বর্ষা বিদায় নিচ্ছে একাধিক রাজ্য থেকে, বাংলার পালা কবে? এখনও পর্যন্ত যা আপডেট
আজ তক | ১৫ সেপ্টেম্বর ২০২৫
প্রবেশের মতো সময়ের আগেই বিদায়ের পথে বর্ষা। প্রসঙ্গত, এই বছর, বর্ষাকাল সময়ের আগেই দেশের সব প্রান্তে এসে পড়েছিল। এখন সময়ের আগেই এর বিদায় পর্বও শুরু হয়েছে। মৌসম বিভাগের তথ্য অনুসারে, দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমি বায়ু ১৪ সেপ্টেম্বর, পশ্চিম রাজস্থানের কিছু অংশ থেকে বিদায় নিয়েছে, যেখানে এর বিদায় নেওয়ার স্বাভাবিক তারিখ ১৭ সেপ্টেম্বর। পাশাপাশি, পরবর্তী ২-৩ দিনের মধ্যে, রাজস্থানের আরও কিছু অংশ এবং পঞ্জাব ও গুজরাতের কিছু অংশ থেকে দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমি বায়ু বিদায় নেওয়ার অনুকূল পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে।
মৌসম বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, মৌসুমী বায়ু সাধারণত ১ জুনের মধ্যে কেরলে প্রবেশ করে এবং ৮ জুলাইয়ের মধ্যে সমগ্র দেশ জুড়ে বিস্তৃত হয়। এরপর ১৭ সেপ্টেম্বরের দিকে উত্তর-পশ্চিম ভারত থেকে এটি সরে যেতে শুরু করে এবং ১৫ অক্টোবরের মধ্যে দেশ থেকে সম্পূর্ণরূপে সরে যায়। IMD পূর্বাভাস দিয়েছে, এবার ১৫ সেপ্টেম্বরের দিকে পশ্চিম রাজস্থানের কিছু অংশ থেকে দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমি বায়ুর বিদায় নেওয়ার পরিস্থিতি অনুকূল ছিল। তবে, এই বিদায় একদিন আগেই ১৪ সেপ্টেম্বর থেকেই শুরু হয়েছে। উল্লেখ্য, এ বছর বর্ষাকাল ৮ জুলাই স্বাভাবিক তারিখের নয় দিন আগে সমগ্র দেশে ঢুকে পড়েছিল। ২০২০ সালের পর এ বছর বর্ষাকাল সবচেয়ে দ্রুত সমগ্র দেশে প্রবেশ করে, এর আগে ২০২০ সালে ২৬ জুন এমনটা ঘটেছিল। এবার কেরলে বর্ষার আগমনও হয়েছিল ২৪ মে। এরআগে, ২০০৯ সালে ভারতের মূল ভূখণ্ডে ২৩ মে বর্ষার আগমন হয়েছিল। এবারের বর্ষা মরসুমে দেশে এখন পর্যন্ত ৮৩৬.২ মিমি বৃষ্টিপাত হয়েছে, যেখানে স্বাভাবিক বৃষ্টিপাত ৭৭৮.৬ মিমি। পলে এবারে ৭ শতাংশ বেশি বৃষ্টি হয়েছে।
বাংলায় বর্ষা বিদায় কবে?
