• ন্যুব্জ শরীরে আজও প্রতিমা গড়ে চলেছেন সাঁইথিয়ার ষাটোর্ধ্ব দম্পতি
    বর্তমান | ১৫ সেপ্টেম্বর ২০২৫
  • নিজস্ব প্রতিনিধি, সিউড়ি: আগের মতো আর শরীর চলে না। মাঝে মাঝেই নানা কারণেই চিকিৎসকের কাছে ছুটতে হয়। কিন্তু দেহের জোর কমলেও কমেনি মনের জোর। একটানা পাঁচ দশক ধরে প্রতিমা গড়ে চলেছেন সাঁইথিয়া ব্লকের বনগ্রাম পঞ্চায়েতের তিলপাড়া গ্রামের ষাটোর্ধ্ব দম্পতি। ৭০ বছরের ভরত দাস বৈরাগ্য ও তাঁর ৬০ বছরের সহধর্মিণী সুমিত্রা দাস বৈরাগ্যের শৈল্পিক ছোঁয়ায় এবারও গড়ে উঠছে একাধিক পুজো কমিটির দুর্গা প্রতিমা। তবে, বেশি অর্ডার আর নিতে পারেননি। ফেরাতে হয়েছে বেশিরভাগ অর্ডার। এবছর তাঁদের হাতে গড়ে উঠছে ছ’টি প্রতিমা। 

    তিলপাড়ার বাসিন্দা ভরতবাবুর তিনকুলে কেউ প্রতিমা গড়ার কাজে যুক্ত ছিলেন না। তবে, ছেলেবেলা থেকেই প্রতিমা গড়ার কাজে মনে আগ্রহ ছিল ভরতবাবুর। একটু বড় হয়েই তিনি এক মৃৎশিল্পীর শরণাপন্ন হয়েছিলেন। তাঁর কাছেই প্রতিমা গড়ার কাজ শেখেন। তাঁর শিল্পের জাদুতে মাত্র ২০ বছর বয়সেই তিনি একজন প্রতিষ্ঠিত শিল্পী হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেন। সে বছরই সুমিত্রাদেবীর সঙ্গে তিনি সাত পাঁকে বাঁধা পড়েন। বিয়ের পরপরই সুমিত্রাদেবী স্বামীর কাছে প্রতিমা গড়ার কাজ শিখতে শুরু করেন। এরপর একটা সময় দু’জনে একসঙ্গে প্রতিমা গড়ার কাজে নেমে পড়েন। এমনও সময় গিয়েছে যখন ওই দম্পতি নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে ১৩ থেকে ১৪টি দুর্গা প্রতিমা গড়েছেন। তবে বয়সের ভারে এখন অবশ্য খানিকটা ন্যুব্জ হয়ে পড়েছেন তাঁরা। যদিও প্রতিমা গড়ার কাজে কোনও ভাটা পড়েনি। আজও ওই ষাটোর্ধ্ব দম্পতি দক্ষ হাতেই প্রতিমা গড়ার কাজ করে চলেছেন। 

    পরিবার সূত্রে জানা গিয়েছে, ষাটোর্ধ্ব দম্পতির দুই মেয়ে রয়েছে। বেশ কয়েক বছর আগে তাঁদের বিয়ে হয়ে গিয়েছে। এই পরিস্থিতিতে একাকী বৃদ্ধ দম্পতি সংসারের হাল ধরতে প্রতিমা গড়ার ফাঁকে মাশরুম চাষের কাজেও মন দিয়েছেন। বেশ কয়েক বছর ধরে শীতের মরশুমে তাঁরা ওয়েস্টার মাশরুম চাষ করছেন। আয় খুব একটা খারাপ নয়। তবে, বছরের বিভিন্ন সময় দুর্গা, কালী সহ অন্যান্য প্রতিমা গড়া যেন তাঁদের নেশা। শুধু বাড়িতে বসে নয়, আশপাশের গ্রাম থেকে ডাক পড়লেও সেখানে চলে যান প্রতিমা গড়তে। ভরতবাবু বলেন, ৫০ বছর ধরে প্রতিমা গড়ে চলেছি। যতদিন পারব প্রতিমা গড়ব। প্রতিমা গড়তে খুবই ভালো লাগে। আমার স্ত্রীও এই কাজে খুবই সাহায্য করেন। সুমিত্রাদেবী বলেন, স্বামীর কাছেই হাতেখড়ি। সম্পূর্ণ প্রতিমা গড়া এখনও শিখে উঠতে পারিনি। তবে, স্বামীর হাতে হাতে কাজ করি। যতদিন সম্ভব এভাবেই দু’জনে মিলে প্রতিমা গড়ব। -নিজস্ব চিত্র
  • Link to this news (বর্তমান)