• নেপালে টালমাটাল পরিস্থিতি, উত্তরবঙ্গের ৬ জেলাকে নিয়ে বৈঠকে বসছে পরিবহন দপ্তর
    দৈনিক স্টেটসম্যান | ১৫ সেপ্টেম্বর ২০২৫
  • নেপালে রাজনৈতিক অস্থিরতার আবহে পশ্চিমবঙ্গ সরকার দ্রুত পদক্ষেপ করতে চলেছে। প্রতিবেশী রাষ্ট্রের অভ্যন্তরীণ পরিস্থিতির পরিবর্তন যে ভারতের সীমান্তবর্তী অঞ্চলে প্রভাব ফেলতে পারে, সেই বিষয়ে আগেই সতর্ক প্রশাসন। এরই প্রেক্ষিতে উত্তরবঙ্গের সঙ্গে নেপালের সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থা ও যাত্রী-পরিবহন পরিস্থিতি খতিয়ে দেখতে জরুরি বৈঠকে বসছে রাজ্য পরিবহন দপ্তর।

    সম্প্রতি নেপালে ছাত্র-যুব আন্দোলনের জেরে কেপি শর্মা ওলি সরকারের পতন ঘটে। অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেছেন সুশীলা কারকি। শুক্রবার রাতে শপথগ্রহণের মাধ্যমে নতুন সরকারের যাত্রা শুরু হলেও, সেই দেশের পরিস্থিতি এখনও পুরোপুরি স্থিতিশীল হয়নি বলে মনে করছে ভারত সরকার। নেপালের রাজনৈতিক পরিস্থিতির প্রত্যক্ষ প্রভাব যাতে ভারতের সীমান্তবর্তী এলাকায় না পড়ে, সেদিকে কড়া নজর রাখছে কেন্দ্র ও রাজ্য উভয়ই।

    এই পরিস্থিতিতে দ্রুত একটি ভার্চুয়াল বৈঠকের আয়োজন করেছে পশ্চিমবঙ্গের পরিবহন দপ্তর। বৈঠকে উপস্থিত থাকবেন রাজ্যের পরিবহন মন্ত্রী স্নেহাশিস চক্রবর্তী, পরিবহন প্রতিমন্ত্রী দিলীপ মণ্ডল, পরিবহন সচিব সৌমিত্র মোহন সহ পরিবহন দপ্তরের শীর্ষ আধিকারিকেরা। কলকাতা থেকে ভার্চুয়ালি যুক্ত হবেন তাঁরা। উত্তরবঙ্গের ছয় জেলা কোচবিহার, আলিপুরদুয়ার, জলপাইগুড়ি, দার্জিলিং, কালিম্পং ও শিলিগুড়ির পরিবহন আধিকারিকদের এই বৈঠকে উপস্থিত থাকা বাধ্যতামূলক করা হয়েছে।

    মঙ্গলবার দুপুর ৩টে থেকে বৈঠক শুরু হবে ভার্চুয়াল মাধ্যমে। সংশ্লিষ্ট জেলার আধিকারিকদের কাছ থেকে নেপালের সঙ্গে সরাসরি যুক্ত সড়কপথে চলাচল, পর্যটক ও পণ্য পরিবহন পরিস্থিতি, নিরাপত্তা ব্যবস্থা এবং বিকল্প ব্যবস্থা সম্পর্কে বিশদে জানতে চাওয়া হবে। উল্লেখ্য, প্রতিদিন প্রচুর পর্যটক উত্তরবঙ্গ থেকে নেপালে যাতায়াত করেন। পাশাপাশি, ব্যবসায়িক কারণেও পণ্যবাহী গাড়ির চলাচল হয় দুই দেশের মধ্যে।

    চলতি সপ্তাহেই নেপালে হঠাৎ বিক্ষোভ শুরু হওয়ায় বিপাকে পড়তে হয়েছিল নেপালে থাকা ভারতীয় পর্যটকদের। সেই অভিজ্ঞতা থেকেই কোনও ঝুঁকি নিতে নারাজ পশ্চিমবঙ্গ সরকার। গত সপ্তাহে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় শিলিগুড়ি সফরে গিয়ে প্রশাসনিক আধিকারিকদের স্পষ্ট নির্দেশ দেন, নেপাল পরিস্থিতি বিবেচনা করে প্রতিটি সম্ভাব্য বিষয় সতর্কতার সঙ্গে পর্যালোচনা করতে হবে। তাঁর নির্দেশ মেনেই পরিবহন দপ্তর এই জরুরি বৈঠকের আয়োজন করেছে বলে জানা গিয়েছে।

    এদিকে, প্রতিবেশী রাষ্ট্রের রাজনৈতিক পালাবদলকে ঘিরে কেন্দ্রও তৎপর। শনিবার মণিপুর সফরে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী বলেন, ‘হিমালয়ের কোলে অবস্থিত নেপাল আমাদের ঘনিষ্ঠ বন্ধু। দু’দেশের ইতিহাস, সংস্কৃতি ও বিশ্বাস একসূত্রে গাঁথা। সুশীলা কারকিকে নেপালের প্রথম মহিলা প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণের জন্য ১৪০ কোটি ভারতবাসীর পক্ষ থেকে অভিনন্দন জানাই। আমি বিশ্বাস করি, তাঁর নেতৃত্বে নেপালে শান্তি ও স্থিতিশীলতা ফিরে আসবে।’

    সব মিলিয়ে, একদিকে নেপালে নতুন সরকার দায়িত্ব নিয়েছে, অন্যদিকে পশ্চিমবঙ্গ সরকার সম্ভাব্য নিরাপত্তাজনিত উদ্বেগ এড়াতে আগেভাগেই উদ্যোগী হয়েছে। উত্তরবঙ্গ ও নেপালের মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থার উপর নির্ভরশীল স্থানীয় বাসিন্দা, পর্যটক ও ব্যবসায়ীদের সুরক্ষিত যাতায়াত নিশ্চিত করতেই এই পদক্ষেপ বলে মনে করছে প্রশাসনিক মহল।
  • Link to this news (দৈনিক স্টেটসম্যান)