সোশাল অ্যাক্টিভিস্ট হিসেবে জনপ্রিয়তাই কাল? যাদবপুরে ছাত্রীমৃত্যুতে খুনের অভিযোগ বাবার
প্রতিদিন | ১৫ সেপ্টেম্বর ২০২৫
অর্ণব দাস, বারাকপুর: দুর্ঘটনায় অকস্মাৎ একমাত্র মেয়েকে হারিয়েছেন। অন্তহীন শোকের মাঝেও মৃত্যুর সঠিক কারণ খুঁজে পেতে মরিয়া যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রীর বাবা। তাঁর অভিযোগ, পরিকল্পনামাফিক খুন করা হয়েছে মেয়েকে। এবং কেউ একা নয়, এর সঙ্গে বন্ধুবান্ধব থেকে অধ্যাপক, সকলে জড়িত বলে অভিযোগ তাঁর। তাই সবাইকে তদন্তের আওতায় আনার দাবিতে পুলিশের দ্বারস্থ হতে চলেছেন মৃত অনামিকার বাবা অর্ণব মণ্ডল। মৃত্যুর নেপথ্যে একাধিক কারণ থাকতে পারে বলে মত অর্ণববাবু। মেয়ে ইদানিং বিশ্ববিদ্যালয়ে সমাজকর্মী হিসেবে বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠছিল। তাই ঈর্ষাবশত কেউ খুন করে থাকতে পারে বলে সংশয় প্রকাশ করেছেন মৃত ছাত্রীর বাবা।
বৃহস্পতিবার রাতে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের ঝিল থেকে উদ্ধার হয়েছিল তৃতীয় বর্ষের ছাত্রী অনামিকা মণ্ডলের দেহ। রবিবার বেলঘরিয়ার নিমতার বাড়িতে তাঁর তিনদিনের শ্রাদ্ধানুষ্ঠান ছিল। সেই কাজ শেষ করে চোখের জল ধরে রাখতে পারলেন না বাবা অর্ণব মণ্ডল। তাঁর অভিযোগ, মেয়েকে নেশার কিছু খাইয়ে জলে ধাক্কা দিয়ে ফেলা হয়েছে। একা কেউ এমনটা করেছে বলে মনে হয় না। আগেও তিনি জানিয়েছিলেন, মেয়ে নিজে থেকে জলে ঝাঁপ দেবে না। অর্ণববাবুর সংযোজন, “মেয়ে সাঁতার জানত না। যাঁদের সঙ্গে কথা বলত, মিশত, বন্ধু ছিল, সেদিনের সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে যারা ছিল, যেই প্রফেসর মেয়ের ব্যাগ আমাকে দিয়েছিল, সকলকে পুলিশের জিজ্ঞাসা করতে হবে। মেয়ে ব্যাগ সবসময় নিজের কাছে রাখত। আমাদেরও হাত দিতে দেয় না। তাই সেই প্রফেসর ব্যাগ কীভাবে পেল অবশ্যই জানা দরকার। এক বন্ধু নাকি সেই ব্যাগ দিয়েছে। সেই বন্ধু কে?”
যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন সামাজিক কার্যকলাপের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন অনামিকা। একথা জানত তাঁর পরিবার। খুব অল্প সময়ই সোশ্যাল অ্যাক্টিভিস্ট হিসেবে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছিল মেয়ে। তা উল্লেখ করে মৃত ছাত্রীর বাবা বলেন, “সেটাও একটা আক্রোশের কারণ হতে পারে। আবার কেউ হয়ত কোনও প্রস্তাব দিয়েছিল, মেয়ে সহমত না হওয়ায় অন্ধকারে নিয়ে গিয়ে বা ডেকে এনে জলে ধাক্কা দিতে পারে। এর জন্য শেষ কয়েকঘন্টা মেয়ে কার কার সঙ্গে ফোনে কথা বলেছিল, পুলিশ খতিয়ে দেখলেই অনেকটা পরিষ্কার হয়ে যাবে।”
অর্ণববাবু আরও জানান, “ময়নাতদন্তের রিপোর্টে যদি দেখা যায়, নেশার কিছু মিলেছে, তাহলে বলব, জোর করে বা কিছুতে মিশিয়ে মেয়েকে খাওয়ানো হয়েছে। মেয়ের বন্ধুরা অবশ্যই এটা জানবে।” একইসঙ্গে পুলিশ প্রশাসনের উপর সম্পূর্ণ আস্থা রেখে তাঁর বক্তব্য, “পুলিশ, স্থানীয় কাউন্সিলর নিয়মিত আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছে, সহযোগিতা করছে। তাই অবশ্যই কয়েকদিনের মধ্যে পুলিশের কাছে অভিযোগ জানাব। সোমবার থেকেই প্রক্রিয়া শুরু করব। পুলিশ কমিশনারের সঙ্গে দেখা করব। প্রয়োজনে মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গেও সাক্ষাতের চেষ্টা করব।”