• পদ্মার ইলিশ পশ্চিমবঙ্গে আজই ঢুকতে পারে, দাম কেমন? জেনে নিন
    আজ তক | ১৫ সেপ্টেম্বর ২০২৫
  • কোন ইলিশ স্বাদে সেরা? পদ্মার, নাকি গঙ্গার—এই বিতর্ক বহুদিনের। দুই বাংলার মানুষের আবেগ, সংস্কৃতি ও ভোজনরসিকতার সঙ্গে জড়িয়ে আছে এই মাছ। ভোজনরসিক বাঙালির কাছে ইলিশ কেবল একটি মাছ নয়—এটি আবেগ, ঐতিহ্য এবং দুই বাংলার সম্পর্কের সেতুবন্ধন। পদ্মা হোক বা গঙ্গা, ইলিশের স্বাদ নিয়ে বিতর্ক থাকলেও এই মাছকে ঘিরে আবেগ দুই বাংলার মানুষকে এক সুতোয় বাঁধা। বাংলাদেশ ২০১৫ সালে জাতীয় রফতানি নীতিতে শর্তসাপেক্ষে ইলিশকে রফতানিযোগ্য তালিকায় রাখে। এরপর ২০১৯ সালে প্রথমবার পুজোর মরসুমে ৫০০ টন ইলিশ রফতানি করা হয় কলকাতায়। ২০২০ সালে তা বেড়ে দাঁড়ায় এক হাজার ৮৫০ টনে।
    এরপর ২০২১ সালে রফতানির অনুমতি ছিল চার হাজার ৬০০ টন, তবে কলকাতা এসেছিল প্রায় এক হাজার ২০০ টন। ২০২২ সালে অনুমোদিত ছিল দুই হাজার ৯০০ টন, তবে ভারতে আসে এক হাজার ৩০০ টন। ২০২৩ সালে তিন হাজার ৯৫০ টন অনুমোদনের বিপরীতে দেশে আসে মাত্র ৫৮৭ টন। ২০২৪ সালে অনুমতি ছিল দুই হাজার ৪২০ টন, এসেছিল মাত্র ৫৭৭ টন। এবারও সেই নিয়মের অন্যথা হচ্ছে না। ওপার বাংলা থেকে আসছে পুজোর বিশেষ উপহার।

    পুজোর  আগে ১২০০ মেট্রিক টন ইলিশ পাঠানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে বাংলাদেশের বাণিজ্য মন্ত্রক। কেজি প্রতি ন্যূনতম মূল্য পড়ছে ১২.৫ মার্কিন ডলার অর্থাৎ, বাংলাদেশি মুদ্রায় তাঁর দাম দাঁড়াচ্ছে ১৫২৫ টাকা। শোনা যাচ্ছে,যাসবকিছু ঠিকঠাক থাকলে সোমবার  থেকে পেট্রাপোল সীমান্ত পেরিয়ে ভারতে ঢুকতে পারে ইলিশ ভর্তি ট্রাক। ফিস ইমপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের সেক্রেটারি সৈয়দ আনোয়ার মাকসুদ জানিয়েছেন, 'পুজোর আগে ইলিশ রফতানিতে বাংলাদেশ সরকার অনুমতি দেওয়ায় আমরা খুশি। এবারে পুজো এগিয়ে আশায় আশা করছি খুব শীঘ্রই ইলিশ আসতে শুরু করবে।'

    এদিকে বাংলাদেশের বাজারে ইলিশ যখন আমজনতার ক্রয়ক্ষমতার বাইরে, সাধারণ মানুষ যখন চড়া দামের কারণে পাতে ইলিশ তুলতে পারছেন না, তখন ভারতে তুলনামূলক কম দামে ইলিশ পাঠানো নিয়ে সেদেশের  সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে চলছে নানান আলোচনা ও সমালোচনা। অনেকে বলছেন, দেশের বাজারে ইলিশের যে দাম তার চেয়ে কম দামে ভারতে ইলিশ পাঠাচ্ছে সরকার। যা মোটেই কাম্য নয়। যদিও বাংলাদেশের মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ উপদেষ্টা ফরিদা আখতারের দাবি, এবার তুলনামূলক বেশি দামে ইলিশ পাঠানো হচ্ছে ভারতে। দুর্গাপুজোয়  ভারতে ইলিশ পাঠানোর বিষয়ে তিনি বলেন, আমরা বারবারই বলেছি, দেশের চাহিদা সর্বাগ্রে গুরুত্ব দেওয়া হবে। প্রতিবেশী হিসেবে ভারতের অনুরোধে কিছু ইলিশ পাঠাতে হচ্ছে। তবে এবার চাহিদার তুলনায় অনেক কম এবং বেশি দামে ইলিশ পাঠানো হচ্ছে।

    প্রসঙ্গত, বাংলাদেশে এবার ইলিশ উৎপাদন হয়েছে স্মরণকালের মধ্যে সবচেয়ে কম। কলকাতার তুলনায় ঢাকসহ বাংলাদেশের বাজারে ইলিশের দাম অনেক বেশি। উৎপাদন কম হওয়ায় মৎস্যজীবীদের  মাথায় হাত পড়েছে। তার মধ্যেও ভারতে ইলিশ পাঠানোর সিদ্ধান্তকে কূটনৈতিক সৌজন্য ঠিক সম্পর্ককে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার বার্তা হিসেবেই দেখছে পর্যবেক্ষক মহল। মহম্মদ ইউনুসের সরকার এর আগে বাংলাদেশের সুস্বাদু আম পাঠিয়েছে ভারতের রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী এবং অসম, ত্রিপুরা, মেঘালয় ও পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রীদের। শেখ হাসিনা সরকারের সময় চালু হওয়া আম ও ইলিশ কূটনীতি ইউনুস সরকারও বজায় রেখেছে।

     ফিশ ইম্পোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের আশা, সোমবার থেকেই এ রাজ্যে ঢুকতে শুরু করতে পারে বাংলাদেশের ইলিশ। দামের বিষয়ে অ্যাসোসিয়েশনের তরফে জানানো হয়েছে, পাইকারি বাজারে এক কেজি ওজনের ইলিশ ১৬০০ টাকার কাছাকাছি দাম পড়তে পারে। তবে খুচরো বাজারে দাম বেড়ে পৌঁছাতে পারে কেজি প্রতি ২০০০-২২০০ টাকায়।
  • Link to this news (আজ তক)