• শিল্পাঞ্চলের অবৈধ পাথর খাদানের বিরুদ্ধে অভিযানে নামছে প্রশাসন
    বর্তমান | ১৫ সেপ্টেম্বর ২০২৫
  • নিজস্ব প্রতিনিধি, আসানসোল: বীরভূমের নলহাটির বাহাদুরপুরে অবৈধ পাথর খাদান ছয় শ্রমিকের প্রাণ কেড়েছে। জখম আরও চার। স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন উঠছে, দিনের পর দিন অবৈধ পাথর খাদান চলল কীভাবে? একই চিত্র পশ্চিম বর্ধমান জেলাতেও। জেলার বিভিন্ন ব্লকেই অবৈধ পাথর খাদান ও ক্র্যাশারের রমরমা রয়েছে। তবে এই কারবার সবচেয়ে বেশি সালানপুর ও বারাবনি ব্লকে। দিনরাত অবৈধ খাদান থেকে পাথর লুট চলছে। নদী দখল করে খাদান তৈরি হচ্ছে। তবু প্রশাসন নীরব রয়েছে। আওয়াজ তোলে না বিরোধীরাও। নলহাটির ঘটনার পর অবশ্য জেলা প্রশাসন তৎপর হওয়ার বার্তা দিয়েছে। শুধুমাত্র ফাইন করে ‘মাফ’ নয়, বরং অবৈধ খাদান বন্ধ করলেই রেহাই মিলবে। কড়া অবস্থানের কথা জানিয়েছেন জেলাশাসক পোন্নমবলম এস।

    জেলাশাসক বলেন, আমরা বিভিন্ন সময়েই অবৈধ পাথর খাদানের বিরুদ্ধে অভিযান চালাই। মোটা টাকা জরিমানাও করা হয়। নলহাটির ঘটনার পর আমরা কোনওরকম অবৈধ খাদান বরদাস্ত করব না। কারবারিকে অবৈধ খাদান ভরাট করে দিতে হবে।

    সালানপুর ব্লকের কল্ল্যা গ্রাম পঞ্চায়েতের কল্ল্যা মৌজার আদিবাসীপাড়া সংলগ্ন এলাকায় একটি অবৈধ পাথর খাদান রয়েছে। বিষয়টি নিয়ে স্থানীয় এক বাসিন্দা হাইকোর্টে মামলা করেছেন। এতদিন বিষয়টি নিয়ে নীরব থাকলেও সম্প্রতি জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকেই অবৈধ খাদান মালিককে নোটিশ করা হয়েছে। সেখানে দাবি করা হয়েছে, সাতদিনের ম঩ধ্যে অবৈধ পাথর খাদান বুজিয়ে তার রিপোর্ট প্রশাসনকে জমা করতে হবে। যদিও অভিযোগ, এরপরও রাতের অন্ধকারে খাদান চলছে। তাই প্রশাসনের হুঁশিয়ারির পরও এহেন পদক্ষেপ কতটা কার্যকর হবে, তা নিয়ে অনেকেই সন্দিহান।

    সালানপুর ব্লকের জিৎপুর-উত্তরামপুর ও কল্ল্যা পঞ্চায়েত এলাকার অজয় নদের তীরজুড়ে এই খাদানগুলি রয়েছে। একটি নদীর বিস্তীর্ণ অংশ দখল করেও খাদান করা হয়েছে। বিএলআরও’র পক্ষ থেকে থানায় একটি অভিযোগ করা হয়েছিল। ব্যাস, তারপর আর কোনও তৎপরতা দেখা যায়নি। খাদান থেকে পাথর কাটা চলেছে নিজস্ব নিয়মেই। নলহাটির মতো এখানেও গরিব শ্রমিকরা কোনওরকম সাবধানতা অবলম্বন না করেই পাথর কাটতে কয়েকশো ফুট গভীর খাদানে নেমে পড়েন। সেখানে বিস্ফোরণ করে ফাটানো হয় পাথরের চাঁ‌ই। একটু ধরপাকড় হলেই দিনের বদলে রাতের অন্ধকারে চলে খাদান। যা শ্রমিকদের জন্য আরও ঝুঁকিপূর্ণ। আশঙ্কা, শিল্পাঞ্চলে যেকোনও দিন নলহাটির ঘটনার পুনরাবৃত্তি হতে পারে।

    শুধু খাদানে পাথর চাপা পড়ে শ্রমিকের মৃত্যু নয়, সালানপুর ব্লকে একাধিক বাসিন্দার সিলিকোসিস ধরা পড়েছে। কারখানাগুলি দূষণবিধি মানছে না। পাশাপাশি, অবৈধ খাদানের পাথরগুলিকে ক্র্যাশার মেশিনে নির্দিষ্ট আকার দেওয়া হচ্ছে। অসাধু ব্য‌বসায়ীরা তা থেকে কয়েক কোটি টাকা মুনাফা করছে। সরকারের বিপুল রাজস্ব ক্ষতি হচ্ছে। আর ক্র্যাশার ও কারখানার ধুলো খেয়ে সাধারণ মানুষ সিলিকোসিসে আক্রান্ত হচ্ছে। এখন দেখার, নলহাটির ঘটনার পর জেলাশাসকের কড়া নির্দেশ নিচুস্তরে কতটা কার্যকরী হয়।
  • Link to this news (বর্তমান)