• এবার বিজ্ঞান-প্রযুক্তি ও আদালতের ভাষাকে হিন্দি করার কথা বললেন অমিত শাহ!...
    আজকাল | ১৫ সেপ্টেম্বর ২০২৫
  • আজকাল ওয়েবডেস্ক:  কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ রবিবার ৫ম সর্বভারতীয় রাজভাষা সম্মেলনের উদ্বোধনী অধিবেশনে বক্তৃতা দিতে গিয়ে জানান, হিন্দি ও অন্যান্য ভারতীয় ভাষার মধ্যে কোনও সংঘাত নেই। বরং দেশের সব ভাষাকে অমর করার জন্য মানুষকে এগিয়ে আসতে হবে। তিনি জোর দিয়ে বলেন, হিন্দিকে শুধু কথোপকথনের মাধ্যম হিসেবেই নয়, বিজ্ঞান, প্রযুক্তি, বিচারব্যবস্থা এবং পুলিশের ভাষা হিসেবেও প্রতিষ্ঠিত করতে হবে।

    তিনি বলেন হিন্দি 'বনাম' আঞ্চলিক ভাষা করার চেষ্টা হচ্ছে যেটা ঠিক নয় কারণ দুয়ের মধ্যে কোনও সংঘাত নেই। অমিত শাহ বলেন, “হিন্দি এবং অন্য ভারতীয় ভাষার মধ্যে কোনও সংঘাত নেই। দয়ানন্দ সরস্বতী, মহাত্মা গান্ধী, কেএম মুনশি, সরদার বল্লভভাই পটেল সহ অনেক মহান ব্যক্তিত্ব হিন্দিকে গ্রহণ করেছিলেন এবং প্রচার করেছিলেন। গুজরাত তার অন্যতম সেরা উদাহরণ, যেখানে গুজরাতি এবং হিন্দি একসঙ্গে বিকাশ লাভ করেছে।” তিনি আরও বলেন, স্বাধীনতা ও আত্মসম্মানের কথা ভাবলে নিজের ভাষাকে অবহেলা করা যায় না। “যে দেশের ভাষা তার নিজের নয়, সে দেশ কখনও প্রকৃত স্বাধীনতার দাবিদার হতে পারে না।”

    মাতৃভাষার গুরুত্বের ওপর জোর দেন তিনি। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অভিভাবকদের উদ্দেশে আহ্বান জানিয়ে বলেন, সন্তানদের সঙ্গে সবসময় মাতৃভাষায় কথা বলতে হবে। তিনি ব্যাখ্যা করেন, “একটি শিশু তার মাতৃভাষায়ই চিন্তা করে। যখনই শিশুর ওপর অন্য কোনও ভাষা চাপিয়ে দেওয়া হয়, তার মস্তিষ্কের ২৫-৩০ শতাংশ ক্ষমতা কেবল অনুবাদেই নষ্ট হয়।” তিনি দাবি করেন, বহু মনোবিজ্ঞানী ও শিক্ষাবিদও একই মতামত দিয়েছেন। তাই মাতৃভাষা শিক্ষা ও ব্যক্তিত্ব গঠনের ক্ষেত্রে অপরিহার্য।

    প্রযুক্তির সাহায্যে ভাষার প্রসারের কথা বলেন তিনি। অমিত শাহ জানান, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির নেতৃত্বে বিভিন্ন প্রযুক্তির মাধ্যমে স্থানীয় ভাষার বিকাশ ঘটানো হচ্ছে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক ইতিমধ্যেই "ভারতীয় ভাষা অনুবাগ" (Bhartiya Bhasha Anubhag) তৈরি করেছে, যা হিন্দি ও অন্যান্য ভারতীয় ভাষার প্রসারে কাজ করছে। তিনি উদাহরণ হিসেবে জানান, “বহুভাষী অনুবাদ সারথি সফটওয়্যারকে আরও প্রশিক্ষিত করা হচ্ছে। ভবিষ্যতে এ সফটওয়্যারের মাধ্যমে দেশের নাগরিকরা নিজেদের মাতৃভাষায় থেকে থেকেই যোগাযোগ করতে পারবেন।”

    শাহ এদিন "হিন্দি শব্দসিন্ধু" অভিধানের কথাও উল্লেখ করেন। তিনি জানান, এই অভিধান ৫১ হাজার শব্দ দিয়ে শুরু হয়েছিল, বর্তমানে ৭ লক্ষ শব্দ অতিক্রম করেছে। আগামী ২০২৯ সালের মধ্যে এটি বিশ্বের বৃহত্তম অভিধান হয়ে উঠবে। “আমি আশ্বাস দিচ্ছি, ২০২৯ সালের মধ্যেই হিন্দি শব্দসিন্ধু বিশ্বের বৃহত্তম অভিধান হবে। এর মাধ্যমে হিন্দিকে আরও নমনীয় করা হচ্ছে। অনেক পণ্ডিত চান হিন্দি সংস্কৃতসমৃদ্ধ হোক—এতে কারও আপত্তি নেই। তবে ফাঁকা জায়গা ভারতীয় ভাষার শব্দ দিয়ে পূরণ করতে হবে। তবেই হিন্দি সবার কাছে পরিচিত ও প্রাঞ্জল হবে।”

    অমিত শাহ বলেন, সময়ের সঙ্গে ভাষার ব্যবহার ও কাঠামোয় পরিবর্তন আসা প্রয়োজন। “যারা সময়ের সঙ্গে পরিবর্তন আনে না, তারা ইতিহাসে মিলিয়ে যায়। আমাদের ভাষা ইতিহাসও, বর্তমানও, ভবিষ্যৎও। তাই হিন্দিকে নমনীয় ও গণমানুষের উপযোগী করে তুলতেই শব্দসিন্ধুর ব্যবহার অপরিহার্য।”
  • Link to this news (আজকাল)