ইডি অভিযানের জের, বন্ধ হচ্ছে একের পর খাদান, বালির দাম বাড়ছে হু হু করে, উদ্বেগ
বর্তমান | ১৫ সেপ্টেম্বর ২০২৫
নিজস্ব প্রতিনিধি, তমলুক: বালি কারবারিদের ডেরায় ইডি হানার জেরে পূর্ব ও পশ্চিম মেদিনীপুরে বালির জোগান একেবারে তলানিতে পৌঁছে গিয়েছে। ফলে চাহিদার সঙ্গে জোগানের বিস্তর ফারাক তৈরি হয়েছে। এই অবস্থায় প্রতিদিন মহার্ঘ্য হচ্ছে সুবর্ণরেখা, কংসাবতীর বালি। চাহিদা অনুযায়ী জোগান না থাকায় পুজোর মুখে নির্মাণকাজে ব্যাপক প্রভাব পড়ছে। আবাস উপভোক্তারাও বাড়ি তৈরির কাজে সমস্যায় পড়েছেন। গোপীবল্লভপুর, ঝাড়গ্রাম, মেদিনীপুর থেকে আর বালিভর্তি লরি সেভাবে আসছে না। তাই প্রতিদিন দাম বেড়ে চলেছে।
নন্দকুমার থানার গেটের কাছেই রাজীব হোসেনের ইমারতি সামগ্রীর দোকান রয়েছে। তিনি বালি বিক্রি করেন। শনিবার রাজীব সাহেব বলেন, দু’মাস আগে প্রতি টন বালির দাম ছিল ৮৫০-৯০০টাকা। এখন তা বেড়ে হয়েছে ১২০০-১৩০০টাকা। গত পাঁচ-ছ’দিন বালি পাচ্ছি না। পূর্ব মেদিনীপুরে রাধামণি, নিমতৌড়ি এবং হলদিয়ায় রোজ বালিভর্তি লরি এসে দাঁড়াত। ব্যবসায়ী ও ঠিকাদাররা নিজেদের প্রয়োজন মতো সেই গাড়ি থেকে বালি সংগ্রহ করতেন। আমি গত তিনদিন ধরে রাধামণিতে যাচ্ছি। বালির গাড়ি আসছে না। প্রতিদিন টনপিছু ৫০-১০০টাকা দাম বাড়ছে।
দাসপুরের ইমারতি ব্যবসায়ী শেখ আব্দুল রহমান বলেন, দীর্ঘদিন খাদান বন্ধ ছিল। খাদানের ধারে কাছে বালি স্টক করে রাখা হয়েছিল। সেইসব স্টক ইয়ার্ড থেকেই বালি আসত। কিন্তু, ইডি অভিযানের পর স্টক পয়েন্ট থেকে বালি আসাও বন্ধ হয়ে গিয়েছে। আমাদের এখানে বালি নিয়ে হাহাকার পড়ে গিয়েছে। নির্মাণকাজে প্রভাব পড়ছে। গোপীবল্লভপুর এলাকার বালি বাইরে যায়। সিজুয়ার বালি আমাদের দুই মেদিনীপুরে আসে। কিন্তু, গত চার-পাঁচদিন ধরে বালি আসছে না। চাহিদা ও জোগানের বিরাট ফারাক হওয়ায় দাম বাড়ছে।
উল্লেখ্য, গত ৮সেপ্টেম্বর ইডি একযোগে ঝাড়গ্রাম জেলার গোপীবল্লভপুর-১ ও ২ব্লক এবং মেদিনীপুর সদর ব্লকে যমুনবালি এলাকায় বালি কারবারিদের ডেরায় হানা দেয়। পাশাপাশি, খেজুরি-১ব্লকের জরারনগরে বালি পরিবহণের সঙ্গে যুক্ত ট্রান্সপোর্ট ব্যবসায়ীর বাড়িতে অভিযান চালায় ইডি। ওই ঘটনার পর গোপীবল্লভপুরে একচেটিয়া বালি খাদান রাতারাতি বন্ধ হয়ে গিয়েছে। অফিসের ঝাঁপ ফেলে কর্মীরা পালিয়েছে। যে কারণে স্টক পয়েন্ট থেকেও বালি ট্রান্সপোর্ট বন্ধ রয়েছে। আপাতত ইডির আতঙ্কে খাদান মালিকরা ভয়ে সিঁটিয়েছে। কর্মীরাও কর্মস্থল ছেড়ে চলে গিয়েছে। এই পরিস্থিতিতে বালির জোগান একেবারে তলানিতে পৌঁছে গিয়েছে।
এই মুহূর্তে ‘আমাদের পাড়া আমাদের সমাধান’ কর্মসূচির মাধ্যমে জমা পড়া স্কিমের টেন্ডার প্রক্রিয়া চলছে। মোট প্রকল্পের অর্ধেক ঢালাই রাস্তার কাজ। ওইসব রাস্তার কাজের জন্য বালির প্রয়োজন। কিন্তু, বালির সঙ্কট তৈরি হওয়ায় প্রশাসনও চিন্তায় রয়েছে। ঠিকাদার থেকে ডেভেলপার প্রত্যেকেই বালির সঙ্কট নিয়ে উদ্বিগ্ন। পূর্ব মেদিনীপুরের জেলাশাসক পূর্ণেন্দু মাজী বলেন, চাহিদা অনুযায়ী জোগান যাতে স্বাভাবিক থাকে, সেজন্য প্রশাসনিকস্তরে পদক্ষেপ নেওয়া হবে।