• বাংলার পটকথনে দিল্লির নির্ভয়াকাণ্ড, কলকাতার ‘পুজোর মেলা’য় পিংলার পটুয়ারা
    প্রতিদিন | ১৪ সেপ্টেম্বর ২০২৫
  • স্টাফ রিপোর্টার: মাছের বিয়ে, রামায়ণ, বৃক্ষরোপণ, চণ্ডীমঙ্গল এসব তো ছিলই। পটচিত্রে উঠে এসেছিল করোনা সংক্রমণ থেকে আমেরিকার ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টারে হামলা, সুনামিও। আর এবার দিল্লির নির্ভয়াকাণ্ড। রাজধানীর রাস্তায় বাসে নির্ভয়ার উপর নৃশংস হামলা, গণধর্ষণ থেকে চিকিৎসা করাতে তাঁকে সিঙ্গাপুরে নিয়ে যাওয়া এবং অবশেষে মৃত্যু। তারপর অভিযুক্তদের শাস্তি। গোটা ঘটনার কার্যক্রমই উঠে এসেছে বাংলার পটচিত্রে। পুজোর মুখে ‘পুজোর মেলা’ চলছে ক্ষুদিরাম অনুশীলন কেন্দ্রে। সেখানেই আটটা স্টল রয়েছে শুধু পটচিত্র শিল্পীদের। হরেক চোখধাঁধানো কাজ। সেখানেই জবা চিত্রকরের একটি স্টল। শনিবার বিকেলে গিয়ে দেখা গেল, নিজেদের আঁকা পটের ছবির কাহিনিকে সুর ও লয়ের মাধ্যমে গানে উপস্থাপন করছেন শিল্পী। আর তা দেখতেই দোকান ঘিরে ভিড়।

    এ এক অদ্ভুত সুর, যা মন ছুঁয়ে যায়। পটচিত্রের সঙ্গে সম্পর্কিত গানকে ‘পটুয়া সঙ্গীত’ বা ‘পটের গান’ বলা হয়। এটি এক ধরনের লোকগীতি। এই গান শিল্পীরা পট প্রদর্শনীর সঙ্গে পরিবেশন করেন এবং এর মাধ্যমে তাঁরা পৌরাণিক ও লৌকিক কাহিনি বর্ণনা করেন। বিএনসিসিআইয়ের ক্ষুদিরাম অনুশীলন কেন্দ্রে যে মেলা শুরু হয়েছে, রবিবার তার শেষ দিন। গোটা বাংলার ১৬টি জেলার স্থানীয় শিল্পীদের স্টল বসেছে এখানে। বর্ধমানের পিংলার পটচিত্র গ্রাম থেকে সেই মেলাতেই এসেছেন শিল্পীরা। শিল্পী জবা চিত্রকর এঁকেছেন এই নির্ভয়াকাণ্ড। আর গান লিখেছেন তাঁর স্বামী মন্টু চিত্রকর। জবা বলছেন, “এর আগেও সাম্প্রতিক নানা ঘটনার উপর এই পটচিত্র বানিয়েছি। নির্ভয়াকাণ্ড তেমনই একটা। একটি মেয়ের উপর অত্যাচারের অবর্ণনীয় কাহিনি উঠে এসেছে এখানে।”

    বর্ধমানের পিংলার পটচিত্র গ্রামে ১৬০টা বাড়িতে সকলেই এই শিল্পের সঙ্গে যুক্ত। তাঁদের হাতে তৈরি জিনিস দেশ-বিদেশে সমাদৃত। জিআই ট্যাগও পেয়েছে পটচিত্র। আর এসবের সুবাদেই প্যারিস, লন্ডনও ঘুরে এসেছেন জবা। ৩০ বছর ধরে যুক্ত এই কাজে। অন্য শিল্পীদের কথায়, মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উদ্যোগেই আজ তাঁরা দেশ-বিদেশে স্বীকৃতি পেয়েছেন। বিভিন্ন হস্তশিল্প মেলায় জিনিস বিক্রি করতে পারছেন। জিআই ট্যাগও পেয়েছে পটচিত্র।

    শাড়ি, পাঞ্জাবি, কুর্তি, ওড়না থেকে চিনির কৌটো, লক্ষ্মীর ভাঁড়, ট্রে, কাপ, প্লেট, ঘর সাজানোর জিনিস সব কিছুতেই পটচিত্রের নানা সৌন্দর্য ফুটে উঠেছে। তা দেখতেই মানুষের উঁকিঝুঁকি। জবা জানাচ্ছেন, বিভিন্ন দেশ থেকেও মানুষ এই পটচিত্রের সূক্ষ্ম কাজ শিখতে আসেন তাঁদের গ্রামে। পাশেই দোকান সালমা বিবির। তিনিও ওই গ্রাম থেকেই এসেছেন। জবা বলছেন, “আমাদের পটচিত্র গ্রামে সব বাড়িতেই এই কাজ চলছে। আমাদের ছোট ছোট ছেলেমেয়েরাও নিজেরাই পটচিত্রের আর্ট শিখে যায়।”
  • Link to this news (প্রতিদিন)