আজকাল ওয়েবডেস্ক: বৃহস্পতিবার রাত্রিবেলা। বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে তখন হই-হুল্লোড়, উচ্ছ্বাস। চলছিল রুহানিয়াৎ। তার মাঝেই সামনে আসে মর্মান্তিক ঘটনা। সামনে আসে ওই বিশ্ববিদ্যালয়ের এক ছাত্রীর মৃত্যুর ঘটনা। সোমবার ওই ঘটনায় নয়া মোড়। সূত্রের খবর, সোমবার ওই পড়ুয়ার বাবা-মা যাদবপুর থানায় গিয়ে অভিযোগ দায়ের করেছেন।
ওই পড়ুয়া নিমতার বাসিন্দা। সূত্রের খবর, ময়নাতদন্ত রিপোর্টে জানা গিয়েছে, তাঁর মৃত্যু হয়েছে জলে ডুবেই। ঘটনার পর থেকেই যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় এবং সিসিটিভি প্রসঙ্গ তুলেছেন কেউ কেউ। ঘটনার নয়া মোড় সোমবার। জানা গিয়েছে, সোমবার মৃতার বাবার অভিযোগের ভিত্তিতে মামলা দায়ের করেছে পুলিশ।
একইসঙ্গে জানা গিয়েছে, ঘটনার দিনে, ওই ঘটনা প্রকাশ্যে আসার ঘণ্টাখানেক আগেও পড়ুয়া বাড়িতে ফোন করে কথা বলেছিলেন। জানিয়েছিলেন, কিছুক্ষণেই বেরিয়ে যাবেন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে। তবে ওই ফোনকলের ঘণ্টাখানেক পরেই ফোন যায় বাড়িতে, পড়ুয়ার পরিবারে তাঁরই এক সহপাঠী ফোন করে জানান, তিনি জলে পড়ে গিয়েছিলেন। পড়ুয়া ওই সময় শৌচালয়ে যাচ্ছিলেন বলেও জানা গিয়েছে।
বৃহস্পতিবার রাত্রি দশটা-সাড়ে দশটা নাগাদ যাদবপুর ইউনিভার্সিটির চার নম্বর গেটের সামনে পুকুরে ওই ছাত্রীকে ভাসমান অবস্থায় দেখা যায়। বাকি ছাত্র-ছাত্রীরা ওই পড়ুয়াকে ওই অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখেই তড়িঘড়ি তাঁকে উদ্ধার করার চেষ্টা করেন। বাঁচানোর চেষ্টা করা হয়। তৎক্ষণাৎ অ্যাম্বুলেন্স ডেকে হাসপাতাল নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে চিকিৎসকরা তাঁকে সিপিআর দিয়ে জল বের করার চেষ্টা করে বাঁচানোর চেষ্টা করেন। কিন্তু লাভ হয়নি। হাসপাতালের তরফে ওই পড়ুয়াকে মৃত বলে ঘোষণা করা হয়।
রুহানিয়াৎ। যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের ড্রামা ক্লাব আয়োজিত অনুষ্ঠান। হইচই, অনুষ্ঠান, গানবাজনার মাঝেই শোকের বাতাবরণ। বৃহস্পতিবার রাতে প্রকাশ্যে আসে, হুল্লোড়ের মাঝেই, বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের ভিতরেই মৃত্যু হয়েছে এক ছাত্রীর। ইতিমধ্যেই প্রকাশ্যে এসেছে ইংরেজি বিভাগের তৃতীয় বর্ষের ওই ছাত্রীর পরিচয়। ঘটনা প্রকাশ্যে আসার পর থেকেই তোলপাড়। কেউ কেউ স্বপ্নদীপের প্রসঙ্গ টেনে আনছেন। কেউ কেউ ফের যাদবপুরের সিসিটিভি ইস্যু নিয়ে সরব হয়েছেন।
এসবের মাঝেই শুক্রবার সকাল থেকে আলোচনা শুরু হয়, অনুষ্ঠানের 'অনুমতি' নিয়ে। সংবাদমাধ্যমে যাদবপুরের সহ-উপাচার্য অমিতাভ দত্ত ড্রামা ক্লাবের অনুষ্ঠান প্রসঙ্গে জানিয়েছেন, অনুষ্ঠানের প্রয়োজনীয় অনুমতি নেওয়া হলেও, বেশি রাত পর্যন্ত চলার অনুমতি নেওয়া হয়নি। তেমনটাই খবর সূত্রের। যদিও তিনিই আবার জানিয়েছেন, অনেক সময়েই নির্ধারিত সময় পেরিয়ে যায় অনুষ্ঠানের।
অনুমতি কতক্ষণের ছিল? প্রশ্নের খোঁজে ড্রামা ক্লাবের সদস্যদের সঙ্গে যোগাযোগ করার চেষ্টা হলে, কেউ কেউ ফোন ধরেননি, কেউ আবার সাফ জানিয়েছেন তিনি কিছু বলতে পারবেন না ঘটনা সম্পর্কে। বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্কের এক গবেষক এই বিষয়ে আলোকপাত করেছেন কিছুটা। তাঁর বক্তব্য, বিশ্ববিদ্যালয় অনুমতি দিয়েছিল, দিয়েছিল বিদ্যুৎ বিভাগও। নইলে স্টল দেওয়াই যেত না। সময় কতক্ষণ? বহু বছরের অভিজ্ঞতায় তিনি জানান, 'লিখিত অনুমতি অনেক রাত্রি পর্যন্ত অনুষ্ঠানের থাকে না ঠিকই। কিন্তু অভিজ্ঞতায় জানি, অনেক সময় অনুষ্ঠান ১১-১১.৩০টা পর্যন্ত চলে। স্বাভাবিক ঘটনা এসব।' একই সঙ্গে তিনি জানান, বৃহস্পতিবার অনুষ্ঠান এবং স্টলের কারণে বেশকিছু দৃষ্টিহীন পড়ুয়া রেজিস্ট্রারের অফিসে অভিযোগ জানিয়েছিলেন। জানিয়েছিলেন, তাঁদের চলাফেরায় সমস্যার কথা।