• চীনের মেগা প্রকল্পের মোকাবিলা করতে হবে, অরুণাচল প্রদেশে দেশের সর্বোচ্চ বাঁধের কাজ শুরু করেছে ভারত
    আজকাল | ১৫ সেপ্টেম্বর ২০২৫
  • আজকাল ওয়েবডেস্ক: তিব্বতের মালভূমির সীমান্তবর্তী ইয়ারলুং সাংপো নদীর উপর চীন বাঁধের কাজ শুরু করেছে বলে খবর প্রকাশের পরেই ভারত অরুণাচল প্রদেশে দেশের সর্বোচ্চ বাঁধ দিবাং প্রকল্প নির্মাণের কাজও শুরু করেছে। নিউজ১৮-এর প্রতিবেদন অনুযায়ী, ভারত সরকার দ্বারা পরিচালিত এনএইচপিসি লিমিটেড মূল বাঁধ নির্মাণের জন্য ১৭,০৬৯ কোটি টাকার একটি দরপত্র ডেকেছে। এই বাঁধ তৈরির ফলে চীনের বাঁধ থেকে হঠাৎ জল ছেড়ে দেওয়া জল আটকানো এবং ভারতে বন্যা রোধ করা যাবে।

    দরপত্র অনুযায়ী, ৯১ মাসের মধ্যে অর্থাৎ ২০৩২ সালের মধ্যে দিবাং বাঁধটি নির্মিত হবে বলে আশা করা হচ্ছে। এটি ভারতের কৌশলগত নিরাপত্তার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। গত বছর প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ২৮৮০ মেগাওয়াট ক্ষমতার দিবাং বহুমুখী প্রকল্পের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপনের পরেই অরুণাচল প্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী পেমা খান্ডু এবং ভারতীয় জনতা পার্টির (বিজেপি) নেতারা সম্প্রতি মিনলি গ্রামে এই বাঁধটি পরিদর্শন করেছেন।

    জুলাই মাসে প্রকাশিত খবর অনুযায়ী, চীন তিব্বত অঞ্চলে বিশ্বের সবচেয়ে বড় জলবিদ্যুৎ বাঁধ নির্মাণের কাজ শুরু করেছে। এই খবর চাউর হতেই তৎপরতা দেখাতে শুরু করেছে কেন্দ্র। ভারত তখন বাঁধের প্রভাব সম্পর্কে চীনের কাছে উদ্বেগ প্রকাশ করেছিল এবং বেজিংকে ভারতের স্বার্থ যাতে ক্ষতিগ্রস্ত না হয় তা নিশ্চিত করার আহ্বান জানিয়েছিল। 

    ২০২০ সালের গলওয়ান সংঘর্ষের পর ভারত এবং চীনের সম্পর্কে জটিলতা সৃষ্টি হয়। সম্প্রতি শাংহাই কোঅপারেশন শীর্ষ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এবং চীনা রাষ্ট্রপতি শি জিনপিংয়ের দ্বিপাক্ষিক বৈঠকের পর সেই জটিলতা কাটার ইঙ্গিত পাওয়া গিয়েছিল। কিন্তু চীনা বাঁধ ভারতের জন্য উদ্বেগের বিষয়।

    অরুণাচল প্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী খান্ডু আগেই সতর্ক করে দিয়েছিলেন যে চীনা বাঁধটি সম্পন্ন হলে সিয়াং এবং ব্রহ্মপুত্র নদীগুলি শুকিয়ে যেতে পারে এবং চীন বাঁধটিকে ‘জল বোমা’ হিসাবেও ব্যবহার করতে পারে। কারণ, বাঁধটি থেকে হঠাৎ জল ছাড়া হলে ভারতের বিস্তীর্ণ এলাকা প্লাবিত হতে পারে।

    দিবাং প্রকল্পটি কেন গুরুত্বপূর্ণ

    সিয়াং নদী তিব্বতে ইয়ারলুং সাংপো নামে উৎপন্ন হয়ে এটি অরুণাচল প্রদেশে প্রবেশ করেছে। অরুণাচল প্রদেশের পাহাড় থেকে উৎপন্ন দিবাং নদীর মূল ধারা সাংপোরই। এই নদীগুলি মিলিত হয়ে ব্রহ্মপুত্র নদের তৈরি হয়। অরুণাচল প্রদেশে নির্মিত দিবাং বাঁধটি চীনের যে কোনও নকশার বিরুদ্ধে ভারতের জন্য একটি সুরক্ষা ব্যবস্থা হিসেবে কাজ করবে। এনএইচপিসি-র দরপত্রে বলা হয়েছে, “দিবাং বহুমুখী প্রকল্প নির্মাণের দু’টি প্রধান উদ্দেশ্য হল বিদ্যুৎ উৎপাদন এবং বন্যা নিয়ন্ত্রণ।” 

    মুখ্যমন্ত্রী পেমা খান্ডু সম্প্রতি এনএইচপিসির চেয়ারম্যান এবং ব্যবস্থাপনা পরিচালক সঞ্জয় কুমার সিংহের সঙ্গে প্রস্তুতিমূলক কাজ পরিদর্শন করেছেন। মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ২০৩২ সালের মধ্যে এই মেগা প্রকল্পটি শেষ করার সম্ভাবনা রয়েছে।

    ২৭৮ মিটার উঁচু এই বাঁধটি হবে ভারতের সর্বোচ্চ বাঁধ। এটিতে বার্ষিক বিদ্যুৎ উৎপাদন হবে ১১,২২৩ মিলিয়ন ইউনিট। দিবাং নদী ব্রহ্মপুত্রের প্রধান উপনদী। নদীটি তিব্বত সীমান্তের কাছে হিমালয়ের দক্ষিণ প্রান্ত থেকে উৎপন্ন হয়ে দিবাং উপত্যকার মধ্য দিয়ে উত্তর থেকে দক্ষিণে প্রবাহিত হয়ে অবশেষে আসামের সাদিয়ার কাছে লোহিত নদীর সঙ্গে মিলিত হয়েছে। দিবাং এর উৎস থেকে সঙ্গমস্থল পর্যন্ত মোট দৈর্ঘ্য ১৯৫ কিলোমিটার। এই প্রকল্প থেকে অরুণাচল প্রদেশ প্রতি বছর বিনামূল্যে ৭০০ কোটি টাকার বিদ্যুৎ পাবে। প্রকল্পে মোট ব্যয় হবে ৩১,৮৭৫ কোটি টাকা। নিউজ১৮-এর প্রতিবেদন অনুযায়ী, বন্যা নিয়ন্ত্রণের জন্য বর্ষাকালে জলাধারকে পূর্ণ জলাধার স্তরের নীচে রেখে ১,২৮২ মিলিয়ন ঘনমিটার ধারণক্ষমতা তৈরি করা হবে।
  • Link to this news (আজকাল)