বিদ্যুৎবিভ্রাট নাকি অন্য কিছু? সপ্তাহের প্রথম দিনেই থমকে গেল মেট্রো চলাচল, ব্যাপক ভোগান্তি যাত্রীদের...
আজকাল | ১৬ সেপ্টেম্বর ২০২৫
আজকাল ওয়েবডেস্ক: গত কয়েকদিনে বারেবারে সামনে এসেছে মেট্রোবিভ্রাটের ঘটনা। সপ্তাহের শুরুর দিনে ফের একই ঘটনা। ফের মেট্রো বিভ্রাট খাস কলকাতায়। নিত্যযাত্রীদের ব্যাপক ভোগান্তি।
প্রতিবেদন লেখার সময় পর্যন্ত জানা গিয়েছে, সোমবার আচমকাই গিরিশপার্ক থেকে দক্ষিণেশ্বর পর্যন্ত মেট্রো চলাচল বন্ধ হয়ে যায় । ফলে শহিদ ক্ষুদিরাম থেকে যাত্রা শুরু করা মেট্রোগুলি সময়ে রওনা দিলেও, সময়ে গন্তব্যে পৌঁছতে পারেনি। মাঝরাস্তায় ঘোষণা করা হয়, মেট্রো চলবে কেবল গিরিশপার্ক পর্যন্ত। প্রাথমিকভাবে জানা গিয়েছে, গিরিশপার্ক থেকে দক্ষিণেশ্বর পর্যন্ত বিদ্যুৎবিভ্রাটের কারণেই মেট্রো চলাচল স্থগিত হয়।
এর আগে, আট সেপ্টেম্বর, সোমবার বিভ্রাট দেখা দিয়েছিল। ওই দিন দক্ষিণেশ্বর থেকে শহিদ ক্ষুদিরামের দিকে যাওয়ার সময়ে মহানায়ক উত্তম কুমার (টালিগঞ্জ) স্টেশনের পর থেকে আর চলাচল করছিল না মেট্রো। বাধ্য হয়েই যাত্রীদের টালিগঞ্জেই নামতে হয় সেদিন। মেট্রো সূত্রে সেদিন জানানো হয়, কবি নজরুল স্টেশনে মেট্রোর একটি রেকে সমস্যা দেখা যায় সকাল ৮.২০ মিনিট নাগাদ। তার জেরেই মেট্রো পরিষেবায় চরম বিভ্রাট। পরিষেবা না পেয়ে স্বাভাবিকভাবেই প্রবল ক্ষুব্ধ হন যাত্রীরা।
সোমবার সকাল তখন ৮.২০ মিনিট। সেই সময়ই কবি নজরুল স্টেশনে শহিদ ক্ষুদিরামগামী একটি মেট্রো রেক দাঁড়িয়ে পড়ে। মেট্রো রেল সূত্রে ঘটনা প্রসঙ্গে জানা যায়, যান্ত্রিক ত্রুটির জেরে রেকটি দাঁড়িয়ে পড়ে। নামিয়ে দেওয়া হয় যাত্রীদের। যান্ত্রিক ত্রুটির ফলে কবি নজরুল থেকে শহিদ ক্ষুদিরাম পর্যন্ত মেট্রো পরিষেবা বন্ধ হয়ে যায়। মহানায়ক উত্তমকুমার (টালিগঞ্জ) স্টেশন থেকে দক্ষিণেশ্বর পর্যন্ত মেট্রো চলছিল। এভাবে প্রায় ঘণ্টাখানেক কেটে যায়। তার পরে শুরু হয় পরিষেবা। অফিস টাইমে মেট্রো বিভ্রাটের জেরে যে পরিমাণ ভিড় জমে যায় স্টেশনগুলিতে। ফলে পরিষেবা স্বাভাবিক হতে কিছুটা সময় যে লাগে যায়।
এই প্রসঙ্গে উল্লেখ্য, গত মাসেই হাওড়া থেকে সেক্টর ফাইভ -সহ নতুন তিন রুটের মেট্রো পরিষেবা চালু হয়েছে। তারপর থেকে ব্লু লাইনের (দক্ষিণেশ্বর-শহিদ ক্ষুদিরাম) মেট্রো পরিষেবা নিয়ে নানা অভিযোগ উঠে আসছে। প্রায় রোজই ট্রেন দেরিতে আসে। তার উপর আবার মেট্রোর দরজা সময়মতো বন্ধ না হওয়ার ফলে দীর্ঘক্ষণ একই স্টেশনে দাঁড়িয়ে রয়েছে মেট্রো। নির্ধারিত সময়ে গন্তব্যে পৌঁছতে রীতিমতো বেগ পেতে হচ্ছে যাত্রীদের।
মেট্রো প্রসঙ্গে আরও একটি তথ্য উল্লেখ্য, মঙ্গলবার, ৯ সেপ্টেম্বর জাহাজে করে দুটি নতুন ডালিয়ান রেক এসে পৌঁছেছে শ্যামাপ্রসাদ মুখার্জি বন্দরে। এই রেকগুলি বিশ্বব্যাপী দরপত্রের মাধ্যমে সংগ্রহ করা হয়েছে। মোট ১৬টি কোচ জাহাজ থেকে নামানো হয়।
জানা গিয়েছে নয়া রেক-এ বেশ কিছু সুযোগ সুবিধা রয়েছে। এই রেকগুলিতে অন্যান্য চলমান এসি রেকের তুলনায় ১৯০ মিমি চওড়া দরজা রয়েছে। তাছাড়া, যাত্রীদের আরামের জন্য বসার ব্যবস্থা, উন্নত এয়ার কন্ডিশনিং সিস্টেম, শব্দ কমানোর বৈশিষ্ট্য এবং চোখ ধাঁধানো আলোকসজ্জার মতো কিছু সংযোজন রয়েছে বলেই জানা গিয়েছে মেট্রোর তরফে। এর আগেও, দু' দফায় জাহাজে করে ৩২টি কামরা এসেছে শহরে। এই দফায় আরও ১৬টি কামরা এল। মোট তিন দফায় ৪৮টি কামরা এল সাম্প্রতিক সময়ে। সূত্রের খবর, বন্দর থেকে শিয়ালদহ বজবজ শাখার রেললাইন ব্যবহার করে রেক দুটিকে পৌঁছনো হবে নোয়াপাড়া কারশেডে।
জানা গিয়েছে, এই নয়া রেকগুলি চিনের ডালিয়ান বন্দর থেকে আনা হয়েছে কলকাতায় জলপথে। এই ডালিয়ান রেকের ব্যবহারের পরিকল্পনা বহুদিনের। ২০২৩ থেকে শুরু হয়েছিল এই রেকের বাণিজ্যিক যাত্রা।
প্রসঙ্গত, ২২ আগস্ট যশোর রোড মেট্রো স্টেশনে সবুজ পতাকা উড়িয়ে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি কলকাতা মেট্রোর বিস্তারের এক নতুন অধ্যায়ের সূচনা করেছিলেন। একসঙ্গে তিনটি নতুন করিডরের উদ্বোধনের ফলে মেট্রোর দৈর্ঘ্য এক লাফে বেড়ে গিয়েছে ১৪ কিলোমিটার। এর মধ্যে গ্রিন লাইন চালু হয়ে যায় ২২ আগস্ট থেকে। আর ইয়েলো ও অরেঞ্জ লাইনে যাত্রী পরিবহন শুরু হয় গত ২৫ আগস্ট থেকে।