যখন তখন আর যাকে খুশি দলে যোগদান করানো যাবে না, বিধানসভা নির্বাচনের আগে বড় সিদ্ধান্ত তৃণমূলের ...
আজকাল | ১৫ সেপ্টেম্বর ২০২৫
আজকাল ওয়েবডেস্ক: রাজ্যে আসন্ন বিধানসভা নির্বাচনের আগে তৃণমূল কংগ্রেস দলে 'বেনো জলের' প্রবেশ রুখতে এবং দলের ভাবমূর্তি স্বচ্ছ রাখার জন্য তৃণমূল কংগ্রেস দলে যখন তখন যাকে খুশি যোগদান করানো নিয়ে 'কড়া' নির্দেশিকা জারি করলেন মুর্শিদাবাদ জেলায় তৃণমূল কংগ্রেসের জঙ্গিপুর সাংগঠনিক জেলা সভাপতি তথা জঙ্গিপুরের তৃণমূল সাংসদ খলিলুর রহমান।
সাংগঠনিক জেলার সমস্ত বিধায়ক, ব্লক সভাপতি এবং জেলার বিভিন্ন ফ্রন্ট-এর সভাপতিদের উদ্দেশ্যে জারি করা নির্দেশিকায় অন্য রাজনৈতিক দল থেকে কেউ তৃণমূল কংগ্রেসে যোগদান করতে চাইলে কীভাবে তা করাতে হবে তা বিস্তারিতভাবে উল্লেখ করেছেন। নির্দেশিকা না মেনে চললে তা 'অত্যন্ত গুরুতরভাবে বিবেচনা করা হবে।
তৃণমূল সুত্রের খবর, দলের জঙ্গিপুর সাংগঠনিক জেলায় গত বেশ কিছুদিন ধরে স্থানীয় স্তরে বিভিন্ন পর্যায়ের নেতারা বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীদের তৃণমূল কংগ্রেসের পতাকা ধরিয়ে দলে যোগদান করাচ্ছেন। স্থানীয় স্তরে কোন রাজনৈতিক দলের কোন পদাধিকারীরা তৃণমূল কংগ্রেসে যোগদান করছেন অনেক সময় সেই সংক্রান্ত বিস্তারিত তথ্য দলের জেলা নেতৃত্বের কাছে থাকছে না। এমনকী অভিযোগ উঠেছে দলের বিধায়করাও অন্য রাজনৈতিক দলের সদস্যদের তৃণমূল কংগ্রেসে যোগদান করালেও সেই সংক্রান্ত বিস্তারিত তথ্য সাংগঠনিক জেলা নেতৃত্বকে জানাচ্ছেন না।
রবিবার বিকেলে বৃষ্টি উপেক্ষা করে ফরাক্কার তিলডাঙ্গা এলাকায় স্থানীয় বিধায়ক মনিরুল ইসলাম এবং রাজ্য নেতা মোশারফ হোসেনের হাত ধরে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল থেকে কয়েকশো কর্মী-সমর্থক তৃণমূল কংগ্রেসে যোগদান করেছিলেন। অভিযোগ ওঠে এই যোগদান সংক্রান্ত কোনও তথ্য সাংগঠনিক জেলা সভাপতি খলিলুর রহমানের কাছে ছিল না। রবিবার সাংবাদিকরা তাঁকে এই সংক্রান্ত প্রশ্ন করলে সাংসদ জানিয়েছিলেন, যোগদানের কোনও তথ্য তাঁকে জানানো হয়নি এমনকী তাঁকে যোগদান সভায় যাওয়ার জন্য আমন্ত্রণও জানানো হয়নি। তৃণমূল সুত্রের খবর, এর পরই সাংগঠনিক জেলা সভাপতি দলের সমস্ত শীর্ষ নেতৃত্বের উদ্দেশ্যে একটি 'কড়া' নির্দেশিকা জারি করেন এবং সেই নির্দেশিকা পালন না করা হলে তা 'অত্যন্ত গুরুতরভাবে বিবেচনা করা হবে' বলে লিখিতভাবে 'হুশিয়ারি' দেন। দলের সাংগঠনিক জেলার পদাধিকারীদের উদ্দেশ্যে লেখা নির্দেশিকায় খলিলুর রহমান জানিয়েছেন, তৃণমূল কংগ্রেসের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক ব্যানার্জির নির্দেশ অনুযায়ী দলের নতুন ব্লক ও টাউন সভাপতিদের নাম ঘোষণা না হওয়া পর্যন্ত নতুন কোনও যোগদান অনুমোদন করা হবে না। প্রসঙ্গত গত ২৬ অগাস্ট কলকাতার ক্যামাক স্ট্রিটে তৃণমূল কংগ্রেসের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক ব্যানার্জি এবং দলের রাজ্য সভাপতি সুব্রত বক্সীর সঙ্গে জঙ্গিপুর সাংগঠনিক জেলা নেতৃত্বের দীর্ঘ বৈঠক হয়েছে। ওই বৈঠকে সাংগঠনিক জেলায় বেশ কিছু পরিবর্তন নিয়ে আলোচনা হলেও সোমবার সকাল পর্যন্ত ব্লক বা টাউন সভাপতি পদে পরিবর্তনের কোনও ঘোষণা হয়নি।
