‘পুজোর প্র্যাকটিস’, ছাতা মাথায় নিয়েই বাজারে বাঙালি
বর্তমান | ১৫ সেপ্টেম্বর ২০২৫
নিজস্ব প্রতিনিধি, কলকাতা: সামনের সপ্তাহে দেবীপক্ষে পা দিচ্ছে বাংলা। অর্থাৎ পুজো শুরু। এ সপ্তাহের রবিবার তাই কেনাকাটার বাড়তি তাগিদ ছিল। কিন্তু দেবীপক্ষ শুরুর আগেই কি শুরু হয়ে গেল বৃষ্টিপক্ষ? তাহলে কি বাজার করা শিকেয়? এই প্রশ্নে কারও কোঁচকাল ভ্রূ। কেউ তাচ্ছিল্যের হাসি হাসলেন। দোকানদাররা প্রমাদ গুনেছিলেন। কিন্তু বেলা গড়ানোর পর তাঁদের মুখেও হাসি।
কারণ পুজোর সময় এখন আর বৃষ্টিকে ভয় পায় না বাঙালি। ফলে রবিবার বেলা বাড়ার পর যখন আকাশের রং ধীরে ধীরে কালো হতে শুরু করেছে তখন ভাতঘুম ছেড়ে শাড়ি-জামা শরীরে গলিয়েছে কলকাতা। বেরিয়ে পড়েছে শপিংয়ে। কখনও টিপটিপ। কখনও ঝিরঝির করে বৃষ্টি। কিন্তু ব্যাগে ছিল ছাতা। তা মাথায় দিয়ে চলল দরদাম। কেনাকাটা কম হল না। ছাতা মাথায় রসিক বাঙালি ভিড় দেখে বলল, ‘পুজোয় বৃষ্টি হলে বয়েই গেল। ছাতা মাথায় ঘোরাঘুরি, দিব্যি প্র্যাকটিস হয়ে যাচ্ছে।’
দুপুরের বৃষ্টি বিকেলে একটু কমার পর লোকজন বেরলেন। বিকেল গড়ানোর পর গড়িয়াহাট, নিউ মার্কেট, হাতিবাগানে ভিড় বাড়তেই থাকল। ব্যবসায়ীরা বললেন, ‘শনিবারের মতো ভিড় রবিবার হল না। কিন্তু খুব খারাপও হয়নি।’ সন্তোষপুরের পূর্বালি মুখোপাধ্যায় ক্রেতা। তাঁর বক্তব্য, ‘সামনের রবিবার তো মহালয়া। আর মহালয়া মানেই তো পুজো শুরু। সেদিন থেকেই নতুন জামা গায়ে দিতে হবে। তাই যা বাজার করার আজকেই শেষ করতে হবে।’ অনেকে এদিন পুজোর শপিংয়ে ‘ফিনিশিং টাচ’ দিতে এসেছিলেন। জুতোর দোকান, ব্যাগ, জাঙ্ক জুয়েলারির দোকানে তরুণীদের জমাট ভিড়। তাঁদের কথা, ‘জামাকাপড় কেনা হয়ে গিয়েছে। এবার ম্যাচিং ব্যাগ আর জুয়েলারি দরকার। এখন এগুলোই কিনছি।’
জেলা থেকে শপিং করতে আসা মানুষরা এক ঢিলে দুই পাখি মারলেন এদিন। পুজোয় কোন কোন মণ্ডপ দেখবেন সেটা মোটামুটি ছকে ফেললেন। আর জিনিসপত্রও কিনলেন। বারুইপুরের মোহন রায় গড়িয়াহাট মোড়ে দাঁড়িয়ে পুলিশকে জিজ্ঞেস করলেন, ‘একডালিয়ার ঠাকুরটা কোন দিকে স্যার? এখানে আর হিট পুজো কী আছে?’ একই ছবি নিউ মার্কেটে। হুগলি থেকে আসা সমর তেলি জিজ্ঞেস করলেন, ‘মেট্রোতে কোন স্টেশনে নামলে ভালো ঠাকুর দেখা যাবে?’ আর হাতিবাগানের ব্যবসায়ীরা বললেন, ‘শুক্র আর শনি ভালোই ভিড় হল। বৃষ্টি না হলে রবিবার আরও ভিড় হতো। তবে ব্যবসা এদিনও খুব একটা খারাপ হয়নি।’
এদিন ভারত-পাকিস্তানের ক্রিকেট ম্যাচও ছিল। তারও প্রভাব পড়ল পুজোর বাজারে। গড়িয়াহাটের ব্যবসায়ী বাপী পাল বলেন, ‘লোকজন একটু তাড়াহুড়ো করে কেনাকাটা সারছে। অনেকেই বলল, ‘আটটার মধ্যে বাড়ি ফিরতে হবে। নইলে রাস্তায় মোবাইলে দেখতে হবে খেলা।’ সবমিলিয়ে বৃষ্টিদিনের বাজারে বাঙালি কিন্তু বুঝিয়ে দিয়েছে, পুজোর মেজাজে তারা প্রবেশ করে ফেলেছে। কোনও প্রাকৃতিক দুর্যোগই উত্সবের আনন্দে বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারবে না। মা দুর্গা অলওয়েজ বাঙালির সঙ্গে আছেন।