• মোবাইলের নেশাই কাল, ক্রেতার অভাবে দোকানে পড়ে ঘুড়ির ঝাঁক
    বর্তমান | ১৫ সেপ্টেম্বর ২০২৫
  • সংবাদদাতা, বনগাঁ: দু’দিন বাদেই বিশ্বকর্মা পুজো। আর বিশ্বকর্মা পুজো মানেই ঘুড়ি ওড়ানোর মরশুম। আকাশে নানা রঙের ঘুড়ির ঝাঁক। তাদের কত বাহারী নাম– পেটকাটি, চাঁদিয়াল, প্রজ্ঞা থেকে গেলাসি। তবে সেসব এখন অতীত। বর্তমানে কমবয়সিদের কাছে ঘুড়ি ওড়ানোর ‘সময়’ নেই। মোবাইল নিয়েই সময় কেটে যায় তাদের। বিশ্বকর্মা পুজোর আগে ঘুড়ির পসরা সাজিয়ে বসে আছেন কিছু দোকানি। ১০০ টাকায় ৮টি ঘুড়ি, একটি লাটাই ও সুতোর প্যাকেজ থাকলেও ঘুড়ি ওড়ানোয় আগ্রহী নয় বর্তমান প্রজন্ম। ফলে ঘুড়ির বিক্রিও নেই। হতাশ ব্যবসায়ীরা। লোকসানের মুখেও বটে। বনগাঁ ট বাজারের এক ব্যবসায়ী মনোজ সাউ বলেন, দু’বছর আগেও ঘুড়ির ভালোই বিক্রি হয়েছিল। এবছর সেই তুলনায় ১০ শতাংশও বিক্রি হয়নি। মানুষ এখন মোবাইলে ডুবে আছে। ঘরবন্দি হয়ে অসুস্থ হয়ে পড়ছে।

    আট-নয়ের দশক পর্যন্তও ঘুড়ি ওড়ানো ছিল মজার খেলা। চলত একে অপরের ঘুড়ি কাটার লড়াই। ভোকাট্টা হওয়া কোনও ঘুড়ির দিকে ছোটদের দৌড়। হামানদিস্তা দিয়ে কাচ গুঁড়ো করে সাবু জ্বাল দিয়ে কিংবা ভাতের ফ্যান দিয়ে সুতোয় মাঞ্জা দিতেন অনেকেই। বিকেল হলেই বেরিয়ে পড়তেন কোনও মাঠ কিংবা ফাঁকা জায়গায়। লাটাইয়ের সুতো ছেড়ে অনেক দূরে থাকা ঘুড়ির সঙ্গে চলতো প্যাঁচ খেলা। একজনের ঘুড়ি কাটতে পারলেই আনন্দে চিৎকার করে উঠতেন অন্যজন– ভোকাট্টা।

    বনগাঁর বাসিন্দা সৌরভ মুখোপাধ্যায় ছোটবেলা থেকেই ঘুড়ি ওড়ান। ছোটবেলা হুগলিতে কেটেছে তাঁর। সেখানেই ঘুড়ি ওড়ানোর হাতেখড়ি। বিশ্বকর্মা পুজোর একমাস আগে থেকেই চলতো প্রস্তুতি। ঘুড়ি ওড়ানোর প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়ে জয়ীও হয়েছিলেন। পঞ্চাশ ছুঁতে  চলা বয়সেও  তাঁর ঘুড়ি ওড়ানোর নেশা এতটুকু কমেনি। বিশ্বকর্মা পুজোর দু’দিন আগেই চলে যান হুগলির পুরনো পাড়ায়। সৌরভবাবু বলেন, দশ বছর বয়স থেকে ঘুড়ি ওড়াচ্ছি। কাচ গুঁড়ো করে তৈরি মাঞ্জা সুতো দিয়ে ঘুড়ি ওড়াতে গিয়ে অনেক সময় হাত কেটে যেতো। তবুও ঘুড়ি ওড়ানোর আনন্দে সেই ব্যথা ভুলে যেতাম। হুগলিতে এখনও ঘুড়ি ওড়ানোর প্রতিযোগিতা হয়। প্রতি বছর এই সময় ছুটে যাই। এবারও যাব। যতদিন শরীর দেবে ঘুড়ি উড়িয়ে যাব। আর ঘুড়ির সঙ্গেই আকাশে উড়ব একদিন।  নিজস্ব চিত্র
  • Link to this news (বর্তমান)