• শারদোৎসবে সম্প্রীতির বার্তা ধুলিয়ানে
    বর্তমান | ১৫ সেপ্টেম্বর ২০২৫
  • অভিষেক পাল, ধুলিয়ান:  ছ’মাসেই সব বদল। অশান্তি-হিংসায় তেতে ওঠা থেকে প্রাণহানি—অভিশপ্ত সেই অধ্যায় ভুলে শারদোৎসবে মেতে উঠেছে ধুলিয়ান। উমার আরাধনাকে সামনে রেখে সর্বত্র সম্প্রতির ছবি। ঠিক সেই আগেই মতোই। উৎসব আবহে সবার চাওয়া একটাই, আর যেন হিংসায় দীর্ণ না হয় আমদের প্রিয় ধুলিয়ান শহর। 

    পুজোকে আর বাকি মাত্র ১৪ দিন। হিংসা, তাণ্ডবের অতীত ভুলে মা দুর্গার আবাহনে মেতেছে ধুলিয়ানবাসী। হরেক পোশাকে সেজে উঠেছে দোকানপাট। সম্প্রীতির বার্তা দিচ্ছে সকলেই। গত এপ্রিল মাসে ওয়াকফ আইনের প্রতিবাদে আন্দোলনে নামে একাধিক মুসলিম সংগঠন। সেখান।থেকে অশান্তি ছড়িয়ে পড়ে বলে অভিযোগ। তাণ্ডব চলে সামশেরগঞ্জ ও ধুলিয়ানের বিস্তীর্ণ এলাকায়। ধুলিয়ান বাজারে একের পর দোকানে ব্যাপক ভাঙচুর চালায় দুষ্কৃতীরা। তছনছ করে দেওয়া হয় একাধিক ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান। নতুন বাংলা বছরের ঠিক আগেই এই ঘটনায় ব্যাপক প্রভাব পড়ে সেলের বাজারে। তবে, ছয় মাস যেতে না যেতেই পরিস্থিতি সম্পূর্ণ বদলে গিয়েছে। মানুষজন হিংসার ক্ষত ভুলে নতুন করে সাজিয়ে তুলেছে ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান। বিক্রিও বেশ ভালোই হচ্ছে। সবার মুখে সম্প্রীতির কথা। ওই সময়ে অনভিপ্রেত ঘটনার জন্য উস্কানিকে দায়ি করছেন সকলেই।  

    ধুলিয়ান শহরে কাপড়ের দোকান দিলীপ সাহার। রবিবার তাঁর দোকান খোলার পর থেকে ভালই ভিড় হতে শুরু করে। তিনি বলছিলেন, ‘পুজোর বিক্রি শুরু হয়ে গিয়েছে। ভালোই বাজার হচ্ছে। বর্তমানে এলাকার পরিস্থিতি স্বাভাবিক। পুজোকে এখনও কয়েকটা দিন বাকি। আগামীতে আরও বিক্রি বাড়বে বলে আশা করছি।’ অপরদিকে, ধুলিয়ান ঘোষপাড়ার মিষ্টির দোকান রয়েছে হুমায়ুন মোমিনের। এলাকায় উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়লে দুষ্কৃতীরা তাঁর দোকানেও ভাঙচুর চালায়। দোকান সারিয়ে পুনরায় ব্যবসায়ে মন দিয়েছেন তিনি। সেই স্মৃতি আর মনে করতে চাননা মোমিন সাহেব। তাঁর কথায়, ‘যা হওয়ার হয়ে গিয়েছে। দোকানে এখন ভালোই বিক্রি হচ্ছে। উৎসবের মরশুমে প্রচুর মিষ্টির চাহিদা রয়েছে। বর্তমানে এখানে কোনও সমস্যা নেই। সবকিছুই ঠিকঠাক চলছে। আমরা উভয় সম্প্রদায় সম্প্রীতির সঙ্গে এখানে ব্যবসা করে আসছি। আগামীদিনেও করব। আমাদের মধ্যে কোনও দ্বেষ নেই।’

    ঘটনার পর থেকেই এলাকার জনপ্রতিনিধিরা বিভিন্ন ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানের কর্ণধারদের সঙ্গে বৈঠক করে পরিস্থিতি স্বাভাবিক করার চেষ্টা করেন। দোকান সারিয়ে তুলতে আর্থিক সাহায্যও দেওয়া হয়। জঙ্গিপুরের তৃণমূল সাংসদ খলিলুর রহমান বলেন, ‘বছরের পর বছর ধরে ধুলিয়ানের এবং সামশেরগঞ্জের মানুষ সম্প্রীতির সঙ্গে বসবাস করে আসছেন। একটা ঘটনায় কয়েকটি এলাকায় উত্তেজনা ছড়িয়েছিল। সাময়িক সমস্যা সেটা। সে সব সকলেই ভুলে গিয়েছে। ব্যবসায়ীদের আমরা যে যতটা পেরেছি সবটুকু দিয়ে সাহায্য করে তাঁদের পুনরায় ব্যবসা শুরু করতে উৎসাহ দিয়েছিলাম। ধুলিয়ান বরাবরই সম্প্রীতির শহর। এখন সেই সম্প্রীতি বজায় রেখে সকলে ব্যবসা-বাণিজ্য করছেন। সামনে পুজো। সকলেই পুজোর বাজারে মেতে উঠেছেন। মিলেমিশে পুজো করতে হবে। ব্যবসায়ীরা এখানে সম্প্রীতির সঙ্গে ব্যবসা করছেন।’ 

    জাফরাবাদের বাসিন্দা মিঠু ঘোষ বলেন, ‘ছয় মাস আগের সেই দুর্বিষহ সময়ের কথা আর মনেও আনতে চাই না। ওই সময় কয়েকদিন যা হয়েছে, তাতে যে পুনরায় এভাবে সম্প্রীতির সঙ্গে বসবাস করতে পারব ভাবিনি। সামনেই পুজো। সকলে আবার আগের মতো পুজোর আনন্দে মেতে উঠব।’ 

    হিংসার বিরুদ্ধে জয় ছিনিয়ে এনে পুজো মরশুমের ধুলিয়ান সেই আগের ধুলিয়ান। বড্ড চেনা।  
  • Link to this news (বর্তমান)