• পুজোর ভ্রমণে পেটপুজো! ডুয়ার্সে বোরোলি-এলংয়ের লড়াই তুঙ্গে
    বর্তমান | ১৫ সেপ্টেম্বর ২০২৫
  • ব্রতীন দাস , জলপাইগুড়ি: পুজোর ভ্রমণে পেটপুজো! পর্যটকদের মন কাড়তে ডুয়ার্সে এবার বোরোলি বনাম এলংয়ের লড়াই তুঙ্গে। একইসঙ্গে পুজোর দিনগুলিতে পর্যটকদের পাতে ঐতিহ্যবাহী খাবারের বাহারি মেনু তুলে দিতে জোর টক্কর পশ্চিম ডুয়ার্সের সঙ্গে পূর্বের। লাটাগুড়ি, মূর্তিকে কেন্দ্র করে বোরোলির পাশাপাশি, ছ্যাকা, সিদল, লতি-শুটকি, কচু-চিংড়ি শুটকি, কচুবাটা, মোচাঘণ্ট, ঢেঁকিশাকে মাতছে পশ্চিম ডুয়ার্স। অন্যদিকে, মাদারিহাট, চিলাপাতা, রাজাভাতখাওয়াকে কেন্দ্র করে পূর্ব ডুয়ার্সে পুজোর মেনুতে থাকছে সঙ্কোশ, তোর্সা, মুজনাই, রায়ডাকের এলং, কুসুমা, চেপ্টি, মহাশোল মাছের হরেক পদ। সঙ্গে পূর্ব-পশ্চিম ডুয়ার্স, দু’জায়গাতেই পর্যটকদের ঘুরিয়ে দেখাতে থাকছে একাধিক অফবিট ডেস্টিনেশন। তারই ফাঁকে জঙ্গল কিংবা গ্রামের পুজো উপভোগ, জনজাতির সংস্কৃতির সঙ্গে পরিচিত হওয়ার সুযোগ তো থাকছেই। পূর্ব ডুয়ার্সে যখন মাইনাস ১০ ডিগ্রি তাপমাত্রায় মোড়া স্নো ওয়ার্ল্ড কিংবা ৭৩ ফুট উঁচু গ্লাস টাওয়ারের জেল্লা পুজোর ভ্রমণে আকর্ষণ বাড়াচ্ছে, পশ্চিমপ্রান্ত তখন লুপপুল, ক্যানিয়ন, বৌদ্ধ সংস্কৃতি, আদিবাসী মুখোশ মিউজিয়াম, পাহাড়ি নদী ও হাতি-পর্যটন তুলে ধরতে মরিয়া। পুজোয় পূর্ব ডুয়ার্স পর্যটকদের নিয়ে যাবে ‘দত্তক’ নেওয়া রাভা গ্রামে। পশ্চিম দেখাবে হিমালয়ান হিলিং ভিলেজ। চেনাবে গাছ-পাখি। তাদের ইউএসপি ভিলেজ হাইকিং। যে গ্রামের প্রতিটি বাঁকে লেখা জীবনের গল্প! 

    ইস্টার্ন ডুয়ার্স ট্যুরিজম ডেভেলপমেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক বিশ্বজিৎ সাহা বলেন, এবার পুজোয় ডুয়ার্সের নদীয়ালি মাছের বাহারি পদ দিয়ে আমরা পর্যটকদের মেনু সাজাচ্ছি। এলং, কুসুমা, চেপ্টি, মহাশোল সহ বেশকিছু মাছের জিভে জল আনা রেসিপি রাখা হচ্ছে। জলদাপাড়া, কোদালবস্তি, চিলাপাতা, রাজাভাতখাওয়া পর্যটকরা যেখানেই থাকুন না কেন, ওই মাছ পাবেন। সঙ্গে অষ্টমীতে পর্যটকদের বনবস্তি, গ্রামের পুজো ঘুরিয়ে দেখানো হবে। জলদাপাড়া থেকে মাত্র ৫ কিমি দূরে উত্তর খয়েরবাড়িতে একটি রাভা গ্রাম ‘দত্তক’ নিয়েছি আমরা। পর্যটকরা ওই গ্রামটি ঘুরে দেখতে পারবেন। এছাড়াও ক্ষুদ্রতম জনজাতি টোটোদের গ্রাম ঘুরিয়ে দেখাব আমরা। একটি পথ দিয়ে টোটো গ্রামে যাওয়া, ফেরা অন্যপথে। আক্ষরিক অর্থেই রাউন্ড ট্রিপ। 

    পূর্ব ডুয়ার্স যখন পর্যটকদের জন্য পুজোর প্যাকেজ সাজাতে ব্যস্ত, পিছিয়ে নেই পশ্চিমও। লাটাগুড়ি হোটেল ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সম্পাদক দিব্যেন্দু দেব বলেন, আমাদের এখানে এলং মাছ পাওয়া যায় না। আমরা তিস্তার বোরোলি খাইয়েই পর্যটকদের মন জয় করে নেব। ভাজা, ঝাল-ঝোল, চচ্চরি বোরোলির একাধিক মেনু থাকছে। সঙ্গে থাকবে তিস্তার আরও এক সুস্বাদু মাছ দাড়াঙ্গি। 

    অ্যাসোসিয়েশন ফর কনজারভেশন অ্যান্ড ট্যুরিজমের অন্যতম সদস্য তম্বিষ্ঠা রক্ষিত বলেন, পুজোয় পশ্চিম ডুয়ার্সে বিশেষ করে লাটাগুড়িতে বেড়াতে আসা পর্যটকদের জন্য আমরা ঢেঁকিশাক, মোচাঘণ্ট, কচুর লতি দিয়ে শুটকি, কচু-চিংড়ি শুটকি থেকে কচুবাটা, বোরোলির মতো মেনু রাখছি। হোম স্টেগুলিতে পর্যটকরা চাইলে ছ্যাকা, সিদলের মতো আঞ্চলিক খাবার পরখ করে দেখতে পারেন। শুটকির সঙ্গে কচুর ডগা দিয়ে তৈরি হয় সিদল। যা রাভা ও রাজবংশীদের অন্যতম সুস্বাদু খাবার। সিদলের সঙ্গে কচুপাতা কিংবা সজনে পাতা দিয়ে তৈরি হয় ছ্যাকা। চাইলে মিলতে পারে রেশম কিট ভাজা। মেচ সম্প্রদায়ের কাছে অন্যতম সুস্বাদু খাবার এটি। নদী থেকে তুলে আনা জ্যান্ত শামুক খোসা ছাড়িয়ে রান্নার পর তৈরি হয় ‘ঘুঙ্গি’। ভাতের মাড়ের সঙ্গে আতপ চালের গুড়ো ও শুটকি মাছ, সঙ্গে খাবার সোডা, কচি কলাপাতা পোড়া­-এটাও জনজাতিদের পছন্দের। শেষপাতে অবশ্যই থাকছে লাটাগুড়ির পেল্লাই চমচম। ( এলং মাছ। - নিজস্ব চিত্র।)
  • Link to this news (বর্তমান)