• দিল্লিতে ভয়াবহ দুর্ঘটনায় অর্থ মন্ত্রকের ডেপুটি সেক্রেটারির মৃত্যু, গুরুতর আহত স্ত্রী...
    আজকাল | ১৫ সেপ্টেম্বর ২০২৫
  • আজকাল ওয়েবডেস্ক:  রাজধানীর রিং রোডে দিল্লি ক্যান্ট মেট্রো স্টেশনের কাছে ভয়াবহ সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণ হারালেন কেন্দ্রীয় অর্থ মন্ত্রকের একজন সিনিয়র আধিকারিক। রবিবার দুপুরে এক বিএমডব্লিউ (BMW) গাড়ি তাঁর মোটরবাইককে ধাক্কা দিলে ঘটনাস্থলেই মৃত্যু হয় নাভতোজ সিং (৫২)-এর। মৃত নাভতোজ সিং ছিলেন ইউনিয়ন ফিন্যান্স মন্ত্রকের ডিপার্টমেন্ট অব ইকোনমিক অ্যাফেয়ার্সে ডেপুটি সেক্রেটারি। তাঁর স্ত্রী সন্দীপ কৌর গুরুতর জখম হয়ে হাসপাতালে ভর্তি আছেন।

    পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, রবিবার দুপুর ১টা থেকে ১.৩০টার মধ্যে গুরুদ্বারা বাংলা সাহিব থেকে বাড়ি ফেরার পথে এই দুর্ঘটনা ঘটে। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, একটি বিএমডব্লিউ গাড়ি দ্রুত গতিতে এসে তাঁদের মোটরসাইকেলকে ধাক্কা মারে। ধাক্কার তীব্রতায় নাভতোজ সিং ও তাঁর স্ত্রী রাস্তায় ছিটকে পড়েন।

    দুর্ঘটনার পর গাড়িটি রাস্তার একপাশে উল্টে গিয়ে পড়ে থাকতে দেখা যায়। পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে বিএমডব্লিউ ও মোটরবাইক দুটিকেই বাজেয়াপ্ত করেছে। ফরেনসিক দল ও ক্রাইম টিম ঘটনাস্থলে গিয়ে প্রমাণ সংগ্রহ করেছে। দুর্ঘটনার জেরে কিছুক্ষণ রিং রোডে যান চলাচল ব্যাহত হলেও পরে স্বাভাবিক হয়।

    দম্পতির ছেলে নাভনূর অভিযোগ করেছেন, দুর্ঘটনার পর তাঁর বাবা-মাকে আশপাশের কোনো সুপার স্পেশ্যালিটি হাসপাতাল বা এইমসের মতো উন্নত ট্রমা কেয়ার সেন্টারে নেওয়ার বদলে নিয়ে যাওয়া হয়ে প্রায় ১৭-২০ কিলোমিটার দূরে জিটিবি নগরের নিউলাইফ হাসপাতালে। তাঁর কথায়, “আমার বাবা হয়তো বাঁচতে পারতেন, যদি কাছে কোনো বড় হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হতো। অথচ তাঁদের এক ডেলিভারি ভ্যানে করে ওই হাসপাতালে পাঠানো হয়। দুর্ঘটনার পরপরই মৃত্যু হওয়া বিরল ঘটনা। অথচ বাবাকে সময় মতো চিকিৎসা দেওয়া হয়নি।”

    নাভনূরের দাবি, দুর্ঘটনায় জড়িত বিএমডব্লিউ গাড়ির চালক, গগনপ্রীত নামে এক মহিলা, এবং তাঁর স্বামী পরিক্ষিতও আহত হন।সন্দেহজনকভাবে তাঁদেরও একই হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। তিনি অভিযোগ করেন, ওই হাসপাতাল বিএমডব্লিউ চালকের পরিবারের সঙ্গে যুক্ত এবং হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ অভিযুক্তদের আড়াল করতে ভুয়ো মেডিকো-লিগ্যাল সার্টিফিকেট তৈরির চেষ্টা করছে।

    পুলিশ জানিয়েছে, দুর্ঘটনার সময় বিএমডব্লিউ চালাচ্ছিলেন গগনপ্রীত, আর পাশে বসেছিলেন তাঁর স্বামী পরিক্ষিত, যিনি গুরগাঁও-এর বাসিন্দা ও পেশায় ব্যবসায়ী। দুর্ঘটনার পর দম্পতি আহতদের নিজেদের ট্যাক্সি করে হাসপাতালে নিয়ে যান। পুলিশ ইতিমধ্যেই একটি এফআইআর দায়ের করেছে। বিএমডব্লিউ ও মোটরবাইক উভয়কেই ফরেনসিক পরীক্ষার জন্য পাঠানো হয়েছে। আইনি প্রক্রিয়া চলছে।

    একজন উচ্চপদস্থ সরকারি আধিকারিকের এই করুণ মৃত্যুতে শোকের ছায়া নেমেছে সরকারি মহলে। তবে দম্পতির ছেলের গুরুতর অভিযোগের ভিত্তিতে হাসপাতালের ভূমিকা ও দুর্ঘটনার তদন্ত নিয়ে নতুন করে প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে। পুলিশ জানিয়েছে, সমস্ত দিক খতিয়ে দেখা হচ্ছে এবং প্রয়োজনে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে কড়া পদক্ষেপ নেওয়া হবে।

    রাজনৈতিক মহল থেকেও এই ঘটনায় ক্ষোভ প্রকাশ করা হয়েছে। বিশিষ্ট মহল মনে করছে, কেবল মাত্র দ্রুতগতির জন্য নয়, দুর্ঘটনার পর আহতদের হাসপাতালে নেওয়ার সিদ্ধান্ত ও প্রক্রিয়াতেও গুরুতর গাফিলতি হয়েছে। স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের মতে, “গোল্ডেন আওয়ার”-এর মধ্যে সঠিক চিকিৎসা পেলে বহু প্রাণ বাঁচানো সম্ভব, অথচ নাভতোজ সিংকে দূরে নিয়ে যাওয়ার কারণে তাঁর জীবন ঝুঁকির মুখে পড়ে। প্রশ্ন উঠছে—সচ্ছল পরিবারের প্রভাবশালী সদস্যরা কি নিজেদের স্বার্থে গোটা প্রক্রিয়া ভিন্ন দিকে ঘোরাতে চাইছেন? আগামী দিনে এই তদন্ত কেমন মোড় নেয়, তার দিকে তাকিয়ে গোটা দেশ।
  • Link to this news (আজকাল)