আজকাল ওয়েবডেস্ক: রবিবার আসামের নুমালীগড়ে এক জনসভায় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ১২,০০০ কোটি টাকারও বেশি মূল্যের বিভিন্ন প্রকল্পের উদ্বোধন ও শিলান্যাস করেন। এই উপলক্ষে তিনি ভাষণে জানান, দেশকে জ্বালানি নির্ভরশীলতা থেকে মুক্ত করতে বিজেপি-নেতৃত্বাধীন কেন্দ্র সরকার অপরিশোধিত তেল ও গ্যাস আমদানি কমানোর পাশাপাশি জোর দিচ্ছে নতুন তেল অনুসন্ধান, সবুজ জ্বালানি এবং বিকল্প শক্তির ওপর।
মোদি বলেন, “ভারত আজ বিশ্বের দ্রুততম ক্রমবর্ধমান অর্থনীতির অন্যতম, কিন্তু অপরিশোধিত তেল ও গ্যাসের জন্য আমাদের বিদেশের ওপর নির্ভর করতে হচ্ছে। এটা বদলাতে হলে আমাদের নিজেদের জ্বালানি প্রয়োজনীয়তা পূরণের দিকে নজর দিতে হবে। সরকার সেই লক্ষ্যেই কাজ করছে।” তিনি নুমালীগড়ে উদ্বোধন করেন নতুন বায়ো-ইথানল রিফাইনারি, যা কৃষক ও আদিবাসীদের আর্থিকভাবে বড় উপকার করবে বলে দাবি করেন প্রধানমন্ত্রী। পাশাপাশি তিনি পলিপ্রোপিলিন প্লান্টের শিলান্যাস করেন এবং বলেন, এই শিল্প আসামের স্থানীয় অর্থনীতিকে এগিয়ে নিয়ে যাবে।
মোদি জোর দিয়ে জানান, শক্তি ও সেমিকন্ডাক্টর হল ‘আত্মনির্ভর ভারত’-এর দুই প্রধান চালিকাশক্তি, এবং এই ক্ষেত্রে আসামকে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে হবে। কিন্তু প্রকল্প ঘোষণার পাশাপাশি, তাঁর বক্তৃতায় কংগ্রেস বিরোধিতাই ছিল মুখ্য। প্রধানমন্ত্রী অভিযোগ করেন, “কংগ্রেসের কারণে আসামে বিদ্রোহ ও অশান্তি জন্ম নিয়েছিল। কংগ্রেস আসামের ঐতিহ্য ও মহাপুরুষদেরও অবহেলা করেছে। বিজেপি উন্নয়ন এনেছে, রাজ্যের ঐতিহ্যকে স্বীকৃতি দিয়েছে।”
এছাড়াও মোদি দাবি করেন, কংগ্রেসের ভোটের রাজনীতির জন্য আসাম আজ জনসংখ্যার ভারসাম্যের চ্যালেঞ্জের মুখে। তিনি জানান, রাজ্য সরকার অনুপ্রবেশকারীদের উচ্ছেদ করছে এবং বঞ্চিত মানুষদের জমির অধিকার দিচ্ছে। “আদিবাসীদের জন্য আমরা একের পর এক কল্যাণমূলক পদক্ষেপ নিচ্ছি, যাদের কংগ্রেস শাসনে অবহেলা করা হয়েছিল,” তিনি বলেন। মোদি আশ্বাস দেন যে, বিজেপি সরকার আসামকে বাণিজ্য ও পর্যটনের অন্যতম কেন্দ্র হিসাবে গড়ে তুলতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।
তবে রাজনৈতিক মহলের মতে, এই বক্তৃতার আড়ালে লুকিয়ে রয়েছে এক অন্য সত্য। মণিপুরে হিংসা ও অশান্তি দমনে কেন্দ্র ও রাজ্যের বিজেপি সরকারের ব্যর্থতা নিয়ে যখন দেশজুড়ে প্রশ্ন উঠছে, তখনই মোদি আবারও কংগ্রেসের দিকে আঙুল তুলছেন। সমালোচকদের বক্তব্য, আসামে বিজেপির একাধিক প্রশাসনিক ব্যর্থতা এবং মণিপুরের সংকট থেকে নজর ঘোরাতে মোদি কংগ্রেসকে প্রতিটি সমস্যার মূল বলে তুলে ধরছেন—এমনকি সেই সমস্যাগুলো যেগুলো বিজেপির আমলেই গভীর হয়েছে।
অর্থনীতির উন্নয়ন ও প্রকল্প বিনিয়োগের ঘোষণা দিয়ে যেমন তিনি ভোটব্যাঙ্ককে টানতে চাইছেন, তেমনই পুরনো অভিযোগের পুনরাবৃত্তি করে কংগ্রেসবিরোধী বক্তব্যকে ঢাল করছেন। বাস্তবে বিজেপির ব্যর্থতার ভারসাম্য রক্ষার জন্য মোদির এই রাজনৈতিক কৌশলকেই অনেকে দেখছেন।