এই সময়: ক্যালেন্ডারের পাতা বলছে পুজো আসতে আর মাত্র দু’সপ্তাহ। মহালয়ার ঠিক আগে শহরের বাজারগুলিতে ক্রেতার ঢল নামার কথা। কিন্তু তা আর নামল কই?
নিম্নচাপের জেরে রবিবার সকালে থেকে কয়েক ঘণ্টা টানা বৃষ্টি। তার ফলে জমে উঠল না পুজোর বাজার। হাতিবাগান, গড়িয়াহাট, নিউ মার্কেট কোথাওই দেখা যায়নি সেই চেনা থিকথিকে ভিড়, যে ভিড়ে এক হাতে জামা তুলতে গেলে অন্য হাতে ধাক্কা খেতে হয়।
পুজোর আগের শেষ চারটে রবিবার যে ভিড় থাকে, যে পরিমাণ জিনিস বিক্রি হয় তা এ দিন হয়নি বলেই জানাচ্ছেন হাতিবাগানের পাঞ্জাবি ব্যবসায়ী সুমিত সাহা। তাঁর কথায়, ‘অনলাইন কেনাকাটা তো আগেই বাজার মেরে দিয়েছে। যেটুকু আশা ছিল, এই বৃষ্টির জন্য সেটাও গেল। রবিবারের মতো দিনে দোকানে লোক না এলে কী ভাবে চলবে?’
রবিবার ভালো ব্যবসা হবে এই আশায় নিত্যনতুন ডিজ়াইনের প্রচুর পাঞ্জাবি তুলেছিলেন সুমিত। কিন্তু, রাত ন’টা পর্যন্ত বিক্রি হয়েছে মাত্র ১৫টি পাঞ্জাবি। অন্যান্য বছরে পুজোর আগের রবিবারে অন্তত ৭০টা পাঞ্জাবি বিক্রি হয় বলে জানাচ্ছেন ওই ব্যবসায়ী। হাতিবাগানের জুয়েলারি ব্যবসায়ী মিতা দত্তর আক্ষেপ, ‘বিকেলের দিকে নতুন করে বৃষ্টি না হলেও সকালের বৃষ্টি দেখেই অনেক ক্রেতা আসেননি।’
নিউ মার্কেট, গড়িয়াহাটের ছবিটাও হাতিবাগানের মতোই। নিউ মার্কেটের পোশাক ব্যবসায়ী ইমতেয়াজ শেখের বক্তব্য, ‘এই সময়ে দিনে ৪০–৫০ হাজার টাকার বিক্রি হতো। বৃষ্টির কারণে পুজোর সেই থিকথিকে ভিড়টাই উধাও। ফলে, বিক্রিও অনেকটাই কম।’
সংস্কৃত কলেজের প্রথম বর্ষের ছাত্রী রিমা চৌধুরীর কাছে পুজো মানেই বন্ধুদের সঙ্গে ফ্যাশনে টেক্কা দেওয়ার লড়াই। বিকেলের দিকে আবহাওয়ার উন্নতি দেখেই শোভাবাজারের রিমা মায়ের সঙ্গে কেনাকাটা করতে এসেছিলেন নিউ মার্কেটে। তাঁর কথায়, ‘ভিড় ঠেলে শপিং না করলে পুজো বলে মনেই হয় না! তবে, অন্যবার রবিবারে যে ভিড় থাকে সেই ভিড়টা নেই।’
রিমারই বন্ধু সায়ন্তনীর কথায়, ‘বছরের বাকি সময়ে অনলাইনেই কেনাকাটা করি। কিন্তু পুজোর সময়ে বাবা-মায়ের সঙ্গে শপিং করার মজাই আলাদা।’
এ বছরের পুজোর কেনাকাটা আবার একদম অন্য রকম মেহুলের কাছে। ক্লাস সেভেনের মেহুল দত্ত এ বছর প্রথম তার বাবার সঙ্গে লাইনে দাঁড়িয়ে নিউ মার্কেটের একটি দোকান থেকে জুতো কিনেছে।
প্রায় যুদ্ধ জয় করে তার বক্তব্য, ‘সেই কখন থেকে দাঁড়িয়ে রয়েছি। জুতো কিনতে এসে তো পায়ে ব্যথা হয়ে গেল।’ পুজোর আগে বৃষ্টির কারণে রবিবারের ব্যবসা ধাক্কা খাওয়ায় হতাশ ব্যবসায়ীদের অনেকেই। তবু আশায় বুক বেঁধেছেন বিক্রেতারা — আগামী রবিবার ভালো থাকবে আবহাওয়া। চেনা ছন্দে ফিরবে বাজার।