সুমন করাতি, হুগলি: ছোট থেকে মাটি, মাটির তৈরির জিনিসপত্রের প্রতি তাঁর ঝোঁক। দিনরাত তা নিয়ে নাড়াচাড়া করত। এক মুহূর্তের জন্য স্মার্টফোন হাতে পেলে ইউটিউবে দেখতে শুরু করত প্রতিমা তৈরি। তা দেখে দেখে লক্ষ্মী, কার্তিক, গণেশ, সরস্বতী-সহ দুর্গার গোটা পরিবার তৈরি করে ফেলেছেন হুগলির বলাগড়ের শ্রীপুর এলাকার বছর সতেরোর সন্দীপ আঁটুই ওরফে আকাশ। তাঁর তৈরি দুর্গা আগামী ২০ সেপ্টেম্বর পাড়ি দেবে চেন্নাই।
আকাশের বাবা সুকুমার আঁটুই। পেশায় টোটোচালক। মা গৃহবধূ। সামান্য আয়ে সংসার চালানোই যেন কঠিন। ষষ্ঠ শ্রেণিতে পড়ার সময় জিরাটের একটি বেসরকারি সংস্থার আবাসিক শিবিরে সন্দীপকে ভর্তি করে দেন তাঁর বাবা। বর্তমানে ওই আবাসিক শিবিরেই পড়াশোনা চালিয়ে যাচ্ছেন। এবার উচ্চমাধ্যমিক দেবেন তিনি। পড়াশোনার সঙ্গে সমান তালে চলছে মাটির কাজ।
সন্দীপ জানান, “ছোট থেকেই আমার মাটির কাজ করতে খুব ভালো লাগে। রাতদিন মাটি নিয়ে পড়ে থাকতাম। এলাকার মৃৎশিল্পীদের কাছেও যেতাম। তাঁদের প্রতিমা তৈরি করা দেখতাম। বাবা, মা বারণ করতেন। তাঁরা বলতেন এসব করিস না। পড়াশোনা কর। আমি তাঁদের কথা শুনতাম না। আমি প্রতিমাশিল্পী এবং ইউটিউব দেখে কিছুটা শিখেছি। আগে নানা মাটির জিনিস তৈরি করতাম। এখন বিভিন্ন জায়গা থেকে দুর্গা তৈরির ডাক আসছে। এবার প্রথমবার দুর্গা তৈরি করলাম।”
আড়াই ফুট উচ্চতার প্রতিমা তৈরি করেছেন সন্দীপ। একই কাঠামোয় রয়েছেন দুর্গা, লক্ষ্মী, কার্তিক, গণেশ, সরস্বতী, সিংহ ও মহিষাসুর। প্রতিমা তৈরি করতে সময় লেগেছে এক মাস। সেপ্টেম্বরের ২০ তারিখ বলাগড় থেকে চেন্নাইয়ে পাড়ি দিচ্ছে সন্দীপের তৈরি মাটির দুর্গা। ডাকের সাজে সাজানো হয়েছে প্রতিমাকে। দুর্গা ছাড়াও লক্ষ্মী এবং সরস্বতী ঠাকুর তৈরিরও বরাত পেয়েছেন তিনি। বলাগড়ের বধূ মীনা সেনের সন্দীপের কাজ ভালো লাগে। বর্তমানে তিনি চেন্নাইতে থাকেন। সন্দীপের কাজ দেখে ভালো লাগে বধূর। প্রতিমা তৈরির বরাত দেন। সন্দীপ বলেন, “এখন বাবা-মা আর আপত্তি করেন না।” তাই পড়াশোনা আর প্রতিমা তৈরির কাজ ? দুই-ই একসঙ্গে চালিয়ে যাচ্ছেন তিনি। মেধাবী ছাত্র হলেও, প্রতিমা তৈরি করে ভবিষ্যতে এগোতে চান সন্দীপ।