• নালায় পড়ে মৃত হস্তীশাবক, মাটি চাপা দিয়ে শেষকৃত্য দলের
    বর্তমান | ১৫ সেপ্টেম্বর ২০২৫
  • সংবাদদাতা, আলিপুরদুয়ার ও কুমারগ্রাম: একমাস বয়সি একটি মৃত পুরুষ হস্তীশাবকের দেহ মাটিচাপা দিয়ে চলে গিয়েছে হাতির দল। বক্সা ব্যাঘ্র প্রকল্পের পূর্ব ডিভিশনের উত্তর রায়ডাক রেঞ্জের কার্তিকা চা বাগানের একটি নালায় ঘটনাটি ঘটেছে। রবিবার সকালে স্থানীয়রা মাটিচাপা পড়া অবস্থায় শাবকটিকে দেখতে পেয়ে বনদপ্তরে খবর দেন। পরে নিয়ম অনুসারে ময়নাতদন্তের জন্য বনকর্মীরা এসে মাটি থেকে হস্তীশাবকের দেহটি তুলে নিয়ে যান। 

    কোনও হস্তীশাবক জখম হলে হাতির দল তাকে ফেলে চলে যায়। হাতি সমাজে এটাই দস্তুর। আবার কোনও হস্তীশাবক মারা গেলে মাটিচাপা দিয়ে তার শেষকৃত্য করে চলে যায় হাতির দল। এরকম নজিরও আছে। কার্তিকা চা বাগানের ঘটনাটি তারই উদাহরণ কি না তা নিয়ে প্রাণী বিশেষজ্ঞদের মধ্যে ফের নতুন করে চর্চা শুরু হয়েছে। 

    কার্তিকা চা বাগানের নালায় হস্তীশাবকটির চার পা উপরের দিকে ছিল। মাথাটি ছিল মাটির নীচে। বর্ষায় জায়গাটি কাদা হয়ে গিয়েছিল। চারপাশে প্রচুর হাতির পায়ের ছাপ ছিল। তা থেকেই মনে করা হচ্ছে, হাতির দল শাবকটির শেষকৃত্য সম্পন্ন করে গিয়েছে। প্রখ্যাত হস্তীবিশারদ পার্বতী বড়ুয়া বলেন, শোক বা দায়িত্ববোধে মানুষের মতো হাতিরাও কোনও অংশে কম নয়। কার্তিকা চা বাগানের নালায় হাতির পায়ের একাধিক চিহ্ন, মৃত শাবকটির চার পা উপরে ও মাথা মাটির নীচে থাকায় ফের সেটাই প্রমাণ হল। আমি নিজেই হাতিদের এই কর্তব্যবোধের অসংখ্য প্রমাণের সাক্ষী। এ থেকেই প্রমাণিত হয়, হাতিদেরও সামাজিক দায়বদ্ধতা আছে। 

    হিমালয়ান নেচার অ্যান্ড অ্যাডভেনচার ফাউন্ডেশনের কো-অর্ডিনেটর অনিমেষ বসু বলেন, অনেক সময় হস্তীশাবকরা নালায় পড়ে গেলে মা ও অন্য হাতিরা তাকে শুঁড় দিয়ে টেনে তোলার চেষ্টা করে। মাটি নরম থাকলে তখন শাবকটি আরও নীচে তলিয়ে যায়। কার্তিকা চা বাগানে পড়ে যাওয়া হস্তীশাবকটির ক্ষেত্রেও এরকম হয়েছে কি না সেটা বনদপ্তরই ভালো বলতে পারবে। 

    বক্সা ব্যাঘ্র প্রকল্পের পূর্ব ডিভিশনের উপক্ষেত্র অধিকর্তা দেবাশিস শর্মা বলেন, হাতিরা বন্যপ্রাণী হলেও মানুষের মতো তাদেরও সামাজিক দায়বদ্ধতা আছে। হাতিদের এই দায়বদ্ধতা থেকে মানুষেরও শেখার আছে। রবিবার জঙ্গলে হস্তীশাবকটির ময়নাতদন্ত করা হয়েছে। - নিজস্ব চিত্র।
  • Link to this news (বর্তমান)