মহারাষ্ট্রে ভোটার তালিকা বৃদ্ধি নিয়ে বিতর্ক, নির্বাচনী স্বচ্ছতায় প্রশ্নচিহ্ন
আজকাল | ১৬ সেপ্টেম্বর ২০২৫
আজকাল ওয়েবডেস্ক: মহারাষ্ট্রের ভোটার তালিকা মাত্র পাঁচ মাসে প্রায় ৪০.৮১ লক্ষ বেড়ে যাওয়ায় তীব্র বিতর্ক শুরু হয়েছে। জনসংখ্যাগত তথ্য ও অতীত প্রবণতার সঙ্গে এই বৃদ্ধির কোনও সামঞ্জস্য খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। বিরোধীদের অভিযোগ, ২০২৪ সালের বিধানসভা নির্বাচনের আগে ভোটার তালিকা কারচুপি করে শাসক জোট মহাযুতির পক্ষে সুবিধা তৈরি করা হয়েছে।
২০২৪ সালের জুনে লোকসভা নির্বাচনের সময়ে মহারাষ্ট্রে ভোটার সংখ্যা ছিল প্রায় ৯.২৯ কোটি। কিন্তু নভেম্বরের বিধানসভা ভোটের সময় সেটি বেড়ে দাঁড়ায় ৯.৭ কোটি। অর্থাৎ পাঁচ মাসে নয়া ভোটার যোগ হয়েছে প্রায় ৪০.৮১ লক্ষ। বিশেষজ্ঞদের মতে, এই সংখ্যা একেবারেই অস্বাভাবিক, কারণ রাজ্যের জনসংখ্যা বৃদ্ধি বা অভিবাসনের কোনও তথ্য এত বিপুল ভোটার বৃদ্ধিকে সমর্থন করে না। জাতীয় জনসংখ্যা কমিশনের হিসাব অনুযায়ী, রাজ্যে প্রাপ্তবয়স্ক নাগরিকের সংখ্যা সর্বোচ্চ ৯.৫ থেকে ৯.৬ কোটির মধ্যে হওয়া উচিত, অথচ ভোটার তালিকায় দেখা যাচ্ছে তার চেয়ে বেশি নাম।
সবচেয়ে বিস্ময়কর বিষয় হল, ভোটার তালিকায় সংযোজনটি হয়েছে কিছু নির্দিষ্ট সময়ে হঠাৎ করে। আগস্ট মাসের ৬ থেকে ৩০ তারিখের মধ্যে মাত্র তিন সপ্তাহে প্রায় ২০.৭৮ লক্ষ ভোটার যোগ হয়েছে। এর মধ্যে নতুন ১৮-১৯ বছর বয়সী ভোটার ছিল মাত্র সাড়ে তিন লক্ষ। সবচেয়ে বেশি সংযোজন দেখা গেছে ২০ থেকে ২৯ বছরের ভোটার শ্রেণিতে, যেখানে সংখ্যা প্রায় সাড়ে সাত লক্ষ। আবার অক্টোবরের মাঝামাঝি থেকে শেষের চার দিনে আরও ৬.৬ লক্ষ ভোটার যোগ হয়। নির্বাচন কমিশনের রেকর্ডে এত অল্প সময়ে এত ভোটার সংযোজন আগে কখনও দেখা যায়নি।
এই বৃদ্ধি মূলত সেইসব এলাকায় হয়েছে যেখানে বিজেপি-শিবসেনা (শিন্ডে গোষ্ঠী)-এনসিপি (অজিত পাওয়ার) নেতৃত্বাধীন মহাযুতি জোট ব্যাপক জয়লাভ করে। তুলনায় ২০১৯ সালে ভোটার বৃদ্ধির হার ছিল অনেক কম। বর্তমান বৃদ্ধি ২০১৯ সালের চেয়ে আড়াইশো শতাংশ বেশি। এতে বিরোধীরা অভিযোগ করছে, ভোটার তালিকায় ভুয়ো নাম ঢুকিয়ে নির্বাচনের ফলাফলকে প্রভাবিত করা হয়েছে।
কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধী থেকে শুরু করে মহা বিকাশ আঘাদির (শিবসেনা-উদ্ধব, কংগ্রেস, এনসিপি-শরদ পাওয়ার, বাম দল ও কৃষক মজদুর পার্টি) নেতারা প্রকাশ্যে অভিযোগ করেছেন যে শিল্পকারখানার মাপে ভুয়ো ভোটার যোগ করা হয়েছে। ২০২৪ সালের ১৯ অক্টোবর মহারাষ্ট্রের মুখ্য নির্বাচন আধিকারিকের কাছে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ জমা দেওয়া হয়। এর পরও নির্বাচন কমিশনের তরফে কোনও নির্দিষ্ট তদন্ত হয়নি। বরং নির্বাচন কমিশন সাধারণ ও অস্পষ্ট মন্তব্য করে অভিযোগগুলোকে গুরুত্বহীন করে দিয়েছে।
প্রশ্ন উঠছে নির্বাচন কমিশনের ভূমিকা নিয়েও। ২০২৪ সালে মহারাষ্ট্রে বিধানসভা ভোট এক মাস পিছিয়ে ২০ নভেম্বর করা হয়। যুক্তি হিসেবে বলা হয়েছিল কাশ্মীরের নিরাপত্তাজনিত পরিস্থিতি ও বর্ষাকালে তালিকা যাচাইয়ে সমস্যা। এই দেরিতে ভোটার রেজিস্ট্রেশনের সময়সীমা দীর্ঘায়িত হয় এবং সেই সুযোগেই বিপুল ভোটার যোগ হয় বলে অভিযোগ।
মাত্র পাঁচ মাসের মধ্যে মহাযুতি লোকসভা ভোটে পরাজিত হলেও বিধানসভায় একচেটিয়া জয়লাভ করে। বিরোধীদের দাবি, ভোটার তালিকা কারচুপির ফলেই এই কাণ্ড ঘটেছে। যদি সত্যিই ভুয়ো ভোটার যোগ হয়ে থাকে তবে কয়েক ডজন আসনের ফলাফল বদলে যেতে পারে। ফলে শুধু নির্বাচনী ফল নয়, গণতন্ত্রের প্রতি মানুষের আস্থা নিয়েও বড় প্রশ্ন উঠে যাচ্ছে।
মহারাষ্ট্রের এই ভোটার তালিকা বৃদ্ধি এখন জাতীয় ইস্যুতে পরিণত হয়েছে। বিরোধীরা বিচার বিভাগীয় তদন্ত দাবি করেছে। কিন্তু নির্বাচন কমিশন এখনও পর্যন্ত বিস্তারিত তথ্য প্রকাশ করেনি। ফলে নির্বাচনের সততা নিয়ে যে সন্দেহ তৈরি হয়েছে তা আরও ঘনীভূত হচ্ছে, আর মহারাষ্ট্র রাজনীতি নতুন বিতর্কে ঢুকে পড়ছে।