• ট্রেন তুমি কার? এই নিয়েই মুর্শিদাবাদ স্টেশনে ধুন্ধুমার!
    আজকাল | ১৫ সেপ্টেম্বর ২০২৫
  • শ্রেয়সী পাল, মুর্শিদাবাদ: ভারত স্বাধীন হওয়ার প্রায় ৭৮ বছর পর, অবশেষে শনিবার রেল পথের মাধ্যমে যুক্ত হল উত্তর-পূর্বের ছোট্ট রাজ্য মিজোরামের সঙ্গে কলকাতা। শনিবার প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন করেছেন সাইরাং-কলকাতা এক্সপ্রেস ট্রেনের। সেই ট্রেনটি রবিবার দুপুর  নাগাদ মুর্শিদাবাদ স্টেশনে পৌঁছতেই ঘটে গেল ধুন্ধুমার কাণ্ড! 

    ট্রেন চালানোর কৃতিত্ব কোন রাজনৈতিক দলের? ট্রেনের চালক ও গার্ডকে কারা সংবর্ধনা দেবেন? তা নিয়ে বাকবিতণ্ডা, হাতাহাতি, এমনকি সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়লেন তৃণমূল এবং বিজেপি নেতারা। দু'দলের সংঘর্ষে কমপক্ষে সাত জন আহত হয়েছেন বলে জানা গিয়েছে। সাইরাং- কলকাতা এক্সপ্রেস ট্রেনকে মুর্শিদাবাদ স্টেশনে স্বাগত জানানোর জন্য তৈরি ছিল দু'টি রাজনৈতিক দলই। ফলে উত্তেজনা ছিল। রবিবার সকাল থেকেই স্টেশনে বিপুল সংখ্যায় জিআরপি, আরপিএফ এবং মুর্শিদাবাদ থানার পুলিশ বাহিনী মোতায়েন ছিল। কিন্তু, তা সত্ত্বেও দুই রাজনৈতিক দলের সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষ- হাতাহাতি এড়ানো সম্ভব হয়নি। 

    অভিযোগ উঠেছে বিজেপি নেতাদেরকে ট্রেনের ইঞ্জিনে চালক এবং সহকারী চালকের কাছাকাছি যেতে দেয়নি তৃণমূলের কর্মী সমর্থকরা। এমনকি মুর্শিদাবাদের বিজেপি বিধায়ক গৌরিশঙ্কর ঘোষকে ধাক্কাধাক্কি করার অভিযোগ উঠেছে কিছু তৃণমূল কর্মীর বিরুদ্ধে। অন্যদিকে এই ট্রেন চালুর কৃতিত্ব মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জিকে দিয়ে বিজেপির বিরুদ্ধে 'গাজোয়ারি' করার পাল্টা অভিযোগ এনেছেন তৃণমূল নেতারা। 

    রেল সূত্র জানা গিয়েছে, কলকাতা স্টেশন থেকে এই এক্সপ্রেস ট্রেনটি সপ্তাহে তিন দিন দুপুর ১২.২৫ মিনিটে যাত্রা শুরু করে পরের দিন সন্ধা ৭.৪৫ মিনিট নাগাদ মিজোরামের সাইরাং স্টেশনে পৌঁছাবে। প্রাথমিক পর্যায়ে ঠিক হয়েছে কলকাতা থেকে ট্রেনটি শনিবার ,মঙ্গলবার এবং বুধবার যাত্রা করবে। উল্টো দিকে সাইরাং স্টেশন থেকে কলকাতার দিকে ট্রেনটি সোমবার ,বৃহস্পতিবার এবং শুক্রবার যাত্রা করবে। শনিবার সকাল ১০টা নাগাদ উদ্বোধনী ট্রেনটি মিজেরামের বৈরাবি ষ্টেশন থেকে যাত্রা শুরু করে কলকাতা স্টেশনের উদ্দেশ্যে। ট্রেনটি নশিপুর ব্রিজ পার হয়ে দুপুর দেড়টা নাগাদ মুর্শিদাবাদ স্টেশনে এসে পৌঁছায়। তারপরেই ঘটে যায় ধন্ধুমার কাণ্ড। 

    সূত্রের খবর, রেলের তরফ থেকে ট্রেনটিকে মুর্শিদাবাদ জেলায় স্বাগত জানানোর জন্য কোনও অনুষ্ঠানের আয়োজন না করা হলেও- মুর্শিদাবাদ এবং বহরমপুর স্টেশনে বিজেপির দুই বিধায়ক তাঁদের কর্মী সমর্থকদেরকে নিয়ে ট্রেনটিকে স্বাগত জানানোর জন্য প্রস্তুত ছিলেন। 

    সকাল থেকেই দুই স্টেশন চত্বরে বিজেপি বিধায়কের সমর্থকরা বড় বড় পোস্টারও লাগিয়েছিলেন। কিন্তু বেলা গড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে মুর্শিদাবাদ পুরসভার চেয়ারম্যান ইন্দ্রজিত ধর এবং মুর্শিদাবাদ লোকসভা কেন্দ্রের সাংসদ আবু তাহের খান তাঁদের বিপুল সংখ্যক কর্মী সমর্থকদেরকে নিয়ে মুর্শিদাবাদ স্টেশনে পৌঁছে যান ট্রেনটিকে স্বাগত জানাতে।। 

