মায়ের পাশে নিশ্চিন্তে ঘুম তিন ভাইবোনের, দাউদাউ আগুন দেখেই পালিয়ে গেলেন মা! অগ্নিদগ্ধ অবস্থায় মর্মান্তিক পরিণতি তিন সন্তানের ...
আজকাল | ১৪ সেপ্টেম্বর ২০২৫
আজকাল ওয়েবডেস্ক: ভয়াবহ এক অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় ঘুমের মধ্যে অগ্নিদগ্ধ হয়ে মৃত্যু হল যমজ দুই ভাই এবং তাদের সাত বছরের এক বোনের। মর্মান্তিক এই ঘটনাটি ঘটেছে শনিবার গভীর রাতে মুর্শিদাবাদের রানিতলা থানার অন্তর্গত বেনীপুর-ভাঙ্গনপাড়া এলাকায়। পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, মৃত তিন নাবালকের নাম সাহিল আলি (৯), আদিল আলি (৯), এবং তাদের বোন সাজিদা খাতুন(৭)। রানিতলা থানার পুলিশ ইতিমধ্যে মৃতদেহগুলো উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য পাঠিয়েছে।
স্থানীয় সূত্রে যায় জানা গিয়েছে, মৃত তিন নাবালকের বাবা সায়ন আলি কলকাতায় পরিযায়ী শ্রমিকের কাজ করেন। বর্তমানে তিনি বাড়িতে নেই। তিন নাবালক তাদের মা সায়মা খাতুনের সঙ্গে বেনীপুর-ভাঙ্গনপাড়া এলাকায় একটি কাঁচা বাড়িতে থাকত।
শনিবার গভীর রাতে সায়মা যখন তার দুই ছেলে এবং মেয়েকে নিয়ে ঘরে ঘুমিয়ে ছিলেন সেই সময় কোনও কারণে শর্ট সার্কিট থেকে ঘরে আগুন লেগে যায়। কোনওক্রমে সায়মা ঘর থেকে বেরিয়ে আসতে পারলেও অগ্নিদগ্ধ হয়ে ঘরের মধ্যেই মৃত্যু হয় হয় সাহিল, আদিল এবং সাজিদার। গ্রামের বাসিন্দারা আগুনের লেলিহান শিখা দেখতে পেয়ে টিউবয়েল এবং পদ্মা নদী থেকে জল নিয়ে এসে কোনওক্রমে আগুন নেভান।
স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, বেনীপুর-ভাঙ্গনপাড়া এলাকায় অতি সম্প্রতি নতুন করে একটি জনবসতি গড়ে উঠেছে। এই গ্রামের বেশিরভাগ বাসিন্দাই একসময়ে আখরিগঞ্জ এলাকায় বসবাস করতেন। কিন্তু সেখানে পদ্মা নদীর ভাঙন ভয়াবহ আকার ধারণ করায় বেশিরভাগ বাড়ি বর্তমানে নদীগর্ভে তলিয়ে গিয়েছে। সেখান থেকে উদ্বাস্তু হয়ে বর্তমানে বেশ কিছু পরিবার বেনীপুর-ভাঙ্গনপাড়া এলাকায় এসে পদ্মা নদীর একটি শাখার ধারে নতুন করে বসতি স্থাপন করেছে।
নতুন এই গ্রামটির জন্য ইতিমধ্যেই স্থানীয় প্রশাসন এবং পঞ্চায়েতের তরফ থেকে এলাকায় পাকা রাস্তা এবং বিদ্যুতের ব্যবস্থাও করে দেওয়া হয়েছে। বেলাল শেখ নামে স্থানীয় এক বাসিন্দা বলেন, 'শনিবার রাতে যখন সাইমা তার ছেলেমেয়েদেরকে নিয়ে ঘরে ঘুমিয়ে ছিলেন। সেই সময় শর্ট সার্কিট থেকে ওই বাড়িতে আগুন ধরে যায়। বাড়িটির মেঝে থেকে ভিত পর্যন্ত পাকা হলেও পরবর্তী অংশ পাটকাঠি এবং টিনের তৈরি।'
গ্রামবাসীরা বলেন, আগুনে স্ফুলিঙ্গ থেকে পাটকাঠিতে আগুন ধরে যায়। এরপর সাইমার ছেলেমেয়েরা যেখানে ঘুমিয়ে ছিল, সেখানে আগুনের স্ফুলিঙ্গ ছড়িয়ে পড়ে।
ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শীরা আরও বলেন, সাইমার ছেলেমেয়েরা যে খাটে শুয়ে ছিল, তার ঠিক পাশেই শীতের প্রচুর জামাকাপড় জড়ো করে রাখা ছিল। আগুনের স্ফুলিঙ্গ শীতের জামাকাপড়ে পড়ার পর দাউদাউ করে ঘরটি জ্বলতে থাকে। কোনওক্রমে সাইমা ঘর থেকে বার হয়ে চলে আসতে পারলেও, তাঁর ছেলেমেয়েরা কেউই ঘর থেকে বার হতে পারেনি। তারা তিনজনেই ঘুমের মধ্যে অগ্নিদগ্ধ হয়ে মারা যায়।
আগুন লাগার এই ঘটনায় সাইমার ঠিক পাশের একটি বাড়িও অল্প ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে জানা গিয়েছে। ভগবানগোলা-২ ব্লক তৃণমূল কংগ্রেস সভাপতি আব্দুল রউফ বলেন, 'শনিবার রাত প্রায় বারোটা নাগাদ ওই বাড়িতে আগুন লাগার ঘটনা ঘটে। তারপর থেকেই গ্রামবাসীরা এবং তৃণমূল নেতৃত্ব একসঙ্গে কাজ করে ওই বাড়ির আগুন নেভানোর কাজ শুরু করলেও আমরা তিন শিশুকে বাঁচাতে পারিনি। আমরা পুলিশ প্রশাসনের সঙ্গে কথা বলে দ্রুত ওই তিন নাবালকের দেহ ময়নাতদন্তের ব্যবস্থা করছি।'
তিনি আরও বলেন, 'ইতিমধ্যেই গোটা ঘটনাটি আমাদের দলের শীর্ষ নেতৃত্বকে জানানো হয়েছে। ব্লক এবং অঞ্চল নেতৃত্ব ইতিমধ্যেই ওই পরিবারের পাশে গিয়ে দাঁড়িয়েছেন। ক্ষতিগ্রস্ত বাড়িটি আমরা দ্রুত মেরামত করে দেওয়ার ব্যবস্থা করছি।'