নিজস্ব প্রতিনিধি, তমলুক: সোনা দিয়ে বাঁধানো শাঁখা ও পলা খুলে এসএসসি পরীক্ষা কেন্দ্রের ভিতর ঢোকার ফরমান ঘিরে উত্তেজনা ছড়ায় মহিষাদল রাজ কলেজে। রবিবার একাদশ ও দ্বাদশ ক্যাটাগরির এসএসসি পরীক্ষা ছিল। মহিষাদল রাজ কলেজে চেকিংয়ের দায়িত্বে থাকা এজেন্সির কর্মীরা মেটাল ডিটেক্টর দিয়ে চেকিং করার সময় সোনার গয়না থাকায় আপত্তি তোলেন। সোনার চেন, হাতের আংটির পাশাপাশি সোনা বাঁধানো শাঁখা ও পলা খোলার নির্দেশ দেওয়া হয় কুমকুম পুরকাইত নামে এক পরীক্ষার্থীকে। তিনি ওই ঘটনায় প্রচণ্ড ক্ষিপ্ত হন। গেট থেকে বাইরে বেরিয়ে এসে স্বামী রাজেন্দ্রপ্রসাদ জানার হাতে চেন ও আংটি খুলে দেন। কিন্তু, শাঁখা ও পলা খোলার বিরুদ্ধে ক্ষোভ প্রকাশ করেন। এনিয়ে গেটের বাইরে দাঁড়িয়ে থাকা পুলিশ অফিসার ও কর্মীদের কাছেও নালিশ জানান। কিছুক্ষণ পর মহিষাদলের বিডিও বরুণাশিস সরকার ঘটনাস্থলে যান। তিনি এনিয়ে চেকিংয়ের দায়িত্বে থাকা এজেন্সির কর্মীদের সঙ্গেও কথা বলেন।
রবিবার পূর্ব মেদিনীপুর জেলায় মোট ৩১টি পরীক্ষা কেন্দ্রে ১৭ হাজার ১২৪ জন পরীক্ষা দিয়েছেন বলে অফিসার ইনচার্জ এগজামিনেশন দেবদুলাল বিশ্বাস জানিয়েছেন। যদিও নথিভুক্ত পরীক্ষার্থী ছিলেন ১৮ হাজার ১৮৬ জন। তমলুকে ১১টি, পাঁশকুড়ায় তিনটি, হলদিয়ায় পাঁচটি, এগরায় চারটি ও কাঁথিতে আটটি কেন্দ্রে এসএসসি পরীক্ষা হয়। তবে, মহিষাদল রাজ কলেজেই পরীক্ষার্থীদের চেকিং করা নিয়ে ঝামেলা হয়। প্রশাসন ও পুলিসের হস্তক্ষেপে অবশ্য বিষয়টি নিষ্পত্তি হয়।
প্রসঙ্গত, গত ৭ সেপ্টেম্বর মহিষাদল রাজ কলেজে এসএসসি পরীক্ষা দেওয়ার পর সংবাদ মাধ্যমের সামনে পরীক্ষা ব্যবস্থাপনা নিয়ে ক্ষোভ উগরে দেন বিশ্বরূপ দাসঅধিকারী। তিনি মহিষাদলের একটি নামী বেসরকারি স্কুলের শিক্ষকও। বিশ্বরূপবাবু বলেন, ওইদিন মহিষাদল রাজ কলেজের পরীক্ষা কেন্দ্রে মেয়েদের ওড়না বাইরে রেখে পরীক্ষা কেন্দ্রের ভিতর ঢোকানো হয়েছিল। ওড়না জমা রাখার ঘটনা অসভ্যতামি ছাড়া কিছু নয়। পরিচ্ছন্ন জলের বোতল নিয়ে পরীক্ষা কেন্দ্রে ঢোকা যাবে বলে এসএসসি-র নির্দেশিকায় উল্লেখ ছিল। তারপরও অন্তঃসত্ত্বা পরীক্ষার্থীকে স্বচ্ছ জলের বোতল ছাড়াই পরীক্ষা কেন্দ্রে ঢোকানো হয়। হলের ভিতর কোনও সিসি ক্যামেরা ছিল না। দেখাদেখি এবং পরস্পরে মধ্যে আলোচনা করে প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষা হতে দেখেছি।
এনিয়ে মহিষাদল রাজ কলেজের অধ্যক্ষ তথা সেন্টার ইন-চার্জ গৌতম মাইতি বলেন, সর্বভারতীয় নিট পরীক্ষাতেও কোনও ধাতব বস্তু নিয়ে হলে ঢুকতে দেওয়া হয় না। আমার ছেলে পরীক্ষা হলে ঢোকার সময় প্যান্টের স্টিলের হুক মেটাল ডিটেক্টরে শো করছিল। ছেলেকে প্যান্ট বদল করে পাজামা পরে ভিতরে ঢুকতে হয়েছিল। তখনতো কোনও প্রতিবাদ হয়নি। তবে, এসএসসি পরীক্ষা কেন্দ্রে চেকিংয়ের বিষয়টি এজেন্সি দেখছে। সুতরাং এনিয়ে আমাদের কোনও ভূমিকা নেই। কুমকুমদেবী বলেন, হাতের শাঁখা, পলা কিংবা গয়না খুলে পরীক্ষা দেওয়ার কোনও নির্দেশ এসএসসির গাইড লাইনে নেই। তাহলে মহিষাদল রাজ কলেজে চেকিংয়ের নামে এই বাড়াবাড়ি কেন?