    মুর্শিদাবাদের বিজেপি বিধায়ক গৌরিশঙ্কর ঘোষ বলেন, "সাইরাং- কলকাতা এক্সপ্রেস বিশেষ ট্রেনটি মুর্শিদাবাদ স্টেশনে ঢোকার পরই  তৃণমূলের গুন্ডারা আমাদেরকে ধাক্কাধাক্কি করতে শুরু করে। আমরা ট্রেনের ইঞ্জিনের কাছে গিয়ে ড্রাইভারকে সংবর্ধনা দেওয়ার চেষ্টা করলেও আমাদেরকে সেখানে যেতে দেওয়া হয়নি। এলাকার তৃণমূল সাংসদ নিজেই সবুজ পতাকা নাড়তে থাকেন। তাঁরাই পুষ্পস্তবক. মিষ্টি ট্রেনের চালকের হাতে তুলে দেন। বিজেপির কর্মী সমর্থকদেরকে তৃণমূলের গুন্ডারা প্রচন্ড মারধর করেছে। আর এই গোটা কাজে নেতৃত্ব দিয়েছেন মুর্শিদাবাদ পুরসভার চেয়ারম্যান এবং মুর্শিদাবাদ কেন্দ্রের সাংসদ।"

    বিজেপি বিধায়ক আরও অভিযোগ করেন, "তৃণমূলের হাজার হাজার গুন্ডা টিকিট না কেটে স্টেশনে ঢুকে পড়েছিল এবং আরপিএফ জওয়ানদের সামনেই আমাদের লোকজনকে মারধর করে। এসব ঘটতে দেখেও আরপিএফ চুপ করে দাঁড়িয়েছিল। আমরা গোটা বিষয়টি রেল দপ্তরকে জানাতে চলেছি।"

    সূত্রের খবর, বিজেপি এবং তৃণমূল নেতাদের মধ্যে যখন স্টেশন চত্বরে ধুন্ধুমার চলছিল সেই সময়ের মধ্যে এক্সপ্রেস ট্রেনটির ওই স্টেশনে দাঁড়ানোর নির্দিষ্ট সময় পার হয়ে যাওয়ায় চালক হুইসেল বাজিয়ে ট্রেনটিকে নিয়ে গন্তব্যের উদ্দেশ্যে রওনা হয়ে যান। এর ফলে মুর্শিদাবাদ স্টেশনে বিজেপির সমর্থকরা ট্রেনের ড্রাইভার বা গার্ডকে সংবর্ধনা দিতে পারেননি। তবে বহরমপুর স্টেশনে ট্রেনটি ঢোকার পর বিজেপি বিধায়ক সুব্রত মৈত্রর তরফ থেকে ট্রেনের ইঞ্জিনে ফুল মালা পরিয়ে, নারকেল ফাটিয়ে, ধূপ ধুনো দেখিয়ে সেটিকে স্বাগত জানানো হয়। বহরমপুর স্টেশনে কোনও বিশৃঙ্খলার ঘটনা ঘটেনি। 

    অন্যদিকে বিজেপির তোলা সমস্ত অভিযোগ উড়িয়ে দিয়ে মুর্শিদাবাদ লোকসভা কেন্দ্রের তৃণমূল সাংসদ আবু তাহের খান বলেন, "মুর্শিদাবাদ স্টেশনে কোনও ঘটনাই ঘটেনি। বিজেপি গোটা বিষয়টিকে অতিরঞ্জিত করছে।" তিনি দাবি করেন, "ট্রেনটি স্টেশনে ঢোকার আগে বিজেপি বিধায়কের সঙ্গে আমার সৌজন্যমূলক কথা হয়েছে। বিশেষ ট্রেনটি মুর্শিদাবাদ স্টেশনে প্রবেশের পর আমরা যেখানে দাঁড়িয়ে ছিলাম সেখানে এসে ইঞ্জিনটি এসে থামে। সেই সময় স্টেশনে আমাদের প্রচুর সমর্থক থাকায় বিজেপির কর্মী সমর্থকরা ধাক্কাধাক্কি করে সময়মতো সেখানে এসে পৌঁছাতে পারেননি।" তৃণমূল সংসদ আরও বলেন,' "আমার এলাকা দিয়ে নতুন একটি ট্রেন যাত্রা করছে। তাই সৌজন্যের খাতিরে ট্রেনের চালক এবং গার্ডকে ফুল মিষ্টি দেওয়ার জন্য স্টেশনে এসেছিলাম। ট্রেনের আধিকারিকেরাই আমাকে সবুজ পতাকা নাড়তে বলেছিলেন বলে আমি তা দেখিয়েছি। আমাদের দলের কোনও কর্মী সমর্থক বিজেপির কোনও কর্মী বা নেতাকে মারধর করেনি। এই অভিযোগ সম্পূর্ণ মিথ্যা।"
  • Link to this news (আজকাল)