• ফুলবাড়ির ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তের কালিঙ্গিনীর পুজো যেন সম্প্রীতির মঞ্চ
    বর্তমান | ১৫ সেপ্টেম্বর ২০২৫
  • সঞ্জিত সেনগুপ্ত, শিলিগুড়ি: থিমের প্রতিযোগিতা নেই। প্রতিমাতেও চমক থাকে না। তবু গোটা গ্রাম উৎসবে মেতে ওঠে এই পুজোকে ঘিরে। ফুলবাড়িতে ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তের কাছে কালিঙ্গিনী গ্রামে এই পুজো আসলে সম্প্রীতির মঞ্চ। বোধন থেকে বিসর্জন, জাতি ধর্ম নির্বিশেষে গোটা গ্রাম মেতে ওঠে দুর্গাপুজোয়। হিন্দু-মুসলিম সম্প্রদায়ের মানুষরা কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে পুজোর আয়োজন করে। পুজোর তিন দিন গ্রামে কোনও বাড়িতে রান্না হয় না। পুজো প্রাঙ্গণে মায়ের ভোগ প্রসাদ, খিঁচুড়ি, পায়েস, চাটনি সকলে পাত পেড়ে খান। 

    পুজো কমিটির অন্যতম সদস্য দীবর দাস বলেন, এলাকার প্রাক্তন পঞ্চায়েত সদস্য সফিকুল ইসলামের উৎসাহেই কালিঙ্গিনীতে গ্রামের একমাত্র দুর্গাপুজো শুরু হয়। ২০১৬ সাল তিনি আমাদের বলেন পুজো দেখতে বা অঞ্জলি দিতে গ্রামের মানুষকে দূরে যেতে হয়। আমরা যদি গ্রামে পুজো শুরু করি তাহলে তিনি সব রকমভাবে পাশে থাকবেন। তাঁর ভরসাতেই শুরু হয় এই পুজো। হিন্দু - মুসলিম সকলেই অংশ নেয় এই পুজোয়। 

    পুজো কমিটির সদস্য মৃদুল দাস বলেন, এই পুজোর মধ্যদিয়ে আমরা প্রমাণ করি যে আমাদের গ্রামে হিন্দু-মুসলিম কোনও বিরোধ নেই। সকলে মিলে চাঁদা তুলে পুজো করি। গ্রামের মানুষ সারাবছর এই পুজোর দিকে চেয়ে থাকে। সকাল থেকে রাত পর্যন্ত মণ্ডপেই গ্রামের মানুষ ভিড় করে থাকে। দুপুরে পুজোর দিনগুলিতে গ্রামের কারও বাড়িতে রান্না হয় না। পুজো মণ্ডপে সকলে একসঙ্গে মায়ের ভোগ প্রসাদ, খিচুড়ি, পায়েস, চাটনি, লাড্ডু খান। 

    ফুলবাড়ি মোড় থেকে ভারত-বাংলাদেশ সীমান্ত পথ ধরে কিছুটা এগিয়ে গেলেই রাস্তার ধারে কালিঙ্গিনী গ্রাম। খোলা মাঠের মাঝখানে এই সাধারণ গ্রামীণ পুজোর আয়োজন গত ১০ বছর ধরে হয়ে আসছে। সাধারণ প্যান্ডেল, তাই একটু পরেই মণ্ডপ তৈরির কাজ শুরু হয়। এবার বৃষ্টি থাকায় এখনও প্যান্ডেল তৈরির কাজ শুরু হয়নি বলে জানান দীবর দাস। তিনি বলেন, আমরা এখন চাঁদা তোলা নিয়ে ব্যস্ত। প্যান্ডেল দেরিতে শুরু হলেও  সময়মতো হয়ে যায়। পুজোকে ঘিরে গ্রামের মানুষের উৎসবে মেতে ওঠার অন্যান্য দিকগুলি গুরুত্বপূর্ণ। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় অনুদান দেওয়ায় সেবামূলক কাজ করার সুযোগ হয়েছে। স্কুলের ছেলেমেয়েদের খাতা, ব্যাগ, দুঃস্থদের বস্ত্রদান করা হয়। গ্রামের ছেলেমেয়েদের নিয়ে প্রতিযোগিতা মূলক নানা ধরনের খেলার আয়োজন করা হয়ে থাকে।

    পুজো কমিটিতে হিন্দুদের সঙ্গে মুসলিমরাও রয়েছেন। রজক আলী বলেন, এখানে আমরা সবাই এক। দুর্গাপুজোকে কেন্দ্র করে গ্রামের সবাই উৎসবে মেতে ওঠে। পুজোর আয়োজনে আমরা মুসলিমরাও সমানভাবে যোগদান করি। সন্ধ্যায় গ্রামের ছেলেমেয়েরা নিজেদের মতো নাচ গান আবৃত্তি ও আরতি প্রতিযোগিতায় মেতে ওঠে পুজো মণ্ডপে। বিসর্জনে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে সকলে অংশগ্রহণ করেন। 
  • Link to this news (বর্তমান)