• উরুণ-ডালে পুজো দিয়ে বড়দেবীর ‘গৃহারম্ভ’ দেবীবাড়িতে
    বর্তমান | ১৫ সেপ্টেম্বর ২০২৫
  • সুকান্ত গঙ্গোপাধ্যায় , কোচবিহার: কোচবিহারের ঐতিহ্যবাহী বড়দেবীর পুজো মানে আলাদা কিছু নিয়মকানুন ও রীতির নিষ্ঠাভরে পালন। রবিবার রাজআমলের সেই রীতিই পালিত হল বড়দেবীর গৃহারম্ভ পুজোয়। এটি চতুর্থ ও এবারের মতো শেষ গৃহারম্ভ পুজো। এদিন বড়দেবীর মন্দিরে দীনেন্দ্রনাথ ভট্টাচার্য এই গৃহারম্ভ পুজো করেন। আর আগামী অষ্টমীই হল মহাষ্টমী। 

    কোচবিহারের বড়দেবীর পুজো পাঁচশো বছরেরও বেশি পুরনো বলে পণ্ডিতেরা মনে করেন। বড়দেবীর বর্তমান মন্দিরটি কিন্তু অনেক পরে নির্মাণ করা হয়েছে। এই মন্দির প্রতিষ্ঠার আগে বড়দেবীর পুজোর জন্য ঘর বানানো হতো। বেশকিছু দিন আগে থেকে চলত সেই গৃহ নির্মাণের কাজ। সেই সময় গৃহ নির্মাণের আগে পুজো করা হতো। সেই রীতি পরবর্তীতেও পালন করা হয়ে আসছে। দেবীবাড়ির মন্দিরের ভিতরে বাঁ দিকে উরুণ গাছের ডাল পুঁতে ঘটে এই পুজো করা হয়। এদিকে, মন্দিরের ভিতরে বড়দেবীর প্রতিমা তৈরির কাজ চলছে। সামনের প্রতিপদে ঘট বসবে। 

    কোচবিহারের মদনমোহন মন্দিরের রাজপুরোহিত হীরেন্দ্রনাথ ভট্টাচার্য বলেন, বড়দেবীর পুজো হল দু’মাসের পুজো। এদিন গৃহারম্ভ পুজো হয়েছে। এই নিয়ে চারটি অষ্টমীতে গৃহারম্ভ পুজো হল। আগের অষ্টমীতে মায়ের প্রতিমা নির্মাণের কাজ শুরু হয়েছিল। আগামী অষ্টমীই হল মহাষ্টমী। সামনের প্রতিপদে ঘট বসবে। সেই ঘটে ষষ্ঠী পর্যন্ত মায়ের পুজো হবে। দ্বিতীয়ার দিন মা পূর্ণ সাজে সজ্জিত হবেন। স্বর্ণালঙ্কারে ভূষিতা হবেন। সেই দিন দুয়ারবক্সি কোশাকুশিতে দেবীদর্শন করবেন। 

    বড়দেবীর পুজো মানেই বিরাট আয়োজন। ময়নাকাঠ জোগাড় করা, সেই কাঠের পুজো, ময়নাকাঠকে হাওয়া খাওয়ানো, মায়ের মুখণ্ডল বানানোর জন্য চামটা থেকে মাটি নিয়ে আসা সহ আনুষঙ্গিক বহু নিয়ম উপাচার রয়েছে। পুজোর সময় মহিষ বলি, গুপ্ত পুজো সহ বিভিন্ন ধরনের রীতিনীতি পালন করা হয়ে থাকে। যা অন্যান্য দুর্গাপুজোর থেকে কোচবিহারের মহারাজাদের চালু করা এই পুজোর পার্থক্য গড়ে দেয়। বড়দেবীর রূপ যেমন আলাদা তেমনই পুজোর পদ্ধতিও এখানে অন্য দুর্গাপুজোর থেকে ভিন্ন। পুজোর সময় গোটা কোচবিহার জেলা সহ আশপাশের জেলার বহু ভক্ত দেবীবাড়িতে বড়দেবীর পুজো দেখতে আসেন। দেবত্তোর ট্রাস্ট বোর্ড এই পুজো পরিচালনা করে। কোচবিহার রাজ আমলে শুরু হওয়া প্রাচীন রীতিনীতি মেনেই পুজো হয়ে আসছে এখানে। 

     নিজস্ব চিত্র।
  • Link to this news (বর্তমান)