• নার্সিংহোমগুলিতে রোগী রেফারে অশুভ আঁতাত
    বর্তমান | ১৫ সেপ্টেম্বর ২০২৫
  • নিজস্ব প্রতিনিধি, বর্ধমান: সরকারি হাসপাতালের চিকিৎসকদের একাংশের সঙ্গে নার্সিংহোমের গোপন আঁতাতের প্রমাণ পেল স্বাস্থ্যদপ্তর। মোটা টাকা কমিশনের বিনিময়ে সরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা করাতে আসা রোগীদের ভুল বুঝিয়ে নার্সিংহোমে পাঠানো হচ্ছে। কয়েকদিন আগে ভাতার গ্রামীণ হাসপাতালের এরকমই একটি র‌্যাকেট নিয়ে ‘বর্তমান’ পত্রিকায় খবর প্রকাশিত হয়। তারপরই স্বাস্থ্যদপ্তর তদন্তে নামে। তারা অভিযোগের সত্যতা পেয়েছে। কয়েকদিন আগে ভাতার গ্রামীণ হাসপাতালে ১৮ বছরের এক যুবতী পেটের ব্যথা নিয়ে চিকিৎসা করাতে আসেন। তাঁকে সেখানে চিকিৎসা না করে নবাবহাটের একটি নার্সিংহোমে যাওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়েছিল। সরকারি নথিতে শেখ ইউসুফ নামে এক চিকিৎসকের নাম এবং ফোন নম্বর লেখা ছিল। সেই নথি ধরেই স্বাস্থ্যদপ্তর তদন্ত শুরু করে। জেলার মুখ্যস্বাস্থ্য আধিকারিক জয়রাম হেমব্রম বলেন, ওই চিকিৎসক নিজের ভুল স্বীকার করে নিয়েছেন। সরকারি নথিতে নার্সিংহোমের নাম উল্লেখ করে তিনি ঠিক করেননি।

    পূর্ব বর্ধমান জেলা পরিষদের শিক্ষা কর্মাধ্যক্ষ তথা তৃণমূল নেতা শান্তনু কোনার বলেন, যেসব চিকিৎসক এই র‌্যাকেটের সঙ্গে যুক্ত রয়েছেন, তাঁদের প্রত্যেকের বিরুদ্ধে কড়া পদক্ষেপ নেওয়া উচিত। তাঁরা সরকারের ভাবমূর্তি নষ্ট করেছেন। নিজেদের ফায়দা লোটার জন্য গরিব রোগীদের তাঁরা সর্বস্বান্ত করেছেন। ভাতার গ্রামীণ হাসপাতালে এধরনের ঘটনা আরও ঘটছে। অভিযুক্তের বিরুদ্ধে দৃষ্টান্তমূলক ব্যবস্থা নেওয়া না হলে তাঁরা আরও বেপরোয়া হয়ে উঠবেন।

    স্বাস্থ্যদপ্তর সূত্রে জানা গিয়েছে, বর্ধমানের নবাবহাট এবং খোসবাগানের বহু নার্সিংহোমের সঙ্গে বেশকিছু সরকারি হাসপাতালের চিকিৎসকের ব্যবসায়িক সম্পর্ক রয়েছে। তাঁরা বিভিন্ন অজুহাতে সরকারি হাসপাতাল থেকে রোগীদের ফিরিয়ে দেন। অনেকে আবার তাঁদের চেম্বারে যাওয়ার পরামর্শ দেন। সরকারি হাসপাতালের চিকিৎসকরা বাইরে চেম্বার করে ৫০০ থেকে ৮০০টাকা ফিজ নিয়ে চিকিৎসা করছেন। অনেকে আবার সরকারি হাসপাতালে রোগীদের অপারেশন করতে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেন না। তাঁরাই আবার নার্সিংহোমে সেই রোগীর চিকিৎসা করে ফায়দা তোলেন। যদিও চিকিৎসকদের অনেকেরই দাবি, সবাই এমনটা করেন না। অনেকে সরকারি হাসপাতালে নির্দিষ্ট সময়ের থেকে বেশিক্ষণ থেকে চিকিৎসা পরিষেবা দেন। কিন্তু একশ্রেণির চিকিৎসকের জন্য সকলের বদনাম হচ্ছে। পূর্ব বর্ধমান জেলা পরিষদের সভাধিপতি শ্যামাপ্রসন্ন লোহার বলেন, সরকারি হাসপাতালের চিকিৎসকরা যথেষ্ট সুযোগ-সুবিধা পান। নার্সিংহোমে রোগী রেফার করা উচিত নন। প্রয়োজন হলে অভিযুক্ত চিকিৎসক ভাতার থেকে রোগীকে বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে রেফার করতে পারতেন। সরকারি হাসপাতালগুলির পরিকাঠামো অনেক উন্নত। বিশেষ করে বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে অত্যাধুনিক মেশিন বা যন্ত্রাংশ রয়েছে। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সাধারণ মানুষের কথা ভেবে বিভিন্ন প্রকল্প চালু করেছেন। সরকারের ভাবমূর্তি নষ্ট করা কারও উচিত নয়।
  • Link to this news (বর্তমান)