নিজস্ব প্রতিনিধি, শিলিগুড়ি: এ যেন ‘ত্র্যহস্পর্শ’! বৃষ্টি, ধস ও ভূমিকম্প। একরাতে উত্তরবঙ্গের ১৯টি জায়গার কোথাও ভারী, কোথাও অতিভারী, আবার কোথাও চরম ভারী বৃষ্টি। যার জেরে পাহাড়ের একাংশ ধসে বিপর্যস্ত। কোথাও রাস্তা, কোথাও সেতু ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। কার্শিয়াংয়ে টয় ট্রেনের লাইনের একাধিক জায়গায় ধস পড়েছে। ফলে রবিবার টয় ট্রেন পরিষেবা বন্ধ থাকে। একাধিক গ্রামে উঠেছে নদীর জল। ফুঁসছে তিস্তা ও জলঢাকা। দুই নদীতে জারি হয়েছে লাল ও হলুদ সংকেত। একইসঙ্গে রবিবার বিকেলে ভূমিকম্পে কেঁপে ওঠে উত্তরবঙ্গ। যার উৎসস্থল ছিল অসমের উদলগুড়ি। রিখটার স্কেলে কম্পনের মাত্রা ছিল ৫.৮। কোনও ক্ষয়ক্ষতির খবর পাওয়া যায়নি। তবে পুজোর মুখে সমগ্র ঘটনায় উত্তরবঙ্গজুড়ে ব্যাপক আতঙ্ক ছড়িয়েছে।
উত্তরকন্যার বিপর্যয় ব্যবস্থাপনা দপ্তরের এক আধিকারিক অবশ্য বলেন, শনিবার রাত থেকে শনিবার বিকেল পর্যন্ত বৃষ্টি, ধস, ভূমিকম্প হলেও বড়ধরনের ক্ষয়ক্ষতি হয়নি। পরিস্থিতির মোকাবিলায় ময়দানে নামা হয়েছে। ইতিমধ্যে ধসে অবরুদ্ধ রাস্তা স্বাভাবিক করা হয়েছে। নদীর পাশাপাশি সমগ্র পরিস্থিতির উপর নজর রাখা হচ্ছে।
মাঝেমধ্যেই হালকা থেকে মাঝারি বৃষ্টি হচ্ছিল। আবহাওয়ার পূর্বভাস অনুসারে শনিবার রাত থেকে রবিবার সকাল পর্যন্ত ফালাকাটায় চরম ভারী বৃষ্টি হয়েছে। বৃষ্টির পরিমাণ ২৩০.৮০ মিলিমিটার। এরবাইরে জলপাইগুড়ি, কোচবিহার, আলিপুরদুয়ার ও দার্জিলিং জেলার ন’টি করে জায়গায় ভারী থেকে অতিভারী বৃষ্টি হয়েছে। এরজেরেই কার্শিয়াং পাহাড়ের ১০টি জায়গা ধসে বিধ্বস্ত হয়েছে। যারমধ্যে সেভকবাজারের কাছে ছয় মাইল, তিনধরিয়ায় ১১০ নম্বর জাতীয় সড়কের ১৭ মাইল, পাঙ্খাবাড়ি রাস্তার কোদুবাড়ি, লাটপাঞ্চার-কালিঝোরার রাস্তা প্রভৃতি উল্লেখযোগ্য। কিছু জায়গায় পাহাড়ের উঁচু অংশ থেকে পাথর, মাটি ধসে রাস্তায় পড়ে। কিছু জায়গায় গাছও উপরে পড়ে। এরজেরে সংশ্লিষ্ট রাস্তাগুলিতে দীর্ঘক্ষণ যানবাহন চলাচল বন্ধ ছিল।
এরবাইরে কার্শিয়াংয়ে টয় ট্রেনের লাইনের একাধিক জায়গায় নেমেছে ধস। এদিন টয় ট্রেন পরিষেবা বন্ধ রাখে দার্জিলিং হিমালয়ান রেলওয়ে। সুকনায় সেনা ছাউনির কাছে লোহার সেতুর একাংশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়। ওই রাস্তা দিয়ে যান চলাচল বন্ধ আছে। কার্শিয়াং শহরে ধসে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে কয়েকটি বাড়িও। দার্জিলিং জেলা প্রশাসন জানিয়েছে, ধস সরিয়ে অধিকাংশ রাস্তায় যান চলাচল স্বাভাবিক করা হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত বাড়ির মালিকদের দেওয়া হয়েছে ত্রিপল। এদিকে, পাহাড় ও সমতলের বৃষ্টির জেরে তিস্তা, জলঢাকা, মহানন্দা সহ বিভিন্ন নদী ফুঁসছে। ইতিমধ্যেই মেখলিগঞ্জে তিস্তা নদীর সংরক্ষিত এলাকায় লাল ও জলপাইগুড়ির দোমোহনিতে অসংরক্ষিত এলাকায় হলুদ সংকেত জারি করেছে সেচদপ্তর। জলপাইগুড়ির ৩১ নম্বর জাতীয় সড়কের কাছে জলঢাকা নদীতে জারি হয়েছে হলুদ সংকেত। এরজেরে কালিম্পং, জলপাইগুড়ি ও মেখলিগঞ্জে নদীর তীরবর্তী গ্রাম ও চাষের জমি প্লাবিত হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। ক্রান্তিতে বৈদ্যডাঙি নদীর জল বৃদ্ধিতে ফের মাস্টারপাড়া, কেরানিপাড়া, বাসুসুবা গ্রাম জলবন্দি। জুরান্টি নদীর জলে মালবাজারে বিডিআর বস্তির কৃষিজমি প্লাবিত। এদিন সকালে শিলিগুড়িতে মহানন্দা নদীর জলও বিপদসীমার কাছে পৌঁছে যায়।