন্যাসন্তান ও আট বছরের এক পুত্রসন্তান। রবিবার সকালে একটি ভাড়া বাড়ি থেকে পাঁচজনের দেহ উদ্ধার করেছে‌ পুলিশ।

    এদিন সকালে প্রতিবেশীরাই পুলিশে প্রথম খবর দেন‌। ঘটনাস্থলে তড়িঘড়ি পৌঁছয় পুলিশ বাহিনী, অ্যাম্বুল্যান্স। দুটি ঘর থেকে পাঁচজনের দেহ উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে চিকিৎসকেরা পাঁচজনকেই মৃত বলে ঘোষণা করেন। দেহগুলি ময়নাতদন্তের জন্য পাঠানো হয়েছে। পুলিশের প্রাথমিক অনুমান, দুই কন্যাসন্তান ও এক পুত্রসন্তানকে খুন করে দম্পতি আত্মঘাতী হয়েছে। 

    এদিকে মৃত দম্পতির পরিবার পুলিশকে জানিয়েছে, তাঁরা আদতে ঢোলকার বাসিন্দা ছিলেন। কিন্তু কয়েক মাস আগে বাগোদারায় একটি ভাড়া বাড়িতে বসবাস করছিলেন। বিপুল পেশায় অটোরিকশা চালক ছিলেন। পরিবারে তিনি একাই উপার্জন করতেন। সংসার চালাতে রীতিমতো হিমশিম খেতেন। আর্থিক অনটনের কারণেই হয়তো চরম পদক্ষেপ করেছেন। 

    পরিবারের তরফে আরও জানা গেছে, কয়েক মাস আগে বিপুল ঋণ নিয়ে একটি অটোরিকশা কিনেছিলেন।‌ সেটির ধাঋণ শোধ করতে পারছিলেন না। একদিকে সংসারের চাপ, অন্যদিকে ঋণের বোঝা। সবমিলিয়ে মানসিকভাবে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছিলেন তিনি। তিন সন্তানকে বড় করে তোলার মতো আর্থিক সামর্থ্য ছিল না তাঁর। ঋণের কারণেই আত্মঘাতী হয়েছেন বলে অনুমান পরিবারের। 

    পুলিশ জানিয়েছে, এই ঘটনায় একটি মামলা রুজু করা হয়েছে। ময়নাতদন্তের রিপোর্ট এলে তবেই মৃত্যুর কারণ স্পষ্ট হবে। ঋণ শোধ করার জন্য কেউ চাপ সৃষ্টি করতেন কিনা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। আত্মহত্যায় কেউ বা কারা প্ররোচনা দিয়েছিল কিনা, তাও তদন্তের আওতায় রয়েছে। পরিবারের সদস্যদের ও প্রতিবেশীদের জিজ্ঞাসাবাদ করে তদন্ত জারি রয়েছে। 
  • Link to this news (আজকাল)