ভূমিধস উত্তরের লাচুং-লাচেনে, নিরাপদ দক্ষিণ ও পশ্চিম সিকিমে বুকিংয়ের আর্জি পর্যটন ব্যবসায়ীদের
প্রতিদিন | ১৬ সেপ্টেম্বর ২০২৫
বিশ্বজ্যোতি ভট্টাচার্য, শিলিগুড়ি: পুজোর ছুটিতে সাধ থাকলেও এবার পর্যটকদের ঘুরে দেখার সুযোগ না-ও মিলতে পারে উত্তর সিকিমের লাচুং, লাচেন অথবা গুরুদংমার হ্রদ। কয়েক দিনের ভারী বর্ষণের জেরে ভূমিধসে বিপর্যস্ত হয়েছে সেখানকার যোগাযোগ ব্যবস্থা। বৃষ্টি কমবে এখনও তেমন লক্ষণ মেলেনি। এমন অনিশ্চিত পরিস্থিতিতে পর্যটকদের নিরাপত্তার প্রয়োজনে উত্তরের পরিবর্তে দক্ষিণ ও পশ্চিম সিকিমের বুকিংয়ের আর্জি রাখছেন পর্যটন ব্যবসায়ীরা।
খারাপ আবহাওয়ার কারণে ১০ নম্বর জাতীয় সড়কে ধস নামার আশঙ্কাও থাকছে। সেই পথ এড়াতে পর্যটন ব্যবসায়ীরা চারটি বিকল্প রুট ঠিক করেছেন। পর্যটন ব্যবসায়ীদের পরামর্শ মেনে উত্তর সিকিম ভ্রমণের সূচি পালটে নেওয়া ও বুকিং বাতিলের হিড়িক পড়েছে। আবার অনেকেই যাচ্ছেন ভুটান অথবা ডুয়ার্সে। হাতে গোনা কয়েকদিন পরই পুজো। এরই মধ্যে রাত-দিন অবিরাম বৃষ্টিপাতের জেরে ভূমিধসের বিপর্যয় চলছেই সিকিম জুড়ে। ইতিমধ্যে উত্তর সিকিমের বাকি অংশের সঙ্গে আপার জঙ্গু যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়েছে। সেখানকার ফিদাং সেতু এবং রিং খোলার কাছে গুরুত্বপূর্ণ ফিদাং-সংকলং সড়ক মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। পাহাড়ের ঢালের পুরো অংশ ধসে পড়েছে। ভারী বৃষ্টিপাত অব্যাহত থাকায় নতুন করে ভূমিধসের আশঙ্কায় আরও কয়েকটি রাস্তা বন্ধ রয়েছে।
দিন কয়েক আগে সিকিমে ভূমিধসে চারজনের মৃত্যু হয়। শনিবার রাতে গিয়ালশিং জেলার লামা গাঁও ওয়ার্ডের আপার সারডংয়ে ভূমিধসে পঞ্চায়েত প্রধানের মৃত্যু হয়েছে। ভূমিধসে অবরুদ্ধ হয়েছে উত্তর সিকিমের ডিকচু বাজারের কাছে রাকডুং-টিনটেক হয়ে মঙ্গন থেকে গ্যাংটক পর্যন্ত রাস্তা। ফোডং হয়ে মঙ্গন থেকে গ্যাংটক পর্যন্ত রাস্তায় শুধুমাত্র হালকা যানবাহন চলছে। সেটাও ঝুঁকি নিয়ে। লাচুং নাগা হয়ে মঙ্গন-চুংথাং নতুন রাস্তাটি একাধিক যায়গায় অবরুদ্ধ। ফিডাং-সংকলং হয়ে মঙ্গন থেকে চুংথাং পর্যন্ত রাস্তাটিও বন্ধ। মঙ্গন থেকে চুংথাং হয়ে সংকলং-শিপগায়ার রোড খোলা থাকলেও সময় মেপে যানবাহন চলাচল করতে দেওয়া হচ্ছে। চুংথাং থেকে লাচেন পর্যন্ত রাস্তা অবরুদ্ধ হয়েছে। সিকিম রাজ্য দুর্যোগ মোকাবিলা দপ্তরের তরফে বিপদ এড়াতে ভূমিধসের সতর্কতা জারি করা হয়েছে। বলা হয়েছে জরুরি প্রয়োজন ছাড়া ভূমিধসপ্রবণ অঞ্চল দিয়ে ভ্রমণ এড়িয়ে চলতে। ঝুঁকিপূর্ণ রাস্তা, সেতু দিয়ে যাতায়াত না করতে।
রাজ্য ইকো ট্যুরিজম কমিটির চেয়ারম্যান রাজ বসু বলেন, “ওই পরিস্থিতিতে রাজ্যের পর্যটকরা উত্তর সিকিমে বেড়াতে গেলে বিপদের মুখে পড়তে পারেন। ওই কারণে ট্যুর অপারেটরদের দক্ষিণ ও পশ্চিম সিকিম ভ্রমণের বুকিং নিতে বলা হয়েছে। সেটা শুরু হয়েছে। পর্যটকরা পরিস্থিতি বেগতিক বুঝে উত্তর সিকিমের ভ্রমণ সূচি বাতিল করেছেন।” তিনি জানান, দক্ষিণ ও পশ্চিম সিকিমে নামচি, রাভাংলা, ইয়াংইয়ং, সোরেং, পেলিংয়ের মতো ৩০টি দর্শনীয় জায়গা রয়েছে। পর্যটকদের দক্ষিণ ও পশ্চিম সিকিমে নিয়ে যেতে ভূমিধস প্রবণ ১০ নম্বর জাতীয় সড়কের উপরে ভরসা না রেখে বিকল্প চারটি রাস্তা বের করা হয়েছে। রাস্তাগুলি হল শিলিগুড়ি থেকে মিরিক, দার্জিলিং, সিমলাবাড়ি হয়ে সিকিমের জোরথাং। শিলিগুড়ি থেকে রোহিণী, ঘুম, পেশক হয়ে তিস্তাবাজার সেখান থেকে সিকিম। শিলিগুড়ি থেকে ৭১৭-এ লুপ রোড ধরে লোলেগাও, পেডং হয়ে রংপো। শিলিগুড়ি থেকে ঘুম, সিমলা বাজার হয়ে জোরথাং। ট্যুর অপারেটররা জানান, এই রুটে যাতায়াতের সময় পর্যটকরা দার্জিলিং, মিরিক, ঘুম, লোলেগাও বাড়তি পেয়ে যাবেন। তবে উত্তর সিকিমের ভ্রমণ সূচি পালটে প্রত্যেকে যে দক্ষিণ ও পশ্চিম সিকিমে যেতে চাইছেন তেমন নয়। অনেকেই ভুটান ও ডুয়ার্সে বুকিং করছেন। লাটাগুড়ি রিসর্ট অ্যাসোসিয়েশনের সম্পাদক দীব্যেন্দু দে বলেন, “অনেকেই যোগাযোগ করছেন। বুকিং চলছে।”