শান্তনু ঘোষ
সকাল থেকেই অফিসের হোয়াটস অ্যাপ গ্রুপ দেখে বুঝতে পারছিলাম রাস্তায় বেরোলে দুর্ভোগ রয়েছে। সোমবার শহরে রয়েছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। কলকাতা পুলিশ গত শুক্রবারই (১২ সেপ্টেম্বর) জানিয়েছিল, রবিবার (১৪ সেপ্টেম্বর) ও সোমবার (১৫ সেপ্টেম্বর) শহরের একাধিক রাস্তায় যান চলাচল নিয়ন্ত্রণ করা হবে। সেই তালিকায় সোমবার মা ফ্লাইওভার না থাকায় কিছুটা নিশ্চিন্ত ছিলাম। কারণ ভিআইপি বাজার থেকে ধর্মতলা যেতে আমার খুব বেশি হলে ২০-২৫ মিনিট লাগে। সেটা সোমবার কতই বা আর বেশি লাগবে! তা-ও হাতে কিছুটা বেশি সময় নিয়ে দুপুর ১২টা ১৫ মিনিটে রওনা হলাম বাড়ি থেকে।
অফিসের গ্রুপে বিভিন্ন জায়গায় বৃষ্টি হওয়ার খবর পেলেও বাইপাসের দিকে সেই যন্ত্রণা সোমবার দুপুরে ছিল না। ইলশেগুঁড়ি বৃষ্টি তেমন ভাবে গায়েও লাগছিল না। ভিআইপি বাজার থেকে সায়েন্স সিটি অবধি পৌঁছেই বুঝলাম আজ ভুগতে হবে। সায়েন্সসিটির দিক থেকে কোনও গাড়ি মা ফ্লাইওভারে উঠতে দেওয়া হচ্ছিল না। গাড়ির লম্বা লাইন বাইপাসে। রেলিং দিয়ে ব্যারিকেড করে পুলিশ রাস্তা আটকেছে। অনেকে অপেক্ষা করছেন ব্যারিকেড ওঠার, অনেকে আবার ফ্লাইওভারের নিচের রাস্তা ধরছেন। আমিও স্কুটি নিয়ে দাঁড়িয়ে না থেকে সেই পথই ধরলাম।
পার্ক সার্কাস চার নম্বর ব্রিজ দিয়ে মৌলালি হয়ে ধর্মতলা যাওয়া যায়, আবার হিউজ রোড দিয়ে শিয়ালদহ হয়েও যাওয়া যায়। চার নম্বর ব্রিজের রাস্তা এতটাই খানাখন্দে ভরা, যে আমি সাধারণত ওই রাস্তা এড়িয়ে যাই। সোমবার তপসিয়া থেকে চার নম্বর ব্রিজের দিকে যাওয়ার রাস্তায় প্রচুর গাড়ি দেখে হিউজ রোড দিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিই। সেটাই ছিল বড় ভুল।
আমার মতো সকলেই মনে হয় হিউজ রোড ধরার পরিকল্পনা করেছিলেন। ফলে সেই দিকেও গাড়ির প্রচুর ভিড়। সঙ্গে লরি, কর্পোরেশনের জলের গাড়ি, বাইক, স্কুটি, চার চাকার গাড়িতে ভর্তি। উপরি পাওনা রাস্তায় জমে থাকা বৃষ্টির নোংরা জল। কখনও স্কুটি তুলতে হয়েছিল ফুটপাতের উপর, কখনও ওই জলের উপর দিয়েই এগিয়ে যাওয়া। দ্রুত অফিস যাওয়ার তাগিদে স্কুটির খোঁচা লাগল পাশের গাড়ির লুকিং গ্লাসে। সেই গাড়ির ড্রাইভারকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়েই এগিয়ে গেলাম স্কুটি নিয়ে। মনে মনে ভাবলাম, ভাগ্যিস স্কুটি নিয়ে যাতায়াত করি, চার চাকার গাড়ি হলে কতক্ষণে অফিস ঢুকতাম কে জানে!
হিউজ রোড দিয়ে শিয়ালদহ যাওয়ার রাস্তায় দেখা গেল এক পুলিশ কর্মীকে দৌড়ে গিয়ে অন্য পুলিশ কর্মীকে রাস্তার অবস্থা বুঝিয়ে গাড়ি নিয়ন্ত্রণ করতে। মা ফ্লাইওভার বা রেড রোডের মতো তাঁদের ওয়াকিটকিগুলিও কি সোমবার বন্ধ ছিল?
বুঝতে পারছিলাম সঠিক সময়ে অফিস পৌঁছনোর আশা ছাড়তে হবে। শিয়ালদহ পার করে ক্রিক রো ধরে হিন্দ সিনেমার পাশ দিয়ে সেন্ট্রাল অ্যাভিনিউ ধরলাম। এই দিকটায় তবুও কিছুটা ট্রাফিক কম। অফিস পৌঁছলাম ১ ঘণ্টা ৫ মিনিটের যন্ত্রণা শেষে।
অফিস এসে শুনলাম, আমার যে সহকর্মী মহেশতলার দিক থেকে ধর্মতলা আসেন এক ঘণ্টায়, তিনি সোমবার এসেছেন আড়াই ঘণ্টায়। মেট্রোতে সমস্যা রয়েছে। সব মিলিয়ে সপ্তাহের প্রথম কাজের দিনটি খুব সুখকর হল না কলকাতার নিত্যযাত্রীদের জন্য।