কম উচ্চতায় ‘জোড়া মেঘ’, বিপত্তি! ভাসল হুগলি থেকে উত্তর ২৪ পরগনা, পরীক্ষার্থীদের ভোগান্তি
বর্তমান | ১৫ সেপ্টেম্বর ২০২৫
নিজস্ব প্রতিনিধি, কলকাতা ও চুঁচুড়া: বাতাসে জলীয় বাষ্পের বাড়তি উপস্থিতি। সঙ্গে চড়া তাপমাত্রা। এই দুই কারণে গত কয়েকদিন ধরে দক্ষিণবঙ্গের জেলাগুলিতে বিক্ষিপ্তভাবে বজ্রমেঘ সৃষ্টির অনুকূল পরিস্থিতি তৈরি হয়ে আছে। বিক্ষিপ্তভাবে বজ্রপাত সহ বৃষ্টি হচ্ছেও বিভিন্ন জায়গায়। কিন্তু রবিবার দুপুরে হুগলি নদীর দু’পাড়ে হুগলি ও উত্তর ২৪ পরগনার বিস্তীর্ণ অংশে এই সাধারণ বৃষ্টির মেঘের সঙ্গে যুক্ত হয়েছিল কম উচ্চতায় থাকা ‘কিউমুলোনিম্বাস’ মেঘ। এদিন এই ‘জোড়া মেঘ’ই ডেকে আনল বিপত্তি! টানা প্রায় দু’ঘণ্টা প্রবল বর্ষণ চলল উত্তরপাড়া, শ্রীরামপুর, রিষড়া, চুঁচুড়া থেকে শুরু করে এপারের বরানগর, কামারহাটি, পানিহাটি, খড়দহ, সোদপুরের বিস্তীর্ণ অঞ্চলে। সঙ্গে ছিল মুহুর্মুহু বজ্রপাত।
রবিবার দুপুর নাগাদ হুগলি নদীর দু’পারের এসব অঞ্চলে শক্তিশালী ‘কিউমুলোনিম্বাস’ মেঘপুঞ্জ তৈরি হয়। আলিপুর আবহাওয়া দপ্তরের অধিকর্তা হবিবুর রহমান বিশ্বাস জানিয়েছেন, এদিন যে ‘কিউমুলোনিম্বাস’ মেঘ তৈরি হয়, তার উচ্চতা ছিল পাঁচ থেকে সাত কিলোমিটার। তাই দুপুরে এসব এলাকায় বৃষ্টির মাত্রাও যেমন বেশি ছিল, তেমন বজ্রপাতও হয় অনেক। যদিও হুগলি নদী লাগোয়া এই এলাকায় বৃষ্টি পরিমাপের কোনও সরকারি ব্যবস্থা না থাকায় কতটা বৃষ্টি হয়েছে, তা নির্দিষ্টভাবে জানা যায়নি। তবে নদীর দু’পাড়েই বহু জায়গা জলমগ্ন হয়ে পড়ে। অনেক রাস্তায় জল জমে যাওয়ায় এসএসসি পরীক্ষা দিয়ে ফেরার পথে চূড়ান্ত ভোগান্তির মধ্যে পড়েন হবু শিক্ষকরা।
আবহাওয়া দপ্তরের কর্তা আরও জানিয়েছেন, কলকাতার আকাশেও অনেকটা অংশজুড়ে শক্তিশালী বজ্রমেঘ তৈরি হয়েছিল এদিন। তবে তার উচ্চতা হুগলি নদীর দু’পাড়ের উপর তৈরি হওয়া মেঘপুঞ্জর থেকে কম ছিল। তাই কলকাতায় এদিন বৃষ্টি ও বজ্রপাতের মাত্রাও তুলনামূলক কম। হুগলি নদীর দু’পাড়ে প্রচুর বজ্রপাত হলেও কারও প্রাণহানি বা বিপদ ঘটেনি। এর কারণ হিসেবে আবহাওয়া দপ্তরের কর্তা জানিয়েছেন, এদিন এই এলাকায় প্রচুর বাজ পড়লেও তা মূলত মেঘের মধ্যেই ছিল। ‘ক্লাউড টু গ্রাউন্ড’ বজ্রপাত বলতে যা বোঝায়, তা বিশেষ হয়নি। ফলে ঘনঘন বজ্রপাতের বিকট শব্দে আতঙ্ক বাড়লেও বিপদ ঘটেনি শেষ পর্যন্ত। ‘কিউমুলোনিম্বাস’ মেঘের সঙ্গে সাধারণ বৃষ্টির মেঘ মিশে থাকার কারণেই এমনটা হয়েছে বলে জানান তিনি। আরও বলেন, ‘বর্ষাকালে এরকম হয়। প্রাক-বর্ষা মরশুমে আরও বেশি উচ্চতার মেঘ তৈরি হয়। সেই কারণে বৃষ্টি, বজ্রপাত সহ ধেয়ে আসে কালবৈশাখী। ওই সময় কিউমুলোনিম্বাস মেঘের উচ্চতা ১৫ কিলোমিটার বা তারও বেশি হয় অনেক সময়। ওই মেঘ থেকে যে বজ্রপাত হয়, তার মাটিতে নেমে আসার প্রবণতা বেশি থাকে। মেঘের উচ্চতা অন্তত ৩ কিলোমিটার হলে তাকে কিউমুলোনিম্বাস বলে চিহ্নিত করা হয়।’
এদিন উত্তরপাড়ার একাধিক পরীক্ষাকেন্দ্রের সামনে জল জমে যায়। সমস্যা হয়েছে রিষড়া, চুঁচুড়া, শ্রীরামপুরেও। পরীক্ষার্থীদের সমস্যা আরও বাড়ে হুগলি-হাওড়া রুটে দুপুরের পর ট্রেন দেরিতে চলায়। সব মিলিয়ে বাড়ি ফেরার পথে ব্যাপক দুর্ভোগে পড়েন পরীক্ষার্থীরা। এদিন রাত পর্যন্ত কোন্নগর আন্ডারপাসে জল জমে ছিল। আবহাওয়া দপ্তর জানিয়েছে, রবিবার সকাল সাড়ে ৮ টা থেকে বিকেল সাড়ে ৫টা পর্যন্ত দমদমে ১৮ মিমি, বারাকপুরে ১৫ মিমি ও কলকাতার আলিপুরে ৫ মিমি বৃষ্টিপাত রেকর্ড হয়েছে।