অন্তঃসত্ত্বা সোনালির বাড়িতে মুখ্যমন্ত্রীর দূত সামিরুল, বাংলাদেশ থেকে দ্রুত ফেরানোর আশ্বাস
দৈনিক স্টেটসম্যান | ১৬ সেপ্টেম্বর ২০২৫
বীরভূমের বাসিন্দা সোনালি খাতুনকে দিল্লি পুলিশ জোর করে বাংলাদেশে পাঠিয়ে দিয়েছে। অন্তঃসত্ত্বা সোনালির চিন্তায় ঘুম উড়েছে পরিবারের সদস্যদের। ঘরের মেয়েকে দেশে ফেরাতে আদালতের দ্বারস্থ হয়েছেন পরিবারের সদস্যরা। এবার বীরভূমের পাইকার গ্রামে গিয়ে সোনালির মা-বাবার সঙ্গে দেখা করলেন পশ্চিমবঙ্গ পরিযায়ী শ্রমিক কল্যাণ পর্ষদের চেয়ারম্যান তথা রাজ্যসভার সাংসদ সামিরুল ইসলাম। পরিবারের সদস্যদের তিনি জানান, রাজ্য সরকার গোটা বিষয়টি দেখছে। শীঘ্রই সমস্যা মিটে যাবে। আরও এক ভুক্তভোগী সুইটি বিবির পরিবারের সঙ্গেও দেখা করেন তিনি। এদিন মুর্শিদাবাদের জেলা প্রশাসন, পুলিশ প্রশাসন ও শ্রম দপ্তরের আধিকারিকদের নিয়ে পরিযায়ী শ্রমিক সংক্রান্ত বিভিন্ন বিষয় নিয়ে একটি বৈঠকও করেন সামিরুল।
সমাজমাধ্যমে সামিরুল লেখেন, ‘…বীরভূমের মুরারইয়ের প্রত্যন্ত গ্রামে গর্ভবতী সোনালি খাতুনের বাবা এবং সুইটি বিবির মায়ের সঙ্গে দেখা করেছি। প্রায় দুই মাস আগে বিজেপির অমানবিক ও বাঙালি বিরোধী রাজনীতির কারণে, ভারতের প্রকৃত নাগরিক হওয়া সত্ত্বেও তাঁদের কন্যাদের অবৈধভাবে বাংলাদেশে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছিল। বহু প্রজন্ম ধরে বীরভূমে বসবাস করা পরিবারগুলোকে এভাবে সন্তানসমেত দেশছাড়া করার মধ্য দিয়ে বিজেপি যে নির্দয়তা দেখিয়েছে, তার নিন্দার কোনও ভাষা নেই।’
রাজ্য সরকার পরিবারদুটির পাশে রয়েছে বলে জানিয়েছেন সামিরুল। সমাজমাধ্যমে তৃণমূলের রাজ্যসভার সাংসদ লিখেছেন, ‘এই দুঃস্থ পরিবারগুলি কলকাতা হাইকোর্ট এবং ভারতের সুপ্রিম কোর্টে এই অন্যায়ের বিরুদ্ধে লড়াই করছে। পশ্চিমবঙ্গের মাননীয় মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে আমরা এই লড়াইয়ে তাঁদের পাশে আছি।…আমরা তাঁদের মেয়েদের ঘরে ফিরিয়ে আনব এবং ফিরে এলে তাঁরা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় চালু করা শ্রমশ্রী প্রকল্পে অন্তর্ভুক্ত হবে। বিজেপিকে অবশ্যই এই বেআইনি ও নিষ্ঠুর কাজের জন্য মানুষের আদালতে এবং আইনের আদালতে জবাবদিহি করতে হবে। বাংলা বিরোধিতার বিরুদ্ধে আমাদের এই লড়াই জারি থাকবে।’
উল্লেখ্য, গত ২৪ জুন দিল্লি থেকে অন্তঃসত্ত্বা সোনালি সহ তাঁর স্বামী এবং সাত বছরের ছেলেকে আটক করে দিল্লি পুলিশ। তাঁরা নাগরিকত্বে যাবতীয় প্রমাণ দেখালেও পুলিশ তাতে কান দেয়নি। মাত্র দু’দিনের মধ্যে তাঁদের বাংলাদেশে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। এরপর আদালতের দ্বারস্থ হয় সোনালির পরিবার। আদালত কেন্দ্রের কাছে জবাব তলব করেছে। আগামী ২২ সেপ্টেম্বর মামলার শুনানির দিন নির্ধারিত হয়েছে। প্রসঙ্গত, গত কয়েক মাস ধরেই বিজেপিশাসিত রাজ্যে বাংলার পরিযায়ী শ্রমিকদের হেনস্থা করা হচ্ছে। তৃণমূলের অভিযোগ, নিরীহ ভারতীয় নাগরিকদের বাংলাদেশে পাঠিয়ে দেওয়া হচ্ছে।
এদিকে সোনালির পরিবার দাবি করেছে, তাঁরা বীরভূমের স্থায়ী বাসিন্দা এবং প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে সেখানে বসবাস করছে। গত সাত বছরের বেশি সময় ধরে সোনালি দিল্লিতে পরিযায়ী শ্রমিকের কাজ করছিলেন। গোটা ঘটনায় বীরভূমেও ব্যাপক চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে। স্থানীয় মানুষ থেকে শুরু করে বিভিন্ন মানবাধিকার সংগঠনও সোনালির পরিবারের পাশে দাঁড়িয়েছে। তারা দাবি তুলেছে, দ্রুত সোনালি ও তাঁর সন্তানদের ফিরিয়ে আনতে হবে।