• অনন্য সম্প্রীতি, নিয়ামতপুরে দেবী দুর্গার সঙ্গেই পুজো হয় পিরের দরগাতেও
    এই সময় | ১৪ সেপ্টেম্বর ২০২৫
  • সুশান্ত বণিক, আসানসোল

    উৎসবে কাঁটা হতে পারে না ধর্ম। একশো বছরেরও বেশি সময় ধরে সেই বাতাই দিয়ে চলেছে নিয়ামতপুরের দেবীমন্দির সর্বজনীন দুর্গোৎসব। চারদিন দেবীর আরাধনার সঙ্গে ফুল, বেলপাতা, নৈবেদ্য সহকারে পুজো পড়ে মন্দির চত্বরে থাকা শামসুল সুলতান পিরের দরগায়। সম্প্রীতির হৃদকমলে এ ভাবেই উৎসবের কয়েকটি দিন আক্ষরিক অর্থে এই প্রাঙ্গন হয়ে ওঠে মিলনমেলায়।

    সন-তারিখ কেউ মনে রাখেননি। জানেন না পুজোর উদ্যোক্তারাও। তবে অনুমান, প্রায় দেড়শো বছর আগে নিয়ামতপুরের ওই দেবী মন্দির প্রতিষ্ঠা করেছিলেন প্রভাসন্ত ব্রহ্মচারী। মন্দির চত্বরেই ঠাঁই দিয়েছিলেন শামসুল সুলতান পির-কে। যে যার নিজের মতো করে ধর্মীয় রীতি মেনে চলেছে। শামসুলের মৃত্যুর পরে সেই সাধনক্ষেত্রকে সযত্নে মন্দির চত্বরে রেখে দেন প্রভাসন্ত। তাঁর মৃত্যুর পরেও ছবি বদলায়নি। স্থানীয়রা মন্দিরে দুর্গা ও পিরের দরগার পুজো দিয়ে আসছেন।

    মন্দির কমিটির কোষাধ্যক্ষ লাল বাহাদুর বর্মন জানাচ্ছেন, শতাধিক বছর ধরে চলা এই পরম্পরায় ছেদ পড়েনি। তিনি বলেন, 'কথিত আছে, পিরবাবার এই দরগা বহুবার সরিয়ে নেবার চেষ্টা হয়েছে। কিন্তু প্রত্যেকবার কোনও না কোনও অঘটন ঘটেছে। ফলে সেই চেষ্টা কেউ আর করেন না।' মন্দির কমিটির সম্পাদক সঞ্জয় দাস জানালেন, সনাতনী নিয়ম মেনে দুর্গার আরাধনা হয়। একইসঙ্গে পিরের দরগায় নৈবেদ্য সাজিয়ে পুজো হয়। প্রচুর ভক্ত সমাগম হয়।

    কুলটির নিয়ামতপুরে জিটি রোডের পাশেই দেবীমন্দির। এক দিকে মসজিদ পাড়া, অন্য দিকে মাদ্রাসা পাড়া। রয়েছে নিচু মহল্লা। ষষ্ঠী থেকে দশমীর দুপুর পর্যন্ত লক্ষাধিক মানুষের ভিড় জমে। ব্যস্ত জিটি রোডে যানচলাচল নিয়ন্ত্রণের সঙ্গে সুষ্ঠু ভাবে দর্শনার্থীদের পুজো দেখার সুযোগ করে দিতে হিন্দু যুবকদের সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে করেন এলাকার মুসলিম যুবকরাও। রফত পারভেজ বলছিলেন, 'এই উৎসবে নানা প্রান্তের মানুষ আসেন। তাঁদের যাতে কোনও সমস্যা না-হয়, সেটা দেখার দায়িত্ব আমাদের।'

    দশমীর সন্ধেয় প্রতিমার নিরঞ্জন শোভাযাত্রাতেও পা মেলান স্থানীয় সব ধরেমের মানুষ। প্রতিমা বিসর্জনের পরে মিষ্টিমুখ। মন্দির কমিটি ও পূজো আয়োজনের সঙ্গে যুক্ত বিশিষ্টজন ও প্রবীণ ব্যক্তিদের মাথায় পাগড়ি পরিয়ে সম্মান জানান স্থানীয় মুসলিম সম্প্রদায়ের মানুষজন। এ প্রসঙ্গে এলাকার বাসিন্দা ও পুরসভার প্রাক্তন মেয়র পারিষদ মীর হাসিম বলেন, 'বছরের পর বছর ধরে এ ভাবেই দু'ধর্মের মানুষ মিলন উৎসবে মাতেন। আমরা গর্বিত।'
  • Link to this news (এই সময়)