সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: স্টোভে সাবুর আঠা জাল দিয়ে ক্যানভাস তৈরি। তারপর রং-তুলি দিয়ে আঁকতেই রূপ নিলেন সপরিবার দেবী দুর্গা। শ্বশুর, স্বামীর পেশাকে ভালোবেসেই পটচিত্র আঁকা শুরু করেছিলেন কৃষ্ণনগরের শিল্পী রেবা পাল। বিরাশি বছর বয়সে, আজও অশক্ত হাতে সেই কাজ করে চলেছেন শিল্পী। এবছর তাঁর এতদিনের সৃষ্টিশীলতাকে সম্মান জানাচ্ছে নিউটাউন সিএ ব্লক সর্বজনীনের অষ্টম বর্ষের পুজো। রেবাদেবীর হাতের ছোঁয়ায় রূপ পাবে তাদের পুজোমণ্ডপ।
শহর থেকে শহরতলিতে থিম পুজোর রমরমা। লক্ষ লক্ষ টাকা বাজেট। এই আবহে হারিয়ে যাচ্ছে গ্রাম বাংলার প্রাচীন ও ঐতিহ্যমণ্ডিত পটচিত্র। ঠিক সেই জায়গাতেই সব পুজো থেকে আলাদা বার্তা বহন করছে নিউটাউনের সিএ ব্লকের পুজো। ‘জীবন্ত দুর্গা’ রেবাদেবীর আঁকা পটচিত্রে সেজে উঠছে তাঁদের পুজোমণ্ডপ। বৃদ্ধা রেবা দেবী নিজে হয়তো আসতে পারছেন না মণ্ডপে। তাঁর সঙ্গে কথা বলে মণ্ডপ সাজাছেন আরেক শিল্পী প্রবীর সাহা।
রেবা দেবীর কৃষ্ণনগরের বাড়ি গিয়ে দেখা গেল, টালির চালের ছোট্ট একটা ঘর। সামনে দাওয়া। তারও সামনে একফালি উঠোন। দাওয়াটাই যেন অশীতিপর বৃদ্ধা শিল্পীর স্টুডিও! যে স্টুডিওর মাটিতে ছড়িয়ে সদ্য ‘প্রাণ’পাওয়া চালচিত্রগুলো। কোনওটার আবার কাঁচা রং। কোনও ছবিতে রং লাগেনি এখনও। রেবা পাল ‘বাবু’ হয়ে বসে, চারদিকে চালিগুলো ছড়িয়ে নিয়ে যেন সংসার পেতে বসেন রোজই। নিয়ম করেই চালচিত্র আঁকেন। চোখে পুরু কাচের চশমা, দৃষ্টি হয়ত খানিক ঝাপসাও। কিন্তু আঁকতে গিয়ে হাত এতটুকু কাঁপে না রেবাদেবীর।
দুর্গাপুজোর প্রস্তুতিতে শিবের গায়ে রং বুলোতে বুলোতে বৃদ্ধা শিল্পী বলতে থাকেন, “সেই ১৬ বছর বয়সে বিয়ে করে এলাম। প্রথম প্রথম ছিলাম স্বামীর হেল্পার। রং এগিয়ে দিতাম। কখনও-বা একটু আধটু রং করতাম। তারপর ধীরে ধীরে কাজটা শিখতে শুরু করলাম। তারপর স্বামী মারা গেলেন। তাও বছর ২০ হয়ে গেল। এখন নিজেই কাজ করি। এই আঁকার সঙ্গে আমার সম্পর্কে ৬০ বছর।” এই পটচিত্র একে তাঁর আয় কত? তা না বলাই ভালো। তবে ৮২ বছর বয়সেও শিল্পের টানে অবলীলায় কাজ করে চলেছেন তিনি। গত ৬০ বছর ধরে একদিনের জন্যও থামেনি তাঁর হাতের রং-তুলি। সেই শিল্পকলাই এবছর আলো ছড়াবে নিউটাউনের পুজোয়।