• দিল্লির ঐতিহাসিক 'চাঁদনি চক' , জানেন কে তৈরি করেছিলেন, প্রথমে এই বাজারের কী নাম ছিল?
    আজকাল | ১৫ সেপ্টেম্বর ২০২৫
  • আজকাল ওয়েবডেস্ক: পুরাতন দিল্লির কেন্দ্রস্থলে অবস্থিত একটি ব্যস্ত বাজার, চাঁদনি চক, জাতীয় রাজধানীর ঐতিহাসিক স্থানগুলির মধ্যে একটি যেখানে প্রতি বছর লক্ষ লক্ষ পর্যটক এবং স্থানীয়রা যান। কিন্তু আপনি কি জানেন, এই বাজারটি প্রায় ৩৭৫ বছরের পুরনো। একজন বিখ্যাত মুঘল সম্রাট তাঁর মেয়ের জন্য এটি নির্মাণ করেছিলেন?

    'চাঁদনি চক' কে নির্মাণ করেছিলেন?ঐতিহাসিক বিবরণ অনুসারে, পঞ্চম মুঘল সম্রাট শাহজাহান ১৬৫০ খ্রিস্টাব্দে চাঁদনী চক প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। মুঘল সাম্রাজ্যের রাজধানী আগ্রা থেকে আজকের পুরাতন দিল্লি শহরে স্থানান্তরের সময় এই বাজার নির্মাণ করেছিলেন শাহজাহান। মুঘলদ সম্রাট নতুন রাজধানীর নামকরণ করেছিলেন শাহজাহানাবাদ এবং রাজধানী শহরের কেন্দ্রীয় বাজার হিসেবে চাঁদনী চককে তুলে ধরেছিলেন।

    ঐতিহাসিকরা বলেন যে, শাহজাহানের কন্যা জাহানারা বেগম কেনাকাটা করতে খুব পছন্দ করতেন। তিনি দিল্লির বিভিন্ন বাজার থেকে পণ্য কিনতেন। সম্রাট তাঁর মেয়ের 'শখ' সম্পর্কে জানতে পেরে পুরাতন দিল্লির লালকেল্লার সামনে একটি সম্পূর্ণ বাজার স্থাপনের সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন।

    এই ঐতিহাসিক বাজারের নির্মাণকাজ ১৬৫০ সালে শুরু হয়েছিল। জাহানারা বেগম ব্যক্তিগতভাবে মুঘল রাজধানীর কেন্দ্রস্থলে একটি ব্যস্ত কিন্তু নান্দনিকভাবে মনোরম বাণিজ্যিক কেন্দ্র হিসেবে এই বিশাল বাজারটির নকশা করেছিলেন। শুরুতে বাজারে ১৫০০ টিরও বেশি ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান ছিল। চাঁদনি চক চারটি প্রধান অংশে বিভক্ত ছিল, যার মধ্যে উর্দু বাজার, জোহরি বাজার এবং আশরাফি বাজার অন্তর্ভুক্ত ছিল।

    যমুনা নদীর জল বাজারের মাঝখানে নির্মিত একটি কেন্দ্রীয় ফোয়ারার মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হত, ফলে এই বাজার নান্দনিকভাবে আকর্ষণীয় হয়ে ওঠে। 

    কেন 'চাঁদনি চক' নামকরণ?প্রাথমিকভাবে, বাজারটির কোনও নির্দিষ্ট নাম ছিল না। এটি কেবল শাহজাহানাবাদ বাজার নামে পরিচিত ছিল। তবে পরে এর নামকরণ করা হয় 'মুনলাইট স্কোয়ার', যার অর্থ 'চাঁদনি চক'। আসলে যা বাজারের মধ্য়ে থাকা ফোয়ারার জলে প্রতিফলিত চাঁদের আলোর প্রতিফলনের ইঙ্গিত।

    শাহজাহানের রাজত্বকালে, চাঁদনি চক কেবল একটি বাজার ছিল না। দিল্লির বুকে এই নির্মাণ মুঘল রাজধানীর প্রধান বাণিজ্যিক ও সাংস্কৃতিক কেন্দ্র হয়ে উঠেছিল। চাঁদনি চকের দোকানগুলির একটি নির্দিষ্ট ধরণে ছিল, যা মুঘল সাম্রাজ্যের বিশাল সম্পদের প্রতিফলন ঘটায় এবং বিশ্বজুড়ে, বিশেষ করে এশিয়া ও ইউরোপের ব্যবসায়ীদেরও আকর্ষণ করত।

    মুঘল যুগে 'চাঁদনি চক' কীভাবে দিল্লির অর্থনীতিকে চাঙ্গা করেছিল?সেই সময়ে চাঁদনি চক বাজার এবং এর আশেপাশের অঞ্চলগুলি অত্যন্ত জনপ্রিয় ছিল। ফলে এই অঞ্চল ও বাজার শীঘ্রই একটি অভিজাত এলাকায় পরিণত হয়েছিল। এখানে সেই সময়ের ধনী ব্যক্তিরা বাজার করতেন। ফলে এই বাজার দিল্লির বাণিজ্য ও অর্থনীতিতে বাড়তি উদ্যম যোগ করেছিল। এই বাজারের জিনিস বিশ্বের সকল প্রান্তের ব্যবসায়ীদের আকর্ষণ করেছিল।

    আজও, চাঁদনি চক দিল্লির একটি প্রধান বাণিজ্যিক কেন্দ্র হিসাবেই রয়ে গিয়েছে। তবে সংকীর্ণ-জনাকীর্ণ গলি এবং অতিরিক্ত জনসংখ্যার কারণে বাজারটি তার অতীত জাঁকজমক প্রায় হারিয়ে ফেলেছে।
  • Link to this news (আজকাল)