• প্রচারে থোড়াই কেয়ার, বাজারে দেদার ছোট ইলিশ, বিপন্ন ভবিষ্যৎ
    এই সময় | ১৫ সেপ্টেম্বর ২০২৫
  • এই সময়, কাকদ্বীপ: সরকারি প্রচার আছে। মৎস্যবন্দর ও আড়তগুলোতে নজরদারির জন্য কর্মীও রাখা হয়েছে। কিন্তু এত কিছুর পরেও খোলা বাজারে রমরমিয়ে বিক্রি হচ্ছে ৫০০ গ্রামের কম ওজনের ছোট ইলিশ। পুজোর আগে বাজার ছেয়ে গিয়েছে ওই ছোট ইলিশে।

    মৎস্যজীবী সংগঠন সূত্রের খবর, সরকার নতুন আইন করে ২৩ সেন্টিমিটার দৈর্ঘ্যের কম ইলিশ ধরার উপরে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে। পাশাপাশি ৯০ মিলিমিটারের কম ফাঁসের জাল ব্যবহার করাও নিষিদ্ধ। কিন্তু বাজারে ছোট ফাঁসের জাল দেদার বিক্রি হচ্ছে। বেশি মুনাফার আশায় লোভে পড়ে বেশ কিছু অসাধু মৎস্যজীবী গোপনে বেআইনি ছোট ফাঁসের জাল ব্যবহার করে অবাধে ছোট ইলিশ ধরছে৷ এই অসাধু মৎস্যজীবী ও মৎস্য ব্যবসায়ীদের জন্য বাকি মৎস্যজীবীদের বদনাম হচ্ছে।

    মৎস্যজীবীদের অভিযোগ, ‘এ বারেও ইলিশের ঝাঁকের সঙ্গে বেশ কিছু ছোট ইলিশ জালে উঠেছে। সেটা ইচ্ছাকৃত ভাবে ধরা নয়৷ কিন্তু ছোট ফাঁসের জাল ব্যবহার করে যারা ছোট ইলিশ ধরছে তাদের বিরুদ্ধে অবিলম্বে প্রশাসন ব্যবস্থা নিক৷’ মৎস্য দপ্তরের দাবি, বিধি নিষেধ নিয়ে কঠোর মনোভাব নেওয়া হয়েছে৷

    জেলার এক মৎস্য আধিকারিক বলেন, ‘নিয়মিত প্রচারের পাশাপাশি আড়ত ও খোলা বাজারে নজরদারি চালানো হচ্ছে৷ আগামী দিনগুলোতে বিভিন্ন মৎস্য বন্দরে ট্রলার ভেড়ার সঙ্গে সঙ্গে নিয়মিত তল্লাশি অভিযান চালানোর পরিকল্পনা নেওয়া হচ্ছে৷ দেখা হবে মৎস্যজীবীদের ধরে আনা বড় ইলিশের পাশাপাশি ছোট ইলিশের পরিমান৷ যদি ১৫ থেকে ২০ শতাংশের বেশি ছোট ইলিশ থাকে তা হলে এ বার থেকে ট্রলার মালিক এবং মাঝিদের বিরুদ্ধে আইনত ব্যবস্থা নেওয়া হবে৷’

    আইন ভাঙার প্রবণতা বাড়ায় হতাশ মৎস্যজীবী সংগঠনের কর্মকর্তারা। তাঁদের দাবি, অবিলম্বে মৎস্য দপ্তর ও পুলিশ প্রশাসন এই সমস্ত অসাধু মৎস্যজীবীদের বিরুদ্ধে আইনত ব্যবস্থা নিক। আরও কড়া আইন করে বাজারে ছোট ফাঁসের জাল বিক্রি বন্ধ করারও দাবি তুলেছেন তাঁরা।

    এ ভাবে দেদার ছোট ইলিশ ধরা হলে আগামী দিনে সমুদ্রে বড় ইলিশের আকাল দেখা দিতে পারে ভেবে উদ্বিগ্ন পরিবেশপ্রেমীদের একাংশ। ডায়মন্ড হারবারের পরিবেশপ্রেমী চন্দন মিত্র বলেন, ‘এ ভাবে ছোট ইলিশ ধরা হলে প্রজনন সক্ষম বড় ইলিশ আর তৈরি হবে না। তার ফলে বড় ইলিশের সংখ্যা দিনকে দিন আরও কমতে থাকবে। মৎস্যজীবীদের আরও সচেতন হতে হবে। ছোট ইলিশ ধরা বন্ধ না হলে আগামী দিনে সমুদ্রে ইলিশ বিলুপ্ত হয়ে যাবে।’

    এ বছর মরশুমের শুরুতে বড় বড় ইলিশ পড়ছিল মৎস্যজীবীদের জালে। কিন্তু একের পর এক দুর্যোগে বেশ কিছুটা ধাক্কা খেয়েছিল গভীর সমুদ্রে মৎস্যজীবীদের মাছ ধরা। দিন দশেক আগে সুন্দরবনের উপকূল থেকে ইলিশের খোঁজে মৎস্যজীবীদের ট্রলার ভেসেছিল বঙ্গোপসাগরে।

    কিন্তু গত কয়েকদিন ধরে ডায়মন্ড হারবারের নগেন্দ্রবাজারের আড়তে দেদার ছোট ইলিশ বিক্রির অভিযোগ উঠেছে। ৫০০ গ্রামের কম ওজনের ‘পিল ইলিশ’–এ ছেয়ে গিয়েছে বাজার। এই পিল ইলিশ সংরক্ষণের জন্য গত কয়েক বছর ধরে মৎস্য দপ্তর নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে৷

    গত কয়েকদিন ধরে কাকদ্বীপ, নামখানা, রায়দিঘি, কুলপি, লক্ষ্মীকান্তপুর ও ডায়মন্ড হারবার ও শহরতলির বাজারগুলোতে অবাধে ছোট ইলিশ দেদার বিক্রি চলছে। মূলত রায়দিঘি, নামখানা ও কাকদ্বীপের ঘাট থেকে ছেড়ে যাওয়া একাংশের ট্রলার ছোট ইলিশ ধরে নিয়ে আসছে বলে অভিযোগ। সেই মাছ ডায়মন্ড হারবারের নগেন্দ্রবাজার আড়ত ঘুরে চলে আসছে খোলা বাজারে।

    নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক নগেন্দ্রবাজারের এক আড়তদার অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, ‘বেশিরভাগ ছোট ইলিশ এই আড়ত পর্যন্ত আনে না মৎস্যজীবীরা৷ গোপনে খোলা বাজারে বিক্রি করে দিচ্ছে৷ কলকাতার পাইকাররা সেটা কিনে নিয়ে যাচ্ছে।’

  • Link to this news (এই সময়)