বালুরঘাটে জুয়া চক্রের রমরমা, শিক্ষকের বাড়ি থেকে উদ্ধার কোটি টাকা!
প্রতিদিন | ১৫ সেপ্টেম্বর ২০২৫
রাজা দাস, বালুরঘাট: অবৈধ লোটো ও অনলাইন জুয়া চক্রের অন্যতম ‘মাথা’ পেশায় এক শিক্ষক এবং তাঁর সহযোগীকে গ্রেপ্তার করলো গঙ্গারামপুর থানার পুলিশ। গঙ্গারামপুরের বাসিন্দা ধৃত ওই শিক্ষকের নাম অপূর্ব সরকার। বিজ্ঞান বিভাগের ওই শিক্ষক ২০১১ সাল থেকে নয়াবাজার উচ্চ বিদ্যালয়ে কর্মরত। পাশাপাশি, গ্রেপ্তার হওয়া আর এক ব্যক্তি কুণাল দাসও গঙ্গারামপুরের বাসিন্দা। জানা গিয়েছে, রবিবার বিকেলে ধৃত অপূর্বের শ্বশুর বাড়িতে হানা দিয়ে বিপুল টাকা উদ্ধার করে পুলিশ। টাকার মেশিন এনে নোট গণনা চালাচ্ছে পুলিশ। ফলে উদ্ধার হওয়া টাকার পরিমাণ ঠিক কত তা স্পষ্ট নয়। সূত্রের খবর, প্রায় এক কোটি টাকার হদিশ অপূর্বের শ্বশুর বাড়িতে মিলেছে।
গঙ্গারামপুর থানার পুলিশ সূত্রে খবর, গত ২৭ আগস্ট গঙ্গারামপুরে অবৈধ লোটো ও অনলাইন লটারির বিরুদ্ধে অভিযান চালায় পুলিশ। সে সময় পিন্টু ঘোষ নামে মূল পান্ডা গ্রেপ্তার হয় পুলিশের হাতে। তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদ করে উঠে আসে শিক্ষক অপূর্ব সরকারের নাম। কিন্তু ঘটনার পর থেকেই ফেরার ছিল অপূর্ব। অবশেষে শনিবার গ্যাংটক থেকে অপূর্ব ও তাঁর সঙ্গী কুণালকে গ্রেপ্তার করে গঙ্গারামপুর থানার পুলিশ। এরপরেই আজ রবিবার ধৃত দুজনকে বুনিয়াদপুরে অবস্থিত গঙ্গারামপুর মহকুমা আদালতে তোলা হয়। বিচারক পাঁচ দিনের পুলিশ হেফাজত মঞ্জুর করেছেন ধৃতদের।
এদিকে অপূর্বকে জিজ্ঞাসাবাদ করে রবিবার সন্ধ্যায় বালুরঘাটে তাঁর শ্বশুরবাড়িতে হানা দেয় গঙ্গারামপুর ও বালুরঘাট থানার পুলিশ। গঙ্গারামপুর মহকুমা পুলিশ আধিকারিক দীপাঞ্জন ভট্টাচার্যর নেতৃত্বে চলে তল্লাশি। আর সেই তল্লাশি চলাকালীন সেখানে শোবার ঘরে তল্লাশি চালিয়ে ৭ লক্ষ টাকা উদ্ধার হয়। সেই সঙ্গে ঠাকুর ঘরে একটি ট্যাঙ্কের হদিস পায় পুলিশ। যার মধ্যে কোটি টাকার রয়েছে বলেই মনে করছে পুলিশের দল। খবর লেখা পর্যন্ত অপূর্বর শ্বশুর বাড়িতে তল্লাশি চালাচ্ছে পুলিশ। চলছে উদ্ধার হওয়া টাকাও।
গঙ্গারামপুর মহকুমা পুলিশ আধিকারিক দীপাঞ্জন ভট্টাচার্য বলেন, ”এর আগেই অবৈধ লটারি কারবারে একজনকে গ্রেপ্তার করা হয়। তার কাছ থেকেই অপূর্ব এবং কুণালের নাম জানা যায়। বিপুল পরিমাণ টাকাও উদ্ধার হয়েছে।” তবে এখনও ঘটনার তল্লাশি চলছে বলেই পুলিশ সূত্রে খবর। আর তা সম্পূর্ণ না হওয়া পর্যন্ত এখনই কিছু বলতে পারছেন না তদন্তকারীরা।
অন্যদিকে নয়াবাজার উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোজাম্মেল হোসেন জানান, ”কোন কিছু না জানিয়েই ২৭ তারিখ থেকে স্কুলে আসা বন্ধ করে দিয়েছেন অপূর্ব সরকার। পরবর্তীতে গঙ্গারামপুর থানার পুলিশ এসে শিক্ষক অপূর্ব সরকার সম্পর্কে খোঁজখবর নিয়ে যান। এরপরই তাঁরা জানতে পারেন কোন ধরনের অবৈধ লটারির সঙ্গে যুক্ত রয়েছেন অপূর্ব সরকার।”
এই প্রসঙ্গে প্রধান শিক্ষক আরও জানান, ”শনিবার পুলিশের তরফে ফোন করে জানানো হয় অপূর্ব সরকার গ্রেপ্তার হয়েছেন। সে কারণে তাঁর যাবতীয় লিভ যাতে মঞ্জুর না করেন স্কুল কর্তৃপক্ষ।” তবে একজন শিক্ষক হয়ে এই ধরনের অবৈধ লটারির সঙ্গে যুক্ত থাকবে তা সত্যিই লজ্জার ব্যাপার বলে মন্তব্য মোজাম্মেল হোসেনের।