লিখিত নির্দেশিকায় খলিলুর রহমান আরও জানিয়েছেন, নতুন কমিটি ঘোষণা হওয়ার পর যদি কোনও নেতা অন্য রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীদের তৃণমূল কংগ্রেসের যোগদান করাতে চান তবে তাঁকে জেলা কমিটি, তৃণমূলের ভোটকুশলী সংস্থা (আইপ্যাক) এবং অভিষেক ব্যানার্জির কার্যালয়কে আগে থেকে অবহিত করার পরই সেই যোগদান করানো যাবে। ওই নির্দেশিকায় আরও লেখা রয়েছে দলের আনুষ্ঠানিক অনুমোদন ছাড়া কোনও যোগদান কার্যকর হবে না।
এর পাশাপাশি খলিলুর রহমান তাঁর নির্দেশিকায় অন্য কোনও রাজনৈতিক দল থেকে কোনও ব্যক্তিকে তৃণমূল কংগ্রেসে যোগদান করানোর আগে বেশ কয়েকটি তথ্য দলের জেলা নেতৃত্বকে আগে ভাগেই জানানোর নির্দেশ দিয়েছেন। সেই নির্দেশে লেখা রয়েছে, কোথায়, কখন , কাকে যোগদান করানো হচ্ছে তার বিস্তারিত বিবরণ-সহ যে ব্যক্তি তৃণমূল কংগ্রেসে যোগদান করছেন তিনি এর আগে কোন রাজনৈতিক দলের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন বা সেই রাজনৈতিক দলে তাঁর কী পদ ছিল তারও তথ্য রাখতে হবে। এর পাশাপাশি ওই ব্যক্তির বিস্তারিত বিবরণও দলের জেলা নেতৃত্বকে জানাতে হবে। যদিও খলিলুর রহমানের এই নির্দেশিকা প্রকাশ হওয়ার পরই দলের মধ্যেই বিভিন্ন রকমের কানাঘুষো শুরু হয়েছে। জঙ্গিপুর সাংগঠনিক জেলার চেয়ারম্যান জাকির হোসেন বলেন,' ক্যামাক স্ট্রিটে বৈঠকের সময় এই সংক্রান্ত কোনও বিষয় নিয়ে আমাদের আলোচনা হয়নি। সাংগঠনিক জেলা সভাপতি এই নির্দেশিকা জারি করার আগে আমাকে কিছুই জানাননি। খলিলুর রহমান কেন এই নির্দেশিকা জারি করেছেন তা উনিই বলতে পারবেন।' অন্যদিকে কিছুদিন আগেও খলিলুর রহমানের বিরুদ্ধে 'ফ্রন্টফুটে' থেকে তাঁকে 'আক্রমন' করলেও সোমবার কিছুটা 'ব্যাকফুটে' গিয়ে ফরাক্কার তৃণমূল বিধায়ক মনিরুল ইসলাম জানান,'রবিবার হঠাৎ করেই যোগদান কর্মসূচির অনুষ্ঠান ঠিক হওয়ায় জেলা সভাপতিকে সময়মতো জানানোর সম্ভব হয়নি। পরবর্তীকালে আমি অবশ্যই দলের নির্দেশিকা মেনে চলব।' তৃণমূল কংগ্রেসের অন্যতম রাজ্য সাধারণ সম্পাদক তথা নবগ্রামের বিধায়ক কানাই চন্দ্র মন্ডল বলেন,' আমার ধারণা খলিলুর রহমান দলের শীর্ষ নেতৃত্বের নির্দেশ অনুসারেই এই নির্দেশিকা জারি করেছেন। আমার বিধানসভা এলাকায় অন্য রাজনৈতিক দলের যে সমস্ত সদস্যদের তৃণমূল কংগ্রেসে যোগদান করানো হয় তাদের বিষয়ে বিস্তারিত বিবরণ আগেই জেলা কমিটি এবং আমাদের ভোট কুশলী সংস্থাকে বিস্তারিতভাবে জানানো হয়। সকলের অনুমোদন পাওয়ার পরই আমরা অন্য রাজনৈতিক দলের সদস্যদের নবগ্রাম বিধানসভা এলাকায় তৃণমূলে গ্রহণ করি।'
এই নির্দেশিকা জারির কারণ জানাতে গিয়ে খলিলুর রহমান বলেন ,'এই নির্দেশ আমার একার নয়। দলের রাজ্য নেতৃত্বের নির্দেশে আমি এই নির্দেশিকা সকলের জন্য জারি করেছি।' তিনি জানান ,'দলের রাজ্য নেতৃত্ব জানিয়েছেন খুব শীঘ্রই মুর্শিদাবাদ জেলায় দলের সংগঠনে বেশ কিছু পরিবর্তন হবে। তাই এখনই যেন কাউকে অন্য দল থেকে তৃণমূলে যোগদান না করানো হয়। আমি সেই নির্দেশ সকলকে জানিয়ে দিয়েছি।' খলিলুর রহমান বলেন ,'এই নির্দেশিকা মেনে চললে আমাদের দল আরও মজবুত হবে এবং সংগঠনে শৃঙ্খলা ফিরবে। ' অন্যদিকে ফরাক্কা বিধানসভা এলাকায় রবিবার যে যোগদান সভা হয়েছিল সোমবার সেটিকে স্বীকৃতি দিয়েছেন খলিলুর রহমান। তিনি বলেন ,'ওই বিষয়টি সমাধান হয়ে গিয়েছে। আমরা বিধায়কের নেতৃত্বে যোগদানকে অনুমোদন দিচ্ছি।'