• রাজপথে গবাদি পশুদের ঘোরাফেরা ঠেকাতে সতর্ক নজর ‘প্রাণীমিত্র’দের
    আনন্দবাজার | ১৫ সেপ্টেম্বর ২০২৫
  • রাস্তায় ঘুরে বেড়ানো গবাদি পশুদের নিরাপদ জায়গায় ফেরানোর জন্য ব্যারাকপুরের গুরুত্বপূর্ণ রাস্তাগুলিতে নজরদারির দায়িত্ব দেওয়া হল ‘প্রাণীমিত্র’দের। মূলত কল্যাণী এক্সপ্রেসওয়ে, বেলঘরিয়া এক্সপ্রেসওয়ের মতো দ্রুত গতিতে গাড়ি যাওয়ার রাস্তাগুলিতে তো বটেই, বিটি রোড, ঘোষপাড়া রোডের মতো যানবহুল পথেও গরু, মোষ বা অন্য প্রাণীদের অবাধ বিচরণ আটকাতে এ বার সচেষ্ট হয়েছে প্রশাসন। সাম্প্রতিক বেশ কয়েকটি পথ দুর্ঘটনাই এর কারণ বলে জানিয়েছেন ব্যারাকপুর পুলিশ কমিশনারেটের আধিকারিকেরা। ইতিমধ্যে তিনটি এমন দুর্ঘটনায় মৃত্যু হয়েছে এক মোটরবাইক আরোহী এবং একটি গরুর। জখমের সংখ্যা একাধিক।

    ব্যারাকপুর পুলিশ কমিশনারেটে কর্মরত সিভিক ভলান্টিয়ারদের পাশাপাশি প্রাণিসম্পদ উন্নয়ন বিভাগের অধীনস্থ মোট ২৮ জন ‘প্রাণীমিত্র’কে পথে বসে থাকা গবাদি পশুদের উপরে নজর রাখা এবং তাদের নিরাপদ আশ্রয়ে নিয়ে যাওয়ার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।

    ব্যারাকপুরের পুলিশ কমিশনার মুরলীধর শর্মা বলেন, ‘‘আমরা মাইকে প্রচার শুরু করেছি, লিফলেট বিলি করা হচ্ছে। রাস্তায় যাতে গবাদি পশু চলে না আসে, তার জন্য এলাকাভিত্তিক সভা করেও স্থানীয়দের বলছি। ‘প্রাণীমিত্র’রা কাজ শুরু করায় প্রায়ই ঘটতে থাকা দুর্ঘটনা কমানো গিয়েছে।’’ পথে চলে আসা এই গবাদি পশুদের গলায় ‘রিফ্লেক্টর কলার’ পরানোর পরিকল্পনাও নেওয়া হয়েছে বলে জানা গিয়েছে।

    ব্যারাকপুরের কল্যাণী এক্সপ্রেসওয়ে এবং বেলঘরিয়া এক্সপ্রেসওয়ের একটি বড় অংশ রাতে অন্ধকার থাকে। কল্যাণী এক্সপ্রেসওয়ের বুলেভার্ডে প্রচুর ঘাস ও গাছ থাকায় মূলত খাবারের খোঁজে দাবিহীন কিছু গরু, মোষ ছাড়াও রাস্তার ধারের খাটাল থেকে এবং গৃহপালিত গবাদি পশুও ঘুরতে ঘুরতে মূল সড়কের মাঝে থাকা ওই বুলেভার্ডে চলে আসে।

    সার্ভিস রোড ও একাধিক উড়ালপুলের জন্য এক্সপ্রেসওয়ের দু’দিকের লেনের দীর্ঘ অংশ রেলিং দিয়ে ঘেরা। এক বার ঢুকে পড়লে আর বেরোনোর পথ খুঁজে পায় নাএই চারপেয়েরা। কখনও উড়ালপুলের উপরে, কখনও পথের ধারেবসে থাকে।

    মাসখানেক আগেই মোহনপুর থানা ছাড়িয়ে ইছাপুর খালের কাছে মোটরবাইক নিয়ে যাওয়ার সময়ে রাস্তার ধারে বসে থাকা একটি মোষের গায়ে উঠে পড়েছিলেন শ্যামনগরের বাবাই দাস। সদ্য হাসপাতাল থেকে ছাড়া পেলেও ভাঙা হাত ও পায়ের চোট এখনও সারেনি। ভেঙেছিল বুকের পাঁজরও। বাবাইয়ের কথায়, ‘‘‘দিনের বেলা যদিও বা খেয়াল করা যায়, রাতে মিশকালো মোষকে বৃষ্টিভেজা পিচ রাস্তায় বোঝা যায়নি।’’

    কাঁকিনাড়া কেউটিয়ার আনন্দ চক্রবর্তী বলেন, ‘‘সারা দিন কি গবাদি পশুদের বেঁধে রাখা যায়? আমার একটি বাছুর চরতে গিয়ে আর ফেরেনি। পরের দিনও খুঁজে পাইনি। শেষে পুলিশ খোঁজখবর করে জানাল, প্রায় তিন কিলোমিটার দূরে রাস্তার ধারে গাড়ির ধাক্কায় জখম হয়ে পড়ে থেকে মারা গিয়েছে।’’

    ব্লক প্রাণিসম্পদ উন্নয়ন আধিকারিক হেমন্তকুমার দাস বলেন, ‘‘পথের মাঝে চলে আসা গবাদি পশুদের অধিকাংশেরই স্থায়ী ঠিকানা আছে। কিন্তু যাঁরা প্রতিপালন করছেন ওই পশুদের, তাঁদের একাংশের অবহেলা ও কিছু ক্ষেত্রে অসাধু মনোবৃত্তির জন্যই বার বার দুর্ঘটনা ঘটছিল। অনেকে ইচ্ছাকৃত ভাবে গবাদি পশুদের ছেড়ে দিচ্ছিলেন। তাঁদের খুঁজে বার করছেন ‘প্রাণীমিত্র’রা, সচেতনও করা হচ্ছে।’’
  • Link to this news (আনন্দবাজার)