• প্রবল শরীর খারাপ! ছুটি নিতে বসকে টেক্সট করে জানানোর ১০ মিনিটের মাথায় এ কী পরিণতি কর্মীর? জানলে চমকে উঠবেন ...
    আজকাল | ১৫ সেপ্টেম্বর ২০২৫
  • আজকাল ওয়েবডেস্ক: বেঙ্গালুরুতে এক পেশাদার কর্মীর অস্বাভাবিক মৃত্যু। আকস্মিক হৃদরোগে মৃত্যু হয় তাঁর। এহেন মৃত্যুতে অন্যান্য সহকর্মী ও বন্ধুরা চরম শোকাহত। বিপর্যস্ত তাঁর পরিবারের সদস্যেরাও। এরপরই জানা যায় এক আশ্চর্য কাহিনি। তিনি অসুস্থতার কারণে অফিসে যেতে না পারার কথা জানিয়ে তাঁর ম্যানেজারকে একটি মেসেজ পাঠান। এরপর মাত্র ১০ মিনিটের মধ্যেই মারা যান তিনি। খবর অনুযায়ী জানা গিয়েছে, কর্মীর বয়স ৪০ বছর। তাঁর নাম শঙ্কর। এই নামেই তিনি এলাকায় পরিচিত ছিলেন।

    ঘটনার বিবরণ দিয়েছেন শঙ্করের টিম লিডার কে ভি আইয়্যার। তিনি সামাজিক মাধ্যম এক্স-এ একটি পোস্টে লেখেন, 'সকাল ৮টা ৩৭ মিনিটে শঙ্কর আমাকে মেসেজ করে জানান, ‘স্যার, প্রবল পিঠে ব্যথার কারণে আজ অফিসে আসতে পারব না। অনুগ্রহ করে ছুটি মঞ্জুর করুন।’ আমি ভাবলাম এটা রুটিন ব্যাপার, তাই উত্তর দিলাম, ‘ঠিক আছে, বিশ্রাম নাও।’' ঠিক এর কিছুক্ষণের মাথায় তিনি একটি ফোনকল পান যে শঙ্করের মৃত্যু হয়েছে।

    এ বিষয়ে আইয়্যার আরও বলেন, 'প্রথমে বিশ্বাসই করতে পারিনি। এরপর আরেক সহকর্মীকে ফোন করে বিষটি নিয়ে আমি নিশ্চিত হই। তড়িঘড়ি শঙ্করের বাড়িতে যাই। তাঁর পরিবারের সঙ্গে কথা বলি। তারা সকলে বিদ্ধস্ত'। 

    খবর মারফত জানা গিয়েছে, শঙ্কর পুরোপুরি সুস্থ ছিলেন। এমনকী ধূমপান বা মদ্যপান করতেন না। তিনি বিবাহিত ছিলেন এবং এক সন্তানের বাবা। টানা ছয় বছর ধরে এই একই টিমে কাজ করছিলেন শঙ্কর। এ বিষয়ে বলতে গিয়ে আইয়্যার জানান, পুরো ঘটনায় সবচেয়ে যেই বিষয়টি চরম আঘাত দিয়েছে তা হল এই সময়ের ব্যবধান।

    'তিনি হৃদরোগে আক্রান্ত হয়েছিলেন। এখানে সবচেয়ে অবিশ্বাস্য হলো - তিনি সকাল ৮টা ৩৭ মিনিটে মেসেজ পাঠিয়েছিলেন এবং ৮টা ৪৭ মিনিটে মারা যান। একটি মানুষ, যিনি সম্পূর্ণ স্বাভাবিক ছিলেন মাত্র ১০ মিনিট আগেও, তিনি এখন আর নেই। আমি বিশ্বাস করতে পারছিনা পুরো ঘটনা।' জানান আইয়্যার। পোস্টের শেষে আইয়্যার লেখেন, 'জীবন সত্যিই অনিশ্চিত। আশেপাশের মানুষদের প্রতি সদয় হন এবং সুখে জীবন যাপন করুন, কারণ আপনি কখনও জানেন না পরবর্তী মুহূর্তে কী অপেক্ষা করছে আপনার জন্য।' 

    এই হৃদয়বিদারক ঘটনা সামাজিক মাধ্যমে ব্যাপক আলোড়ন তুলেছে। বহু মানুষ শোক প্রকাশ করেছেন। এইভাবে আচমকা মৃত্যুর বাস্তবতা নিয়ে গভীর চিন্তা প্রকাশ করেছেন। 

    প্রসঙ্গত, ওয়ার্ক ফ্রম হোম হোক বা অফিস - দীর্ঘক্ষণ ডেস্কে বসে কম্পিউটারে চোখ রেখে কাজ করাই এখন নিত্যদিনের ছবি। বসের ভয়ে সকাল ন’টা থেকে সন্ধে ছ’টা, কখনও বা তারও বেশি সময় একটানা চেয়ারে বসে কাটিয়ে দেন বহু কর্মী। তাতে সময় বাঁচে, কাজের ফোকাস থাকে - সবই ঠিক। কিন্তু চিকিৎসকেরা বলছেন, এই একটানা বসে থাকা অভ্যাসই নিঃশব্দে বাড়িয়ে দিচ্ছে হৃদরোগের ঝুঁকি। ব্যস্ততার চাপে যখন শরীরের চিৎকার কানে আসে না, তখনই একদিন আচমকাই হানা দেয় হার্ট অ্যাটাক, ব্লকেজ, হাইপারটেনশন বা হঠাৎ স্ট্রোকের মতো গুরুতর সমস্যা। প্রশ্ন হল - কেন?