যদিও বাংলা থেকে বর্ষা বিদায়ের কোনও খবর দেয়নি আবহাওয়া দফতর ৷ বরং ইঙ্গিত দেওয়া হয়েছে বিশ্বকর্মা পুজোর আগে এবং পুজোর দিনেও ঝড়-বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে কলকাতা-সহ গাঙ্গেয় বঙ্গে ৷ কয়েকটি জেলায় ভারী বৃষ্টি হতে পারে। উত্তরবঙ্গে চলতি সপ্তাহে দুর্যোগ অব্যাহত থাকবে। আলিপুর আবহাওয়া দফতরের আবহাওয়া সংক্রান্ত বিশেষ বুলেটিনে বলা হয়েছে ওড়িশা, অন্ধ্রপ্রদেশ উপকূল সংলগ্ন বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট নিম্নচাপ অঞ্চলটি তেলেঙ্গানার উত্তর দিকে সরে গিয়েছে ৷ ফলে হায়দরাবাদে প্রচুর পরিমাণে বৃষ্টি হচ্ছে ৷ এই নিম্নচাপ অঞ্চলের প্রত্যক্ষ প্রভাব পশ্চিমবঙ্গের ওপর নেই ৷ তবে ঘূর্ণাবর্ত ঘনিয়ে উঠেছে ৷ সেই কারণে সাগর থেকে প্রচুর পরিমাণে জলীয় বাষ্প প্রবেশ করেছে বঙ্গের বাতাসে ৷ ফলে রাজ্যের উত্তর থেকে দক্ষিণের বেশ কিছু জেলায় ভারী বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে ৷
চলতি সপ্তাহের আবহাওয়া
দক্ষিণবঙ্গে আগামী বুধবার পর্যন্ত কলকাতা-সহ সব জেলায় বিক্ষিপ্তভাবে হালকা থেকে মাঝারি বৃষ্টির সম্ভাবনা ৷ ওই জেলাগুলিতে বজ্রপাতের সম্ভাবনাও রয়েছে। সোমবার মূলত পশ্চিমের জেলা পুরুলিয়া, বাঁকুড়া, পশ্চিম বর্ধমান, বীরভূম, মুর্শিদাবাদে হতে পারে ভারী বৃষ্টির সম্ভাবনা। সঙ্গে দমকা ঝোড়ো হাওয়া বইতে পারে ৷ মঙ্গল ও বুধবার দক্ষিণবঙ্গের সব জেলায় ঝোড়ো হাওয়া বইতে পারে। বৃহস্পতিবার পুরুলিয়া, বাঁকুড়া, দুই বর্ধমান, বীরভূম, মুর্শিদাবাদে ঝড়-বৃষ্টির পূর্বাভাস রয়েছে ৷ চলতি সপ্তাহজুড়ে ঝড়-বৃষ্টি চলবে। আগামী শনিবার পর্যন্ত দক্ষিণবঙ্গের সব জেলায় বিক্ষিপ্তভাবে হালকা থেকে মাঝারি বৃষ্টির সম্ভাবনা। উত্তরবঙ্গের ওপরের পাঁচটি জেলা দার্জিলিং, জলপাইগুড়ি, কালিম্পং, আলিপুরদুয়ার, কোচবিহারে বুধবার পর্যন্ত ভারী বৃষ্টির পূর্বাভাস। আজ জলপাইগুড়ি এবং আলিপুরদুয়ারে ভারী থেকে অতি ভারী বৃষ্টি হতে পারে। তাই জারি হয়েছে কমলা সতর্কতা। বাকি তিন জেলা দুই দিনাজপুর, মালদায় ঝড়-বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে ৷ মঙ্গলবারও সমতলের ওই তিন জেলায় রয়েছে হলুদ সতর্কতা ৷ শনিবার পর্যন্ত উত্তরের জেলাগুলিতে বিক্ষিপ্তভাবে চলবে ভারী বৃষ্টি ৷
পুজোয় বৃষ্টি হবে?
২০২৪ সালে বর্ষার বিদায়পর্ব ১৭ সেপ্টেম্বর শুরু হয়ে ১৫ অক্টোবর শেষ হয়েছিল। কলকাতা যেহেতু পূর্ব ভারতের একেবারে দক্ষিণ পশ্চিমে, তাই এখানে বর্ষার বিদায় সাধারণত একটু দেরিতেই হয়। আনুষ্ঠানিক ভাবে কলকাতা-সহ দক্ষিণবঙ্গে ১০ অক্টোবরের আশপাশে বর্ষা বিদায় হয়ে থেকে। তবে সাধারণত সেপ্টেম্বর মাসের ২০ তারিখ থেকে ভারী বৃষ্টির সম্ভাবনা ক্ষীণ হতে শুরু করে দক্ষিণবঙ্গে । চলতি বছরেও পূর্বের বছরগুলোর মতোই পরিস্থিতি থাকার সম্ভাবনা। অর্থাৎ বিক্ষিপ্ত ভাবে কয়েক পশলা বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে সেপ্টেম্বর মাসের শেষ সপ্তাহে। মৌসম ভবন জানিয়েছে, খুব শীঘ্রই বাংলাতেও বর্ষা বিদায়ের পালা শুরু হবে। তারিখ এখনই বলা যাচ্ছে না। তবে গোটা দেশের সঙ্গে তাল মিলিয়েই সেপ্টেম্বরের দ্বিতীয়ার্ধ থেকে অক্টোবরের মাঝামাঝি, এই পুরো সময়টা জুড়ে ধীরে ধীরে বর্ষা বিদায় নিতে পারে। তবে, দুর্গাপুজোর সময় বৃষ্টি হবে কিনা, তা জানতে গেলে অপেক্ষা করতে হবে মহালয়া পর্যন্ত।