আজকাল ওয়েবডেস্ক: উত্তরপ্রদেশের সাম্ভল জেলার ৫০০ বছরের পুরনো শাহি জামা মসজিদকে ঘিরে গত বছরের ভয়াবহ অশান্তির মামলায় সোমবার (১৫ সেপ্টেম্বর) গুরুত্বপূর্ণ শুনানি হতে চলেছে এলাহাবাদ হাইকোর্টে। জামা মসজিদ পরিচালনা কমিটির চেয়ারম্যান জাফর আলি দাখিল করেছেন একটি রিট আবেদন, যাতে পুলিশের দাখিল করা চার্জশিট বাতিলের আর্জি জানানো হয়েছে।
২০২৪ সালের ২৪ নভেম্বর আদালতের নির্দেশে প্রত্নতাত্ত্বিক সমীক্ষা চলাকালীন মসজিদের অজুখানা খালি করার পর গুজব ছড়িয়ে পড়ে। কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই ব্যাপক বিক্ষোভ শুরু হয়, যা দ্রুত হিংসাত্মক রূপ নেয়। সংঘর্ষে পাঁচজন মুসলমানের মৃত্যু হয়। বহু মানুষ আহত হন, পুলিশ গাড়ি ভাঙচুর করা হয়।
প্রশাসন কারফিউ জারি করে ও ইন্টারনেট পরিষেবা স্থগিত করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। বিশেষ তদন্ত দল (SIT) সম্প্রতি ছয়টি আলাদা মামলায় মোট ৪,৪০০ পৃষ্ঠার চার্জশিট দাখিল করেছে। তাতে— ৩৭ জনের নাম রয়েছে, যার মধ্যে সমাজবাদী পার্টির সাংসদ জিয়াউর রহমান বার্ক এবং স্থানীয় কংগ্রেস বিধায়ক ইকবাল মাহমুদের পুত্রও আছেন।
আরও প্রায় ৩,৭৫০ জনকে “অজ্ঞাত অভিযুক্ত” হিসেবে তালিকাভুক্ত করা হয়েছে। পুলিশের দাবি, অশান্তির মূল চক্রান্তকারী সাম্ভলের বাসিন্দা শারিক সাথা, যিনি দিল্লি-এনসিআর অঞ্চলে ৩০০-রও বেশি গাড়ি চুরির চক্র চালাতেন। তার বিরুদ্ধে দাউদ ইব্রাহিম ও পাকিস্তানি গোয়েন্দা সংস্থা ISI-এর সঙ্গে যোগসাজশের অভিযোগও আনা হয়েছে। সাথা নাকি ভুয়ো পাসপোর্টে দেশ ছাড়েন।
তদন্তে স্থানীয় কয়েকজনের সন্দেহজনক আর্থিক লেনদেন ও বিদেশি কার্তুজ উদ্ধার হওয়ার বিষয়টি উঠে এসেছে। ২০২৫ সালের মার্চে গ্রেপ্তার হওয়া জাফর আলি জুলাই মাসে হাইকোর্ট থেকে জামিন পান। তিনি এখন দাবি করছেন, SIT-এর তদন্ত পক্ষপাতদুষ্ট ও ভিত্তিহীন। তাঁর বক্তব্য—মসজিদ কমিটির বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ ভিত্তিহীন এবং এই মামলার চার্জশিট আদালত খারিজ করা উচিত।
মামলাটি বিচারপতি সমীর জৈনের বেঞ্চে আজ উঠবে। এর আগে সুপ্রিম কোর্ট পরিস্থিতি শান্ত রাখতে মসজিদ সমীক্ষা সাময়িকভাবে বন্ধ রাখার নির্দেশ দিয়েছিল এবং বিষয়টি এলাহাবাদ হাইকোর্টে পাঠিয়েছিল। একইসঙ্গে উত্তরপ্রদেশ সরকার একটি বিচার কমিশন গঠন করেছে, যা খতিয়ে দেখছে হিংসা “পূর্বপরিকল্পিত ছিল নাকি আকস্মিক”।
শাহি জামা মসজিদ ঘিরে সংঘর্ষের ঘটনা শুধু আইনি নয়, রাজনৈতিক ও সামাজিক ক্ষেত্রেও ব্যাপক আলোড়ন ফেলেছে। একদিকে প্রত্নতাত্ত্বিক সমীক্ষা নিয়ে ঐতিহাসিক ও ধর্মীয় টানাপোড়েন বাড়ছে। অন্যদিকে স্থানীয় মুসলিম সমাজ এই মামলাকে নিজেদের ধর্মীয় অধিকারের প্রশ্ন হিসেবে দেখছে।
রাজ্য রাজনীতিতে বিরোধীরা ইতিমধ্যেই অভিযোগ তুলেছে, সরকার পরিস্থিতি সামাল দিতে ব্যর্থ হয়েছে এবং ইচ্ছাকৃতভাবে একপক্ষকে নিশানা করা হচ্ছে। আজকের শুনানিতে হাইকোর্ট চার্জশিট বাতিলের আবেদন গ্রহণ করবে কি না, তার উপর নির্ভর করছে মামলার ভবিষ্যৎ। আপাতত আদালত ও কমিশনের তদন্ত চললেও, ঘটনাটি আবারও প্রমাণ করল কীভাবে ঐতিহাসিক ধর্মীয় স্থলকে ঘিরে উত্তরপ্রদেশে সাম্প্রদায়িক উত্তেজনা দ্রুত বিস্ফোরক হয়ে উঠতে পারে।