    বসে থাকলেই থমকে যায় রক্তপ্রবাহ

    বিশেষজ্ঞদের মতে, দীর্ঘক্ষণ একই ভঙ্গিতে বসে থাকলে শরীরে রক্ত চলাচলের স্বাভাবিক গতি কমে যায়। পায়ে রক্ত জমে থাকে, হৃৎপিণ্ডের দিকে রক্ত সঞ্চালন বাধাপ্রাপ্ত হয়। এর ফলে হৃদয়ের ওপর চাপ বাড়ে। একে বলে স্টেসিস- যা দীর্ঘমেয়াদে হার্ট ফেইলিওরের সম্ভাবনা তৈরি করতে পারে।

    ইনসুলিন প্রতিরোধ বাড়ে, বাড়ে কোলেস্টেরল

    একাধিক গবেষণায় প্রমাণিত- যাঁরা দিনে ৮ ঘণ্টার বেশি বসে থাকেন, তাঁদের মধ্যে টাইপ-২ ডায়াবেটিস এবং উচ্চ কোলেস্টেরলের ঝুঁকি প্রায় দ্বিগুণ। শরীরের পেশিগুলি ব্যবহৃত না হলে ইনসুলিনের কার্যকারিতা কমে যায়। রক্তে শর্করার মাত্রা অনিয়ন্ত্রিত হয়ে পড়ে। সেই সঙ্গে বাড়তে থাকে ‘ব্যাড কোলেস্টেরল’ অর্থাৎ এলডিএল, যা সরাসরি ধমনী ব্লক করে হৃদরোগের সম্ভাবনা তৈরি করে।

    মেদ জমে পেটে

    বসে থাকার সময় ক্যালোরি খুবই কম পোড়ে। ফলে একটু বাড়তি খাবার খেলেই তা জমে যায়। বিশেষ করে পেটের চারপাশে জমা হয় মেদ। এই অ্যাবডোমিনাল ফ্যাট হল ভিসেরাল ফ্যাট, যা হৃদপিণ্ডের চারপাশে চাপ তৈরি করে। বহু গবেষণায় বলা হয়েছে, পেটের মেদ হৃদরোগের অন্যতম প্রধান কারণ।

    মানসিক চাপ এবং উদ্বেগ

    দীর্ঘক্ষণ কাজ, একটানা মনোযোগ এবং সীমিত চলাফেরা মানেই মানসিক ক্লান্তি। মন চঞ্চল, মাথা ভারী, কাজের চাপের মধ্যে দিয়ে করটিসল হরমোনের মাত্রা বাড়তে থাকে। এই হরমোন দীর্ঘমেয়াদে হৃদস্পন্দন বাড়ায়, রক্তচাপ বাড়ায় এবং হৃদপিণ্ডের ছন্দ বিঘ্নিত করে।

    কী করবেন?

    প্রতি ৩০ মিনিট অন্তর উঠে পড়ুন - সামান্য হাঁটাহাঁটি, জল খাওয়া, জানলার ধারে গিয়ে দাঁড়ানো - সবই কাজে দেবে।

    ডেস্কের পাশে স্ট্রেচিং রুটিন রাখুন -ঘাড়, পিঠ ও পায়ের হালকা স্ট্রেচ করলে রক্তচলাচল বজায় থাকে।

    বসার ভঙ্গিমা ঠিক রাখুন -সোজা হয়ে বসা, স্ক্রিন চোখের সমান উচ্চতায় রাখা জরুরি।

    দৈনিক অন্তত ৩০ মিনিট হাঁটুন বা ব্যায়াম করুন - এতে হার্ট সক্রিয় থাকে, রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে থাকে।

    মনকে চাপমুক্ত রাখুন - কাজের ফাঁকে ধ্যান, শ্বাসনিয়ন্ত্রণ বা হালকা গান শুনে মন হালকা করুন।

    চেয়ারে বসেই যদি দিনের বড় একটা সময় কেটে যায়, তাহলে সেই চেয়ারই একদিন হতে পারে হৃদয়ের শত্রু। এই অভ্যাস শুধরে না নিলে শরীরের ভিতরে চলবে নীরব ক্ষয়। মনে রাখতে হবে, হৃদরোগ হঠাৎ ধাক্কা মারে ঠিকই - তবে সমস্যা ওঠে দিনের পর দিন চলা অনিয়মে। তাই সতর্ক হন, সচেতন থাকুন, আর মাঝেমধ্যে নিজের জন্য একটু হাঁটুন।

     
  • Link to this news (আজকাল)