আগামী ২০ বছরে খোলনলচে বদলে যাবে ভারতীয় সেনার, কলকাতায় এসে নয়া পরিকল্পনার ঘোষণা করলেন মোদি...
আজকাল | ১৬ সেপ্টেম্বর ২০২৫
আজকাল ওয়েবডেস্ক: সোমবার কলকাতায় পূর্বাঞ্চলীয় সেনা কমান্ডের উদ্যোগে অনুষ্ঠিত হল কম্বাইন্ড কমান্ডার্স’ কনফারেন্স (CCC-2025)। এবারের সম্মেলনের মূল বিষয় ছিল ‘Year of Reforms - Transformation for the Future’। যার বাংলা তর্জমা করলে দাঁড়ায় ‘সংস্কারের বছর এবং ভবিষ্যতের জন্য রূপান্তর’। এই মঞ্চ থেকেই আগামী ২০ বছরে ভারতীয় সশস্ত্র বাহিনীর জন্য নয়া পরিকল্পনার ঘোষণা করলেন প্রধানমন্ত্রী। এদিন প্রধানমন্ত্রী ‘Indian Armed Forces Vision 2047’ নামে এক ঐতিহাসিক নথি প্রকাশ করেন। ওই দৃষ্টিপত্রে আগামী দুই দশকে ভারতীয় সশস্ত্র বাহিনীর রূপান্তর ও ভবিষ্যত প্রস্তুতির স্পষ্ট রূপরেখা তুলে ধরা হয়েছে। পাশাপাশি, এদিন উচ্চপর্যায়ের এক বৈঠকে দেশের সশস্ত্র বাহিনীকে আধুনিক ও ভবিষ্যত-প্রস্তুত করে গড়ে তোলার লক্ষ্যে নানা কৌশলগত বিষয়ে আলোচনা হয়। বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয় বাহিনীর আধুনিকীকরণ, তিন বাহিনীর সংহতি, যৌথতা বৃদ্ধি এবং বহুমুখী যুদ্ধক্ষেত্রে (multi-domain warfare) সক্ষমতা জোরদারের মতো বিষয়গুলিতে।
প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি সম্মেলনে ভাষণ দিতে গিয়ে ভারতীয় সশস্ত্র বাহিনীর সাহস ও অবদানের প্রশংসা করেন। তিনি বিশেষভাবে ‘অপারেশন সিঁদুরে’ সেনাদের কৃতিত্বের কথা উল্লেখ করেন। সেনা সূত্রে জানানো হয়েছএ, এই সম্মেলন কেবল বর্তমান চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় দিকনির্দেশই নয়, বরং ২০৪৭ সালের মধ্যে ভারতকে একটি শক্তিশালী, আধুনিক ও আত্মনির্ভর প্রতিরক্ষা শক্তি হিসেবে গড়ে তোলার পথও সুগম করছে। উল্লেখ্য, সম্প্রতি ভারতের সামুদ্রিক প্রতিরক্ষার ইতিহাসে নতুন মাইলফলক রচনা করেছে গার্ডেনরিচ শিপবিল্ডার্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ার্স (জিআরএসই) লিমিটেড। ১৩ সেপ্টেম্বর শনিবার জিআরএসই ভারতীয় নৌবাহিনীর হাতে তুলে দিল আধুনিক প্রযুক্তিতে নির্মিত অগভীর জলের সাবমেরিন-বিধ্বংসী যুদ্ধজাহাজ অ্যান্ড্রোথ (Androth)। এটি আটটি এএসডব্লিউ এসডব্লিউসি (Anti-Submarine Warfare Shallow Water Craft)-এর সিরিজের দ্বিতীয় জাহাজ। এর আগে ২০২৫ সালের ৮ মে জিআরএসই প্রথম জাহাজ আর্নালা হস্তান্তর করেছিল, যা ১৮ জুন কমিশন করা হয়। মাত্র চার মাসের ব্যবধানেই দ্বিতীয় জাহাজ সরবরাহ করে গার্ডেনরিচ শিপবিল্ডার্স আবারও তাদের দক্ষতা ও সময়নিষ্ঠতার প্রমাণ দিল।
নৌবাহিনীর পক্ষে অ্যান্ড্রোথ গ্রহণ করেন পূর্ব নৌ-সেনা কমান্ডের (ইএনসি) টেকনিক্যাল চিফ অফ স্টাফ রিয়ার অ্যাডমিরাল রাভনিশ শেঠ। লাক্ষাদ্বীপ দ্বীপপুঞ্জের অ্যান্ড্রোথ দ্বীপের নামে নামাঙ্কিত এই যুদ্ধজাহাজে রয়েছে দেশীয়ভাবে তৈরি ৩০ মিমি নৌ-সারফেস গান (NSG)। যা জিআরএসই নিজস্বভাবে উৎপাদন করেছে। এ ছাড়াও রয়েছে উন্নত কমব্যাট ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম, হালকা টর্পেডো ও সাবমেরিন-বিধ্বংসী রকেট। এর ফলে, উপকূলবর্তী অগভীর জলে নজরদারি, অনুসন্ধান ও সাবমেরিন দমন সব ক্ষেত্রেই জাহাজটি হবে কার্যকর। এই জাহাজ নির্মাণে প্রায় ৮৮ শতাংশ দেশীয় সামগ্রী ব্যবহার করা হয়েছে। সরকারের ‘মেক ইন ইন্ডিয়া’ উদ্যোগকে এগিয়ে নিয়ে যেতে জিআরএসই যে কতটা প্রতিশ্রুতিবদ্ধ, তারই প্রমাণ অ্যান্ড্রোথ। অ্যান্ড্রোথ তিনটি মেরিন ডিজেল ইঞ্জিনচালিত ওয়াটার জেটের সাহায্যে উচ্চগতিতে চলাচল করতে পারে। মাত্র ২.৭ মিটার গভীর জলেও এটি সাবলীলভাবে চলতে সক্ষম। ফলে উপকূলবর্তী অগভীর অঞ্চলেও সহজেই সাবমেরিন হুমকি শনাক্ত ও প্রতিরোধ সম্ভব হবে। প্রতিটি জাহাজে থাকবেন ৫৭ জন কর্মী, যার মধ্যে সাতজন কর্মকর্তা।