‘ভিশন ২০৪৭’, ভবিষ্যতের যুদ্ধ জয়ে কতটা তৈরি সেনা? সেনা প্রধানদের সঙ্গে বৈঠক মোদির
প্রতিদিন | ১৬ সেপ্টেম্বর ২০২৫
সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: কলকাতা থেকে বিহারের উদ্দেশে রওনা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। যাওয়ার আগে ফোর্ট উইলিয়ামে তিনদিন ব্যাপী সেনা সম্মেলনে অংশ নেন তিনি। উত্তরপূর্বের সীমান্ত নিরাপত্তা নিয়ে সেনা কর্তাদের সঙ্গে বৈঠকও করেন প্রধানমন্ত্রী। জানা যাচ্ছে, ভারতীয় উপমহাদেশে বদলাতে থাকা ভূ-রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে তিন বাহিনীর মধ্যে সমন্বয় বৃদ্ধি এবং পরিকাঠামোর আধুনিকীকরণ নিয়ে আলোচনা হয়েছে। এই সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে ছিলেন প্রতিরক্ষা মন্ত্রী রাজনাথ সিং ও জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত ডোভাল। এছাড়াও বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন প্রতিরক্ষা সচিব রাজেশ কুমার সিং, সেনা সর্বাধিনায়ক (চিফ অফ ডিফেন্স স্টাফ) জেনারেল অনিল চৌহান-সহ বাহিনীর তিন প্রধান।
সাম্প্রতিক সময়ে ভারতের প্রতিবেশী রাষ্ট্রগুলিতে রাজনৈতিক অস্থিরতা চরমে পৌঁছেছে। একের পর এক গণভ্যুত্থানে পালা বদল ঘটেছে শ্রীলঙ্কা, বাংলাদেশ এবং নেপালে। দেশের পশ্চিম সীমান্তে প্রতিনিয়ত সন্ত্রাসবাদকে মদত দিচ্ছে পাকিস্তান। অন্যদিকে পূর্ব সীমান্তে বাংলাদেশে এবং উত্তর সীমান্তে নেপালের ছাত্র আন্দোলনের অভিঘাত দেখা গিয়েছে ভারতের রাজনীতিতে। এই পরিস্থিতে দুই দেশের নির্বাচনের আগে কিছুটা উদ্বিগ্ন ভারত। এর পাশাপাশি শুল্কযুদ্ধের প্রভাবে আমেরিকার সঙ্গে সম্পর্ক তলানিতে ঠেকেছে। সেই সময়েই চিনের সঙ্গে বেড়েছে বন্ধুত্ব। তিয়ানজিনে ভারত-রাশিয়া-চিনের একমঞ্চে ছবি চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে আন্তর্জাতিক মহলে। এই আবহে যে প্রসঙ্গ গুরুত্ব পাচ্ছে তা হল সীমান্তে কতটা প্রস্তুত সেনা।
সেনাবাহিনীতে সাম্প্রতিক অতীতে বিভিন্ন বিতর্কের সৃষ্টি হয়েছে। অগ্নিবীর থেকে শুরু করে যুদ্ধ বিমান দুর্ঘটনা এরকম বহু বিতর্ক সেনাবাহিনীর অন্দরে প্রশ্ন তুলেছে। মিগ যুদ্ধবিমান অবসর নেওয়ার পরে ভারতের বিমানবাহিনীতে তৈরি হওয়া ফাক পূরণ করবে কে? হ্যালের তেজস নাকি ফরাসি রাফাল? এরকম প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে দেশের রাজনৈতিক মহলে। ভবিষ্যতের যুদ্ধক্ষেত্র শুধু অস্ত্র নয় এর সঙ্গে জড়িয়ে থাকবে বিদেশ নীতিও। তাই দক্ষিণ চিন সাগর বা ভারত মহাসাগরে চিনের প্রভাব বিস্তার স্বাভাবিকভাবেই সাউথ ব্লকের উদ্বেগের কারণ। সম্প্রতি মালদ্বীপ ‘ভারত বিদ্বেষ’ এবাং চিনা কারসাজি ভারতের কপালে চিন্তার ভাঁজ ফেলেছে। মালদ্বীপ থেকে ভারতের সেনাবাহিনীর সরে যাওয়ায় চিনের পথ খানিকটা প্রশস্থ হয়েছে। আশঙ্কা যে অমূলক নয়, তা প্রমাণ করে মালেকে সামরিক সাহায্যের প্রস্তাবও দিয়েছে বেজিং।
এই পরিস্থিতিতে ভবিষ্যতের যুদ্ধক্ষেত্রে ভারতের অবস্থান শক্ত করার জন্য যুদ্ধ বিমান থেকে শুরু করে বিমানবাহী রণতরী, মিসাইল থেকে শুরু করে অন্যান্য অস্ত্র, সব ক্ষেত্রেই আত্মনির্ভর হওয়ার বিষয়ে জোর দিচ্ছে ভারত। বিদেশি অস্ত্রের উপর নির্ভরতা ১৯৭১ এবং১৯৬২-র যুদ্ধে চাপে ফেলেছে ভারতকে। সেখান থেকে শিক্ষা নিয়ে সাম্প্রতিক অতীতে ভারত দেশে তৈরি তেজস, ব্রাহ্মস-সহ অন্যান্য অস্ত্রের উপর জোর দেওয়া শুরু করেছে। ২০৪৭ সালেই দেশের স্বাধীনতার ১০০ বছর। কলকাতার এই বৈঠক থেকে ভবিষ্যতের যুদ্ধের জন্য প্রস্তুতি নিতে ‘ভিশন ২০৪৭’-এর প্রস্তুতির কথা বলেছেন প্রধানমন্ত্রী। আর সেই লক্ষ্যেই ২০২৫-কে প্রতিরক্ষা ক্ষেত্রে পরিবর্তনের বছর হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে।
উল্লেখ্য, এপ্রিল মাসে পহেলগাঁওয়ে সন্ত্রাসবাদী হামলায় প্রাণ হারিয়েছেন ২৬ জন। সেই হামলার উত্তরে সেনাবাহিনী পাকিস্তানের অভ্যন্তরে ঢুকে সন্ত্রাসবাদের কোমর ভেঙে দিয়েছে। এদিনের বৈঠকে অপারেশন সিঁদুরের প্রসংসা করেন প্রধানমন্ত্রী। সিঁদুরের পরে তৈরি হওয়া নতুন পরিস্থিতিতে সেনাবাহিনীর যুদ্ধপ্রস্তুতি, নতুন প্রযুক্তি এবং নতুন সমর কৌশলের বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীকে জানানো হয়। সব মিলিয়ে, বিশ্ব কূটনীতির অস্থির সমিকরণে কত দ্রুততার সঙ্গে ভারতীয় ফৌজ নিজেকে খাপ খাইয়ে নিতে পারে এবং পরিস্থিতি বুঝে ‘মাল্টি ফ্রন্ট’ সংঘাতে প্রতিপক্ষকে ধরাশায়ী করতে পারে সেই রূপরেখাই এদিন নির্ণয় করা হয়।